তারেক-জোবায়দা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের সময় আদালতে হট্টগোল, বিএনপিপন্থী ৩ আইনজীবী আহত

আপডেট: মে ৩০, ২০২৩
0

জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমানের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণের সময় আদালতের এজলাস কক্ষে আইনজীবীদের মধ্যে হট্টগোল হয়েছে। হট্টগোলের একপর্যায়ে আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীরা বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের ধাওয়া করে এজলাস থেকে বের করে দেন। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন বিএনপি সমর্থক আইনজীবী আহত হয়েছেন বলে আইনজীবীরা জানিয়েছেন।

মঙ্গলবার ঢাকার সিনিয়র স্পেশাল জজ মো: আছাদুজ্জামানের আদালতে দুপুর ২টার পর এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের সময় আওয়ামী লীগ ও বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের হট্টগোল শুরু হয়। এ সময় বিচারক এজলাস ছেড়ে চলে যান।

ঘটনা সম্পর্কে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম ঢাকা বার ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, সোমবার আমরা আদালতের বিচারককে অনুরোধ করেছিলাম এ মামলায় প্রতিদিন সাক্ষ্যগ্রহণ করা হলে বিষয়টি নিয়ে মানুষের মধ্যে বিরূপ ধারণা সৃষ্টি হবে। তিনি বলেছিলেন, মঙ্গলবার আমাদের বক্তব্য শুনবেন। আজ মঙ্গলবার দুপুর ২টায় আমরা আদালতে এসে এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিপি, দুদকের আইনজীবী এবং আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীরা আদালতের মধ্যেই আমাদের ওপর অতর্কিত আক্রমণ করে। তিনি অভিযোগ করেন, তাদের আক্রমণে প্রায় অর্ধশত আইনজীবী আগত হন। এ সময় তিনজন নারী আইনজীবীকে শ্লীলতাহানি করা হয় বলেও তিনি অভিযোগ করেন।

তিনি জানান, সরকার সমর্থক আইনজীবীদের হামলায় গুরুতর আহত আইনজীবী আবদুল খালেক মিলন, জহিরুল ইসলাম মুকুল ও আনোয়ার হোসেনকে কাকরাইল ইসলামী ব্যাংক হাসপালে ভর্তি করা হয়েছে।

জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম ঢাকা বার উনিটের আহ্বায়ক মাসুদ আহমেদ তালুকদার অভিযোগ করেন, পিপি, আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীদের আক্রমণে আইনজীবী আবদুল খালেক মিলন, জহিরুল ইসলাম মুকুলসহ প্রায় অর্ধশত বিএনপি সমর্থক আইনজীবী আহত হয়েছেন।

অন্যদিকে দিকে দুদকের পিপি মোশাররফ হোসেন কাজল অভিযোগ করেছেন, তারা আদালতে বিশৃঙ্খলা করেছেন। আদালত দখল করতে গেছেন। এজলাসে হট্টগোল করেছেন। আমি আমার স্থানেই বসে ছিলাম। আইনজীবী আহত হওয়ার বিষয়ে কিছু জানি না। মঙ্গলবার দুজন সাক্ষীর সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে। আগামীকাল বুধবার আবার সাক্ষ্যগ্রহণ করা হবে।

এদিকে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে বিচারক এজলাসে উঠে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করেন। এদিন সাক্ষ্য দিতে এমতিন অ্যান্ড কোম্পনির চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টিং এ কে আব্দুল মতিন আদালতে উপস্থিত হন। এছাড়া মোট দুইজন সাক্ষীর সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে। বুধবার আবারো সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন রাখা হয়েছে।

আইনজীবী জানান, সাক্ষ্যগ্রহণের সময় এজলাসের ভেতরে ছবি তোলাকে কেন্দ্র করে এ ঘটনার সূত্রপাত হয়। এ সময় আদালতের বাইরে অতিরিক্ত পুলিশের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। এদিকে আদালতের বাইরে অবস্থান নিয়ে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীরা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।

একপর্যায়ে বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা ঢাকা বার ভবনের সামনে এসে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন।

এর আগে গত ২৯ মে তাদের বিরুদ্ধে তিন ব্যাংক কর্মকর্তা সাক্ষ্য দেন। তিন ব্যাংক কর্মকর্তা হলেন- এস এম মুসা করিম, ওবায়দুর রশিদ খান ও ইমরান আহমেদ। তারা সবাই এবি ব্যাংকের কর্মকর্তা।

এ নিয়ে এ মামলায় মোট ৫৬ জন সাক্ষীর মধ্যে ছয়জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে বলে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল জানিয়েছেন।

এর আগে গত ২৫ মে এ মামলায় সাক্ষ্য দেন- জব্দ তালিকার সাক্ষী এমরান আলী শিকদার ও সৈয়দ আজাদ ইকবাল। তারা ঘটনার সময় দৈনিক দিনকালে চাকরি করতেন।

গত ২১ মে মামলার বাদি দুদকের উপ-পরিচালক জহিরুল হুদা সাক্ষ্য দেন।

গত ১৩ এপ্রিল তাদের বিরুদ্ধে চার্জগঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন একই আদালত। সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ১৬ মে দিন ধার্য করা হয়। এছাড়া তাদের পক্ষে নিজ খরচে দুজন আইনজীবী নিয়োগের আবেদন নামঞ্জুর করেন আদালত।

এ মামলায় গত ৫ জানুয়ারি পালাতক তারেক রহমান ও জোবায়দা রহমানের সম্পদ ক্রোকের আদেশ দিয়েছিলেন। ২০২২ সালের ১ নভেম্বর তারেক রহমান ও জোবায়দার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিলেন আদালত।

আইনজীবীরা জানান, সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর তারেক রহমান, জোবায়দা রহমান ও তার মা সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানুর বিরুদ্ধে রাজধানীর কাফরুল থানায় মামলা করে দুদক। পরের বছর তিনজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।