বার্মার মতো নবীনরাই এই অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে অভ্যূত্থান গড়ে তুলবে– মীর্জা ফখরুল

আপডেট: জুন ৭, ২০২১
0

নবীন প্রজন্মকে সংগঠিত করেই সরকারের বিরুদ্ধে ‘গণঅভ্যুত্থান’ সৃষ্টি করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সোমবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, ‘‘ অতীতের মতো আজকেও ছাত্রদেরকে, এই শ্রমিক শ্রেনীকেই আন্দোলনে বড় ভুমিকা পালন করতে হবে। আপনারা যেটা চাচ্ছেন মুহুর্তের মধ্যে, যেটা আমরা সবাই চাচ্ছি যে, রাজপথে আন্দোলনে মধ্য দিয়ে অভ্যুত্থান হবে। অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এই সরকার পরাজিত হবে।”

‘‘ আমি দৃঢ়তার সাথে বলতে চাই, রাজপথে গণঅভ্যুত্থানে সরকার পরাজিত হবে, অবশ্যই হবে। গণঅভ্যুত্থান তৈরি করতে হবে তো? কারা তৈরি করবে? হু উইল ক্রিয়েটিভ। ইট ইজ দ্য ইয়াং জেনারেশন। তারাই পারবে। যেকোনো কেনো পরিবর্তনে তাদেরকেই সামনে আসতে হবে। জনগনকে ঐক্যবদ্ধ করে যদি আমরা আন্দোলন গড়ে তুলতে পারি তাহলে অবশ্যই আমরা সফল হবো।”

আন্দোলনে প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আমাদের অনেক বয়স হয়ে গেছে। আমার বয়স ৭২ পার হয়ে গেছে। তারপরেও তো আমি রাস্তায় এসে দাঁড়াই। যেদিন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে রাজকে( ছাত্র নেতা) আমার বুক থেকে যখন ছিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সেদিন ক‘জন আপনারা ঘুরে এসে দাঁড়িয়েছিলেন বলেন তো? এগুলো আমাদের উপলব্ধি করতে হবে।”

‘‘আমরা তো সবসময় আশা করি যে, আমাদেরকে শক্তি যোগাবে তরুনরা। আপনারা(আমান উল্লাহ আমান) যখন যুবক ছিলেন আপনারা পরিবর্তন নিয়ে এসছিলেন, নব্বইয়ে এরশাদকে আপনারা হটিয়ে দিয়েছিলেন। আমরা যখন যুবক ছিলাম আমরা পাকিস্তানকে হটিয়ে দিয়েছি। আজকেও এই যুবকদেরকে এগিয়ে আসতে হবে। তাদেরকে সংগঠিত হতে হবে, তাদেরকে তৈরি করতে হবে। সেই কাজ শুরু করুন, তাহলে দেখবেন সেই কাজটা(আন্দোলন) সহজ হয়ে যাবে।”
১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন, ৬৯ সালে এগারো দফা আন্দোলন, ৭০ সালের নির্বাচন এবং মুক্তিযুদ্ধে ছাত্রদের ভুমিকার কথা তুলে ধরেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সময়ের ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, ‘‘একটা কথা আমাদের বুঝা উচিত সকলের যে, নব্বইয়ের পৃথিবী আর আজকে দুই হাজার একুশের পৃথিবী কিন্তু এক নয়।লট অব চেইঞ্জেস হ্যাজ টেকেন প্লেস। যুগ, সময় সব কিছু পরিবর্তন হয়ে গেছে। পরিবর্তনের ধারাকে নিয়ে আমাদের এগুতে হবে। তা না হলে আমরা কখনো সাকসেসফুল হতে পারবো না।”‘‘ অতীতে ছাত্র এবং শ্রমিকরা- তারা যেকেনো আন্দোলনে সব চেয়ে সামনে ভূমিকা পালন করতো, ভ্যানগার্ড। এখন কোথায় তারা, কোথায় যুবকেরা? এখন তারা অপেক্ষা করে থাকে বিএনপি কথন মিটিং করবে?’’

ফখরুল বলেন, ‘‘ আপনাদের অনেকে বলেন, বিএনপি ডাক দিচ্ছে না কেনো? বিএনপি তখনই ডাক দেবে যখন বিএনপি মনে করবে যে, ডাক দেয়ার সময় হয়েছে। ডাক দিয়েছে তো অতীতেও। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পরে আমরা প্রায় ৬ মাস অপ্রতিরোধ্য আন্দোলন গড়ে তুলিনি? একেবারে গ্রামে-গঞ্জে হাট বাজার পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যায়নি। ২০১৫ সালে ম্যাডাম খালেদা জিয়া অবরুদ্ধ হলেন, আমরা সবাই কারাগারে চলে গেছি। তখন গোটা বাংলাদেশ অবরোধ ছিলো না? তারপরেও কিন্তু হয়নি।”

