ঢাকা হতে জলপাইগুড়িগামী ‘সম্প্রীতি’ ট্রেনে স্টপেজের দাবিতে সৈয়দপুরে মানব বন্ধন

আপডেট: মার্চ ১৪, ২০২১
0

শাহজাহান আলী মনন, সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধিঃ
ঢাকা থেকে ভারতে জলপাইগুড়ি রুটে চলাচলের জন্য তৈরীকৃত সম্প্রীতি এক্সপ্রেস ট্রেনে স্টপেজের দাবিতে সৈয়দপুরে মানব বন্ধন কর্মসূচী পালন করা হয়েছে।

১৪ মার্চ রবিবার সকাল ১০ টা থেকে সাড়ে ১২ টা পর্যন্ত শহরের শহীদ ডাঃ জিকরুল হক সড়কে প্রেসক্লাবের সামনে এ কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হয়। ‘আমরা সৈয়দপুরবাসী’র আয়োজনে এতে অংশগ্রহণ করে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, সামাজিক রাজনৈতিক ও সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ এবং সৈয়দপুরের আপামর জনসাধারন।

মানববন্ধনকালে দাবির সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে বক্তব্য রাখেন, নীলফামারী চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক ও বিএনপি নেতা মতিয়ার রহমান দুলু, সৈয়দপুর উপজেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক ও ইকু গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলহাজ্ব সিদ্দিকুল আলম, ওয়ার্কাস পার্টির উপজেলা সভাপতি কমরেড রুহুল আলম মাস্টার, জাসদ সৈয়দপুর উপজেলা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান, দৈনিক প্রথম আলোর সৈয়দপুর প্রতিনিধি ও প্রজন্ম ৭১’র সদস্য এম আর আলম ঝন্টু, কামারপুকুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা রইচ উদ্দিন জোতদার মতি, সদ্য বিগত পৌর নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী সমাজ সেবক ও ব্যান্ড সঙ্গীত শিল্পী রবিউল আউয়াল রবি, সৈয়দপুর সিটি বাস্তবায়ন কমিটির আহবায়ক ও নাট্যকার তামিম হোসেন, নিরাপদ সড়ক চাই সৈয়দপুর শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির, সাপ্তাহিক মানব সমস্যা পত্রিকার বার্তা সম্পাদক সাহবাজ উদ্দিন সবুজ, স্বেচ্ছাসেবী নওশাদ আনসারী, পাখি আলমগীর, কাকন প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, নীলফামারীর চিলাহাটি স্টেশন থেকে ভারতের হলদীবাড়ি স্টেশন পর্যন্ত রেলপথ রুটটি ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের পর থেকে বন্ধ ছিল। সৈয়দপুরের ব্যবসায়ীদের উদ্যোগে বাংলাদেশ সরকার দীর্ঘদিন পর এই রুট চালু করে এবং আগামী ২৬ মার্চ থেকে যাত্রীবাহি ট্রেন চলাচলের জন্য ‘সম্প্রীতি এক্সপ্রেস’ নামে একটি ট্রেন নির্ধারণ করেছে। এই ট্রেনে দেশের সর্ববৃহৎ রেলওয়ে কারখানা সমৃদ্ধ রেলওয়ে শহর খ্যাত সৈয়দপুরে কোন স্টপেজ রাখা হয়নি। আমাদের প্রচেষ্টায় ৫৫ বছরের বন্ধ রুটে ট্রেন চলাচল করবে অথচ আমরাই সে ট্রেনে চড়ে ভারতে দার্জিলিং যাওয়ার সুযোগ পাবোনা তা মেনে নেয়া যায়না। এটা আমাদের প্রতি চরম বৈষম্য বলেই মনে করি আমরা।

