তিস্তার ভাঙ্গনে বিলিন হচ্ছে বজরা জামে মসজিদসহ শত শত বসতবাড়ি ও স্থাপনা

আপডেট: জুন ২, ২০২১
0

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি :
বৃষ্টির পানি এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তীব্র ভাঙনের কবলে পড়েছে কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বজরা ইউনিয়নের পশ্চিম বজরা এলাকার পুরাতন বজরা গ্রামের একমাত্র জামে মসজিদটি। এছাড়াও শত শত বসত ভিটা ও বিভিন্ন ধরনের স্হাপনা।একমাত্র মসজিদটি ভেঙে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এলাকাবাসী।
মঙ্গলবার (১ জুন) রাত পর্যন্ত মসজিটির এক-তৃতীয়াংশ ভেঙে গেলেও বুধবার (২ জুন) সকালে তীব্র ভাঙনের মুখে অবশিষ্ট অংশটুকু স্থানীয়রা সরিয়ে নিলে মসজিদটির ভিত্তি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়।

জানা গেছে, তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে উলিপুর উপজেলার বজরা ইউনিয়নের পশ্চিম বজরা এলাকার নদী তীরবর্তী প্রায় ৬০-৬৫টি পরিবার ভাঙনের মুখে পড়ে তাদের বসতবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন। ভাঙন অব্যাহত থাকায় হুমকীর মুখে পড়েছে ওই এলাকার পশ্চিম বজরা দাখিল মাদরাসা, পশ্চিম বজরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পশ্চিম বজরা এলাকার পুরাতন বজরা গ্রামের একমাত্র জামে মসজিদ।

তিস্তার কয়েক দিনের অব্যাহত ভাঙনে পশ্চিম বজরা এলাকার প্রায় ২৫-৩০ বিঘা জমির বাদাম, তোশা পাট, মরিচ ক্ষেত, সবজি ক্ষেত সহ অনান্য ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।ভাঙনের কবলে পড়ে ওই ইউনিয়নের চর বজরা এলাকার কাশিম বাজারগামী রাস্তাটির শেষ প্রান্ত নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এবং অব্যাহত ভাঙনে হরিপুর ইউনিয়ন ভেঙে খামার বজরা এলাকায় পানি প্রবেশ করায় চর বজরা পূর্ব পাড়া গ্রামের পুরো এলাকাটাই ভাঙনের হুমকীর মুখে রয়েছে। ভাঙন অব্যাহত থাকলে নদী গর্ভে বিলীন হতে পারে চর বজরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চর বজরা জামে মসজিদ ও ওই এলাকায় সড়ক ও জনপথ বিভাগ কর্তৃক সাম্প্রতিক নির্মিত পাকা সড়কটিও।
এলাকাবাসী বলছেন পাকা সড়কটি রক্ষার্থে যদি এই মুহুর্তে প্রটেকশনের ব্যবস্থা নেয়া না হয় তাহলে সড়কটি ভেঙে বজরা ইউনিয়ন পরিষদ ভবন নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে এবং খামার বজরা হয়ে পানি যদি পূর্ব বজরা, কালপানি বজরা এবং বজরা পূর্ব পাড়া এলাকায় প্রবেশ করে তাহলে ইউনিয়নের সমস্ত বাড়িঘর, ফসলি জমি, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা সহ পুরো ইউনিয়নটি ভাঙনের হুমকীর মুখে পড়বে। তিস্তার অব্যাহত ভাঙনে এখন পর্যন্ত ইউনিয়নটির প্রায় ১৫টি বাড়ী নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। এবং ভাঙনের হুমকীর মুখে রয়েছে নদী তীরবর্তী শত শত বসতবাড়ি।

স্থানীয়রা জানান, ইউনিয়নের শত শত বসতবাড়ি ভাঙনের হুমকীর মুখে থাকায় তারা আতঙ্কে রয়েছেন তারা নদী তীরবর্তী অনেকেই বাড়িঘর অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন। অনেকের শেষ সম্বলটুকুও নদীগর্ভে বিলীন হওয়ায় তারা রয়েছেন বিপাকে। অসংখ্য ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। এতে করে কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। একদিকে করোনা ভাইরাস আতঙ্ক অন্যদিকে তিস্তার অব্যাহত ভাঙনের মুখে দিশেহারা এ ইউনিয়নের মানুষ। অব্যাহত ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়া হলে হুমকীর মুখে পড়বে পুরো ইউনিয়ন।

বজরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম আমিন জানান, এখন পর্যন্ত ইউনিয়নের পনেরটি বসতবাড়ী নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙনের মুখে রয়েছে নদী তীরবর্তী শত শত বসতবাড়ি, ফসলি জমি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, কবরস্থান সহ ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা সমুহ। ভাঙন রক্ষার্থে দ্রুত প্রটেকশনের ব্যবস্থা না নেয়া হলে পুড়ো ইউনিয়নটাই ভাঙনের হুমকীর মুখে পড়ার অাশঙ্কা রয়েছে। ভাঙনের বিষয়টি উপজেলা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি সহ পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবহিত করা হলেও এখন পর্যন্ত সাড়া পাওয়া যায়নি।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অারিফুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও যোগাযোগ সম্ভব হয়নি।
এবিষয়ে উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নূর-এ-জান্নাত রুমি বলেন, আমি ভাঙনের বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানিয়েছি। তারা অামাকে জানিয়েছেন, দু-তিন দিনের মধ্যে তারা ভাঙন রোধে কাজ শুরু করবেন। এবং ভাঙনের কবলে যেসব পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের তালিকা স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান কর্তৃক আমাকে দেয়া হলে আমি তা উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দেবো।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
####/
আমিনুর রহমান বাবু