না’গঞ্জে এমপি শামীম ওসমানের আলটিমেটাম : শ্মশানের মাটি পূর্ব পুরুষের কবরে ফেলার অভিযোগ

আপডেট: আগস্ট ৯, ২০২১
0

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ : নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী এমপি শামীম ওসমানের পরিবারের পূর্বপুরুষ ও বিভিন্ন মুক্তিযোদ্ধাদের কবরে শ্মশানের পুকুর থেকে মরদেহ পোড়ানা মাটি এনে কবর ঢেকে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন। এছাড়া কবরের উপর দিয়ে কবরস্থানে চলাচলের রাস্তা তৈরী করেছে কবরস্থানের দায়িত্বে থাকা নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন। সোমবার (৯ আগষ্ট) বাদ জোহর মাসদাইর কবরস্থান পূর্ব পুরুষদের কবর জিয়ারত করতে যান এমপি শামীম ওসমান। ওই সময় কবরগুলো এ অবস্থা দেখে শিশুদের মত কেঁদে উঠেন তিনি।
সে সময় শামীম ওসমান গণমাধ্যম কর্মীদের কান্নজড়িত কণ্ঠে গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, আল্লাহর কসম লাগে ভাই আমার আর ধৈর্য্য পরীক্ষা নিয়েন না। আপনারা কি সহ্য করবেন যে আপনাদের মা বাবা কবরে শ্মশানের মরদেহ পোড়া কয়লা মাটি দিয়ে কেউ ঢেকে দিলে আপাদের কেমন লাগবে। ওই সময় শামীম ওসমান বলতে থাকেন আমি আমার বাবার ব্যর্থ সস্তান। নাহলে এ দৃশ্য আমার দেখতে হত না। এক পর্যায়ে তিনি এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
তিনি কবরগুলো পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সেখানে দায়িত্বরতদের ৪৮ ঘন্টা সময় বেধে দেন। এসময় শামীম ওসমান উপস্থিত সাধারণ মানুষের প্রতি জানতে চান একইভাবে তাদের পরিবারের প্রয়াতদের কবরে যদি শ্মশানের পোড়া মাটি দেয়া হয় তাহলে সেটা তারা মানবেন কিনা, উত্তরে সকলেই ‘না’ জানিয়ে কাজটি সঠিক হয়নি বলেন।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, নতুনভাবে মাটি ফেলা হয়েছে শামীম ওসমানের দাদা খান সাহেব এম. ওসমান আলী, দাদী জামিলা ওসমান, বাবা আবুল খায়ের মোহাম্মদ সামসুদ্দোহা, মা নাগিনা জোহা ও বড় ভাই একেএম নাসিম ওসমানসহ ওসমান, একাধিক মুক্তিযোদ্ধাসহ অনেকগুলো সাধারণ কবরে।
শামীম ওসমান উপস্থিত সাংবাদিকদের আরো বলেন, আমি গত ২৭ জুলাই মেয়র আইভীর মা ও আলী আহমদ চুনকা সাহেবের স্ত্রীর কবর জিয়ারত করতে এখানে আসি। তখন দেখেছিলাম শ্মশানের সংস্কার কাজ চলছে এবং এখানে মাটি পড়ে আছে। তখনও আমার বাবা, মা, দাদা, দাদী ও মুক্তিযোদ্ধাদের কবর ঠিকঠাক ছিল। এখন এই জায়গা তিনফুট উচু। আজকে আমার মনে হচ্ছে আমি একজন ব্যর্থ সস্তান। আমি সিটি করপোরেশনকে দায়ী করবো না।
