দখলদার সরকার জোরপূর্বক ক্ষমতায় থাকতে পাখির মতো বিএনপি নেতাকর্মীদের হত্যা করছে—-রিজভী

আপডেট: আগস্ট ৫, ২০২২
0

আসন্ন দুর্বার গণআন্দোলন আঁচ করতে পেরে অবৈধ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত ভীত হয়ে পড়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।

তিনি বলেন, অঘোষিত দেউলিয়াত্বের মুখে পতিত নিশিরাতের সরকার ফুসে ওঠা জনরোষ থেকে বাঁচতে হিংস্র হয়ে উঠেছে। দ্রব্যমূল্যের চরম ঊর্ধ্বগতি, নজিরবিহীন লোডশেডিং, জ্বালানি সংকট, সীমাহীন লুটপাট ও অর্থপাচারের প্রতিবাদে সারাদেশ যখন প্রতিবাদমুখর, তখন অবৈধ দখলদার সরকার জোরপূর্বক ক্ষমতায় থাকতে বেসামাল হয়ে জনগণের ন্যায়সঙ্গত শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে গুলিবর্ষণ করে পাখির মতো বিএনপি নেতাকর্মীদের হত্যা করছে।

শুক্রবার (৫ জুলাই) বিকেলে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী অভিযোগ করে বলেন, ‘গত ৩১ জুলাই দেশব্যাপী জেলায় জেলায় বিএনপি’র কেন্দ্র ঘোষিত প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশের অংশ হিসেবে ভোলা জেলায় শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচিতে আওয়ামী পুলিশ বেপরোয়াভাবে খুব কাছ থেকে গুলি চালিয়ে হত্যা করেছে দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব আব্দুর রহিমকে। হত্যা করেছে ভোলা জেলা ছাত্রদল সভাপতি নুরে আলমকে। আরও ১৯ জন ঢাকায় ও বরিশালের বিভিন্ন হাসপাতালে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছে। এই হত্যাকাণ্ড সম্পূর্ণ পূর্ব পরিকল্পিত।

বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘সরকার তার পুলিশ বাহিনীকে দিয়ে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ এই প্রতিবাদ মিছিলে গুলি চালিয়ে আবারো প্রমাণ করলো বল প্রয়োগ করে জবরদস্তি করে ফ্যাসিবাদী কায়দায় আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে চায়। আমরা আব্দুর রহিম ও নুরে আলমের রক্ত বৃথা যেতে দেবনা। জনগণের অভ্যুত্থানে এই সরকারের পতন ঘটবে। তারপর জনগণ এই সরকারের কড়ায় গণ্ডায় বিচার করবে। সকল হত্যাকাণ্ডেরই বিচার হবে।

রিজভী বলেন, ‘শেখ হাসিনা ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য গত এক যুগ ধরে র‌্যাব, পুলিশসহ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সিভিল প্রশাসন, আইন আদালত সবকিছু সম্পূর্ণ ছাত্রলীগের প্রশিক্ষিত সন্ত্রাসী ক্যাডারদের দিয়ে সাজিয়েছে। তারাই শেখ হাসিনার শিখন্ডি। বিরোধীদল দমন করতে ছাত্রলীগ নেতাদেরকে পুলিশের পোশাক পরিয়ে মাঠে নামানো হয়েছে। ভোলায় বিএনপির শান্তিপূর্ণ সমাবেশে গুলির নির্দেশদাতা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নেতা। প্রমোশন এবং পুরস্কারের লিপ্সায় এসপি সাইফুল বিএনপির মিছিলে নারকীয় তাণ্ডবের নির্দেশ দেন বলে জানতে পেরেছি। মাঠে নির্দেশ কার্যকর করেছেন পুলিশের ভোলা সদর মডেল থানার ওসি তদন্ত ইন্সপেক্টর আকরাম হোসেন এবং ওসি এনায়েত হোসেন। ইন্সপেক্টর আকরাম হোসেনকে সরাসরি গুলি করতে দেখা গেছে। তার বাড়ী ব্রাক্ষণবাড়িয়ার নবীনগরের কালঘড়ায়। তার মৃত পিতা আব্দুল মতিন কিসলু ছিলেন আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের কিলার ইন্সপেক্টর আকরাম হোসেন এবং ওসি এনায়েত হোসেন জনগণের নিরাপত্তা দানের বদলে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় আওয়ামী নেতাদের আদেশ নির্দেশ প্রতিপালনে ব্যস্ত থাকেন।

গতকাল দেয়া প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করে রিজভী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন,”নির্বাচন সামনে রেখে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় আমাকে ক্ষমতাচ্যুত করার ষড়যন্ত্র জোরদার হচ্ছে। খুনিচক্র আমাকে সরাতে চায়। তারা তৎপর আছে সারাক্ষণই। আমি তাদেরকে চিনি কারা এই তৎপরতা চালাচ্ছেন। আমার অচেনা কেউ নাই।”

তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার এই বক্তব্যটি বিদেশের একটি বাংলা পত্রিকা শিরোনাম করেছে- “চাঞ্চল্যকর অভিযোগ হাসিনার”। আমাদের বক্তব্য-এটি চাঞ্চল্যকর হবে কেন? বরং সংবাদ করুন- কিভাবে গণতন্ত্র ধ্বংস করা হয়েছে, কিভাবে দিনের ভোটে নিশিরাতে সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভর্তি করা হয়েছে, কিভাবে মানুষের কণ্ঠরোধ করা হয়েছে। সংবাদ করুন-বাংলাদেশে সুষ্ঠু কোন রাজনৈতিক পরিবেশ নেই। গণতান্ত্রিক আন্দোলন জনগণ ও বিরোধীদল গুলো ঘোষণা দিয়েই এই অগণতান্ত্রিক ফ্যাসিস্ট রেজিমকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এটিতে চাঞ্চল্যকর কিছু নেই। বরং সংবাদ করুন কিভাবে সেই রাজনৈতিক প্রচেষ্টাকে রাষ্ট্রীয় বাহিনী ব্যবহার করে হামলা মামলা নিপীড়ণ নির্যাতনের মাধ্যমে অগণতান্ত্রিক কায়দায় দমন করছে, কিভাবে নির্বাচনে নানা অপকৌশলের মাধ্যমে জনগণের ভোট ও ম্যান্ডেট ছাড়াই ক্ষমতা আঁকড়ে আছে।

আপনারা জানেন, শেখ হাসিনা ও তার কতিপয় মোসাহেব মন্ত্রীর মুখে এই ধরনের ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত ইত্যাদি কথা শুনতে শুনতে দেশের জনগণের কান ঝালাপালা।

রিজভী বলেন, ‘নির্বাচন ঘনিয়ে আসলে উনার (প্রধানমন্ত্রীর) মুখে এই জাতীয় হাস্যকর নাটুকে কথাবার্তা বেশি বেশি শোনা যায়। কারণ উনি নিজে ষড়যন্ত্র আর নীলনকশায় ডুবে থাকেন কিভাবে রাতে বা দিনে দুপুরে ভোট ডাকাতি করা যায়। শেখ হাসিনা অতীতের মতোই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থেকে ভোটারবিহীন আরেকটি নির্বাচন করার জন্য এসব বাহানা করছেন এটা সবাই বোঝেন। নিশিরাতের ফ্যাসিস্ট এই গণদুশমন সরকারের পতন ঘটানো কোন চক্রান্ত নয়, বরং এটি বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী জনগণের নৈতিক ও ঐতিহাসিক দায়িত্ব। ভোটাধিকার ও জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য দেশের মানুষ নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করছে একটা মহৎ লক্ষ্যকে সামনে রেখে। সুতরাং এই আন্দোলনে যারা শরীক হবেন তারা সত্যের পক্ষে, ন্যায়ের পক্ষে, গণতন্ত্রের পক্ষে। আসন্ন দুর্বার গণআন্দোলন আঁচ করতে পেরে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন শেখ হাসিনা। ফলে নতুন নতুন ষড়যন্ত্র তত্ত্ব আবিষ্কার করছেন।

তিনি আরও বলেন, ‘সত্য কখনো চেপে রাখা যায় না। নিশিরাতের ভোটের ভূয়া এমপিরা এখন নিজেরাই জবানবন্দী দিচ্ছেন। গত ৩১ জুলাই সরকারের গৃহপালিত কথিত বিরোধীদল জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘রাতেই কিন্তু কাজটা হয়, আমরাই করিয়েছি’। নিশিরাতের প্রধানমন্ত্রীর আজ্ঞাবহ প্রধান নির্বাচন কমিশনারও স্বীকার করছেন দিনে ভোট হয় না। রাতের ভোটে ব্যালট বাক্স ভর্তি করা হয়। নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, এবারের ভোট রাতে হবে না, দিনে হবে। সিইসি বলেছেন, ২০১৪ এবং ২০১৮ এর নির্বাচন ছিল অতিমাত্রায় বিতর্কিত। অর্থাৎ আগের রাতে যে ভোট হয়েছিল তা তারাও স্বীকার করেছেন। তারা জোর করে দেশ চালাচ্ছেন। এভাবে শরীকদের মুখ দিয়ে সত্য কথা বের হতে শুরু করেছে, ক’দিন পর নিজেরাই বলবে। নির্বাচন কমিশনের ডাকা সংলাপে অংশ নেওয়া কেউই ইভিএম সমর্থন না করলেও আওয়ামী লীগ ৩০০ আসনে ইভিএম এ নির্বাচন করতে চায়। কারণ প্রথম থেকেই ইভিএমের উদ্দেশ্য হচ্ছে ডিজিটাল ডাকাতি। এটা ভোট ডাকাতির মেশিন। বাংলাদেশের জনগণ এটি বাস্তবায়িত হতে দেবে না।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, আবুল খায়ের ভূইয়া, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফৎ আলী সপু, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, সাত্তার পাটোয়ারী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।