‘‘ আজকে বার্মাতে(মিয়ানমার)১২‘শ ছাত্র-ছাত্রীকে গুলি করে মেরে ফেললো। সরাতে পেরেছে জান্তাকে? পারেনি। মিসরে আন্দোলন করে ইসলামী ব্রাদার হুডের মোহাম্মদ মুরসির সরকার গঠিত হলো- একটা বছরও টিকতে পারেনি। পরিবর্তনগুলো আপনাদের বুঝতে হবে। সঠিকভাবে পরিবর্তনগুলো বুঝে আমাদেরকে জনতা ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। জনতার শক্তির কাছে কোনো শক্তি দাঁড়াবে না। নির্বাচনের মাধ্যমে ওদেরকে পরাজিত করতে হবে।”

খালেদা জিয়াকে ‘আন্দোলনের প্রাণশক্তি’ অভিহিত করে তিনি বলেন, ‘‘ তিনি হচ্ছে সেই ব্যাবিলনের বংশীবাদক যার বাঁশি না বাজলে মানুষ বের হয়ে আসে না। এটা সত্য। আজকে তারা ম্যাডামকে বন্দি করে রেখেছে। অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে তারা(সরকার) কাজগুলো করেছে। আমাদেরকে তার মুক্তির জন্য সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে, তাকে মুক্ত করতে হবে এবং ৮ হাজার মাইল থেকে যিনি আমাদেরকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে।”

‘‘ আমাদের খুব পরিস্কার কথা, এই সরকারের অধীনে কোনেো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। এই নির্বাচন কমিশন কখনো সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে না। সুতরাং দ্যা মাস্ট গো, তাদেরকে যেতে হবে। এরপর একটি নিরপেক্ষ সরকার ও একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে পরিবর্তন আনতে হবে। এই কাজটি আমাদেরকে করতে হবে, অন্য কেউ করে দিয়ে যাবে না। আমেরিকরা করে দিয়ে যাবে না, চীন করে দিয়ে যাবে না, ভারত করে দিয়ে যাবে না। বাংলাদেশের মানুষকে এটা করতে হবে এবং এর নেতৃত্ব অবশ্যই বিএনপিকে দিতে হবে।”

জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ড্যাবের উদ্যোগে প্রয়াত জিয়াউর রহমানের ৪০তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তী ও শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর উত্তম’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।

‘তথ্য-উপাত্ত নিয়েও নৈরাজ্য’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘আজকের পত্রিকায় এসেছে যে, গতকাল সংসদে ওদের একজন সদস্য বলেছেন যে, বড় চোরদের দুর্নীতিতে মাথা হেট হয়ে যায়। মানে ওরা ছোট চোর। আমাদের বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্ বলেছেন, এখন তথ্য-উপাত্ত নিয়েও নৈরাজ্য চলছে। আপনি দেখেন না- এটা পরিসংখ্যানও ঠিক নাই। আপনাদের টেস্টের রিপোর্ট একটাও ঠিক আছে, এই যে আক্রান্ত হচ্ছে তার রিপোর্ট ঠিক আছে, এই যে মারা যাচ্ছে তার রিপোর্ট ঠিক আছে-একটাও না।”‘‘ একটা রিপোর্ট ঠিক আছে- টাকা কত পাঁচার হচ্ছে সেগুলো ঠিক আছে। বাড়ি হচ্ছে কানাডায়, বাড়ি হচ্ছে মালয়েশিয়াতে, বাড়ি হচ্ছে সৌদি আরবে, বাড়ি তৈরি হচ্ছে লন্ডনে। শপিং মল তৈরি হচ্ছে। কেউ আর দেশে টাকা রাখে না। কারণ জানে যে, এখান সময় আসবে যখন প্রত্যেকটার হিসাব নেবে। মানুষ হিসা্ব নেবে অবশ্যই।”

কোবিড-১৯ মোকাবিলায় সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘ তাদের(সরকার) একটাই লক্ষ্য খালি দুর্নীতি করবে, খালি চুরি করবে। যেখানে যাক চুরি চুরি। টেস্টের মধ্যে চুরি, সার্টিফিকেট দেবে সেখানেও চুরি, মাস্ক কিনবে সেখানেও চুরি, পিপি করবে সেখানেও চুরি।”
‘‘ মজার ব্যাপার হচ্ছে যে, স্বাস্থ্য মন্ত্রী যিনি উপস্থিত থেকে রিজেন্ট হাসপাতালের সাহেদের সঙ্গে চুক্তি করলেন। সাহেদকে জেলে নিলে তাহলে মন্ত্রীকে নিলেন না কেনো? মন্ত্রীর চাকুরিটা গেলো না কেনো? হি ইজ ইকুয়েলি রেন্সপন্সেবল, চুক্তির সময়ে তিনি উপস্থিত ছিলেন।”

ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হারুন আল রশিদের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, সহ-প্রচার সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম, ড্যাবের মহাসচিব আব্দুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা শহীদ হাসান, মেহেদী হাসান, জহিরুল ইসলাম শাকিল, সিরাজুল ইসলাম, কাজী মাজহারুল ইসলাম দোলন, জাহানারা সিদ্দিকী, সরকার মাহবুব আহমেদ শামীম, মাসুদ আদনান, মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান, এমটাবের বিপ্লব উজ্জামান প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।