দ্বিতীয় দিনের মতো চলছে কঠোর লকডাউন; জরুরী প্রয়োজন ছাড়া রাস্তায় বের হলেই শাস্তি

আপডেট: জুলাই ২, ২০২১
0

নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশজুড়ে দ্বিতীয় দিনের মতো চলছে কঠোর লকডাউন। বিধি নিষেধ মানানোর জন্য গতকালের মতো আজও রাজধানীসহ সারাদেশে বিপুল সংখ্যক পুলিশ এবং পুলিশের পাশাপাশি সেনা বাহিনী, বিজিবি ও আনসার সদস্য মোতায়েন রয়েছে। বিধি নিষেধ যারা না মানছেন তাদেরকে তাৎক্ষণিক আইনের আওতায় নেয়ার জন্য দায়িত্ব পালন করছেন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট।

এদিকে গতকালের মতো আজও রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে চেকপোষ্ট বসিয়ে তল্লাশী চলছে। রাস্তায় গণপরিবহন একেবারেই নেই। তবে প্রাইভেট কার রয়েছে অনেক। এগুলো বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহনীর জেরার মুখে পড়ছে। যৌক্তিক কারণ ছাড়া যারা রাস্তায় নেমেছেন তাদের বিরুদ্ধ আইনী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। রাজধানীতে কিছু সংখ্যক রিকশা চলাচল করছে। জরুরী প্রয়োজনে মানুষ রিকশায় করে বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করছে। রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়কগুলো ফাঁকা থাকলেও অলিগলিতে ঠিকই লোক সমাগম রয়েছে।

বুধবার (৩০ জুন) এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাঠ প্রশাসন সমন্বয় অধিশাখা।

প্রজ্ঞাপন অনুসারে, কঠোর লকডাউন চলাকালে সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে। সড়ক, রেল ও নৌ-পথে গণপরিবহনসহ সব ধরনের যন্ত্রচালিত যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। বন্ধ থাকবে অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচল। তবে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু থাকবে এবং বিদেশগামী যাত্রীরা তাদের আন্তর্জাতিক ভ্রমণের টিকিট প্রদর্শন করে গাড়ি ব্যবহারপূর্বক যাতায়াত করতে পারবেন।

‘আর্মি ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ বিধানের আওতায় মাঠ পর্যায়ে কার্যকর টহল নিশ্চিত করার জন্য সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ প্রয়োজনীয় সংখ্যক সেনা মোতায়েন করবে।

বিধিনিষেধের মধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার জন্য বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ১০৬ জন কর্মকর্তাকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে সরকার।
লকডাউনের আওতার বাইরে যা থাকছে:
বিধিনিষেধ চলাকালে আইনশৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিষেবা, যেমন কৃষি পণ্য ও উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি) খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, কোভিড-১৯ টিকা প্রদান, রাজস্ব আদায় সম্পর্কিত কার্যাবলী, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস/জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি-বেসরকারি), গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাক সেবা, ব্যাংক, ফার্মেসি ও ফার্মাসিটিক্যালসসহ অন্যান্য জরুরি/অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসের কর্মচারী ও যানবাহন প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়পত্র প্রদান করে যাতায়াত করতে পারবেন।

প্রজ্ঞাপন অনুসারে, পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত ট্রাক-কাভার্ডভ্যান, কার্গো ভেসেল এ নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভূত থাকবে। বন্দরসমূহ (বিমান, সমুদ্র ও স্থল) এবং এ সংশ্লিষ্ট অফিস এই নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভূত থাকবে। শিল্প কারখানাসমূহ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণপূর্বক নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু থাকবে। শপিং মল ও মার্কেটসহ সব দোকানপাট বন্ধ থাকবে। সব পর্যটনকেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে। জনসমাবেশ হয় এই ধরনের সামাজিক (বিবাহোত্তর অনুষ্ঠান, জন্মদিন, পিকনিক পার্টি ইত্যাদি) রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে।

মসজিদে উপস্থিতির বিষয়ে বিধি নিষেধ:
স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে মসজিদে নামাজের বিষয়ে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় নির্দেশনা দিয়েছে।

জরুরী ছাড়া ঘরের বাইরে যাওয়া যাবে না:
অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া (ওষুধ ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়, চিকিৎসা সেবা, মৃতদেহ দাফন/সৎকার ইত্যাদি) কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। নির্দেশনা অমান্যকারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। টিকা কার্ড প্রদর্শন সাপেক্ষে টিকা গ্রহণের জন্য যাতায়াত করা যাবে। কাঁচাবাজার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে। সংশ্লিষ্ট বাণিজ্য সংগঠন/বাজার কর্তৃপক্ষ/স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি নিশ্চিত করতে উদ্যোগ নিয়েছে।

খাবারের দোকান, হোটেল-রেস্তোরাঁ সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খাবার বিক্রয় (অনলাইন/টেকঅ্যাওয়ে) করতে পারবে।

রোববারও ব্যাংক বন্ধ:
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা অনুসারে, ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিত করা হবে। ব্যাংকের মতো ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানও সীমিত পরিসরে চলবে। গ্রাহকদের জরুরি আর্থিক সেবা দিতে আগামী ৫ জুলাই থেকে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত খোলা রাখতে পারবে। এছাড়া বিধিনিষেধ চলাকালে শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির সঙ্গে রোববারও ব্যাংক বন্ধ থাকবে