অথচ সৈয়দপুরে রয়েছে বিশাল বিমানবন্দর। যা আন্তর্জাতিক করার কার্যক্রম চলমান। ব্যবসা বানিজ্যের জন্য রংপুর বিভাগ তথা উত্তরাঞ্চলের মধ্যে প্রসিদ্ধ এ শহর দেশের অষ্টম বানিজ্য শহর হওয়ায় এখানকার ব্যবসায়ীরা আমদানী-রপতানী বানিজ্যের সাথে জড়িত। একারনে ভারতের সাথে তাদের ব্যাপক ব্যবসা সম্পৃক্ততা রয়েছে। এর ফলে প্রতিনিয়তই এই ব্যবসায়ীদের ভারতে যাতায়াত করতে হয়। এছাড়া ব্রিটিশ আমলে সৈয়দপুর তথা রংপুর ও ভারতে জলপাইগুড়ি তথা পশ্চিমবঙ্গের এ অঞ্চলটি একই এলাকাভুক্ত থাকায় আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে উভয় এলাকার মানুষের মাঝে। দেশ বিভাগের পর কেউ কেউ এদেশে আসলেও অনেকের স্থায়ী আবাস এখনও সেখানেই বিদ্যমান। একারণেও এ অঞ্চলের অসংখ্য মানুষ প্রায়ই ভারতে যাতায়াত করেন। চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রুট বন্ধ হওয়ার আগে তারা এপথেই চলাচল করতেন। এখন তারা হিলি স্থল বন্ধর বা বেনাপল বন্দর ব্যবহার করেন।

এমতাবস্থায় সৈয়দপুরের গুরুত্ব অনেক। সে গুরুত্ব অনুধাবন করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ রুটটি চালুর উদ্যোগ নিয়েছেন। তাই এ রুটে চলাচলকারী ট্রেনের সুযোগ সুবিধা প্রাপ্তি সৈয়দপুরবাসীর একান্ত অধিকার। এ অধিকারকে খর্ব করে জানিনা কেন কি উদ্দেশ্যে সৈয়দপুরের মানুষকে বঞ্চিত করার মত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। যে কারনেই হোক এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ব্রিটিশ আমলের এ সিটি শহরের অত্যাধুনিক রেলওয়ে ষ্টেশনে অবশ্যই বিরতি দিতে হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় সকল ধরণের পদক্ষেপ নেয়ার জন্য রেলপথ মন্ত্রীসহ রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানিয়েছেন তারা। আগামী ২০ মার্চের মধ্যে এ দাবি বাস্তবায়ন করা না হলে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি গোচর করতে প্রয়োজনীয় সকল উদ্যোগ গ্রহণ করবে সৈয়দপুরবাসী। তাতেও কাজ না হলে সম্প্রীতি এক্সপ্রেস উদ্বোধনের দিন সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনে রেললাইনে শুয়ে অবরোধ কর্মসূচীর ডাক দেয়া হবে।

অনেকে বলেন, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক হানাদার বাহিনী সৈয়দপুরের নিরিহ হিন্দু ও মাড়োয়ারী জনগোষ্ঠির ৪৪৮ জন যাত্রীকে নিয়ে একটি ট্রেন যোগে ভারতে পৌছে দেয়ার কথা বলে সৈয়দপুর স্টেশন থেকে মাত্র ১ কিলোমিটার দূরে গিয়ে গোলাহাট নামক স্থানে থামিয়ে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে সকলকে শহীদ করা হয়। এ নির্মম ইতিহাসের মর্মান্তিক স্মৃতিবহ এ রুটে দীর্ঘদিন পর চলাচলকারী ট্রেনে সৈয়দপুরবাসীকে সুযোগ না দেয়া সত্যই দুঃখজনক। আমরা আশা করি বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়টি অনুধাবন করে সৈয়দপুরবাসীর দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ পূর্বক এখানে ইমিগ্রেশনের ব্যবস্থা করে বিরতি দিয়ে উত্তরাঞ্চলের রংপুুর, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম জেলার ভারত ভ্রমনে আগ্রহী সাধারণ জনগণ ও ব্যবসায়ীদের যাতায়াত সুগোম করতে সার্বিক পদক্ষেপ নিবেন। তারা এজন্য সৈয়দপুরের সরকার দলীয় নেতৃবৃন্দসহ রেলওয়ের কর্তৃপক্ষকে সুবিবেচনা করারও দাবি জানান।

মানব বন্ধনে শহীদ কুদরত স্মৃতি সংসদ, সৈয়দপুর থিম পার্ক, হ্যালো সৈয়দপুর ফেসবুক গ্র“প, সৈয়দপুর অনলাইন ভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী কাউন্সলি, ধলাগাছ সমাজ কল্যান সংঘসহ বিভিন্ন সংগঠন ও রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী এবং সৈয়দপুর প্রেসক্লাব, রিপোর্টার্স ইউনিটি, রিপোর্টার্স ক্লাব, বাংলাদেশ প্রেসক্লাব’র সংবাদকর্মীবৃন্দসহ সর্বস্তরের সৈয়দপুরবাসী অংশগ্রহণ করেন।