আমি মনে করি এটা কোন মানুষের কাজ না, এটা ইবলিশের কাজ। ‘যারা এ কাজটা করেছেন বা করিয়েছেন তাদের কাছে আমার একটাই জিজ্ঞাসা, কী লাভ হল এটা করে। আমারা বাবা মা ভাই মারা যাওয়ার পর আমার যেমন কষ্ট হয়েছিল আজকে তার চেয়ে কোন অংশে কম কষ্ট হচ্ছে না।’
তিনি বলেন, এখানে আমার পূর্ব পুরুষের কবর। আমরা এর সংস্কার করি ঠিক করি। সবাই যার যার পরিবারেরটা করে। তাহলে কেন এই মাটিটা এত উঁচু করা হল। আমি ঠিকাদারকে জিজ্ঞেস করেছি এটা তার কার্যাদেশে ছিল কিনা। সে বলেছে ছিল না। তাহলে এ কাজটা করলকে। একজন আরেকজনের দোষ দিচ্ছে। শামীম ওসমান বলেন, হিন্দু ধর্মের যারা মৃত্যুবরন করতেন তাদের মরাদেহ দাহের পরে এই পানিতে ফেলা হত। সেই শ্মশানের মাটি দিয়ে কবরগুলো ভরা হয়েছে। কেন, মাটির এতই অভাব ছিল। আমার বাপ দাদার কবর আমার পারমিশন ছাড়া আপনি সংস্কার করবেন কেন।
তিনি আরো বলেন, যারা এই কাজটি করেছেন, আল্লাহরওয়াস্তে বলছি আপনাদের। আমার ধৈর্যের আর পরীক্ষা নিবেন না। আপনারা নিজেরাও আযাবের হাত থেকে বাঁচার জন্য কবরগুলোকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে আসুন। নয়তো আল্লাহ আপনাদের মাফ করবেন না। না করলে আমি ঠিক করবো। এই মাটি রাস্তার পাশেও রাখা যেত। এখানে কেন রাখা হল। এখানে জাতির বীর সন্তান মুক্তিযোদ্ধারা শোয়া। যারা এই কাজ করেছে কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন এটাই আমার প্রত্যাশা।’
এটা টেস্ট কেস। তারা চেষ্টা করছে আমার মাথা গরম করে দেয়ার জন্য। আমি তাদের বলতে চাই আমার মাথা গরম হবে না। আমি শুধু আল্লাহর উপর ভরসা করি। এই সমস্ত পাপীদের আমি কেয়ার করি না।
তিনি বলেন, আমি সিটি করপোরেশনের কাছে অনুরোধ করবো দয়া করে কবরগুলোকে আগের অবস্থায় নিয়ে আসুন। শুধু আমার পরিবারেরটা না। অন্যান্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আছেন, তাদেরটাও।
কবরস্থানের সীমানা প্রাচীর ও উন্নয়ন কাজের ঠিকাদার মামুন জানান, এটা উচিত হয়নি। আমি মাটিগুলো বাইরের সড়কে রেখেছিলাম। কিছু বৃষ্টিতে আসার কথা তবে এটা তারা ভরাট করে চলাচলের জন্য তৈরী করেছে আর কিছু তারাই ভরেছে। জসিম নামে একজন আছে আমি চিনিনা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কবরস্থান মসজিদের ইমাম বদরশাহ জানান, কবরস্থানে শ্মশানের মাটি দেয়া সমীচীন নয়। এখানে ধর্মীয় বিষয় না তবে এটা মানবিক দিক থেকেই উচিত নয়। আমি মসজিদে নামাজ পড়াই ও দোয়া করি। এ বিষয়টি আমি দেখভাল করিনা। তবে নাপাক মাটি কবরে দেয়া উচিত নয়।
মসজিদের মোয়াজ্জিন ও কবরস্থানের দেখভালের দায়িত্বে থাকা জাকারিয়া জানান, এটা শ্মশানের মাটি। ঠিকাদাররা শ্মশান ও কবরস্থানের উন্নয়ন কাজ করেছে।
এ ঘটনার মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করা হয়েছে দাবি করে শামীম ওসমান বলেন, সন্তান হিসবে আমি ব্যর্থ। আমার বাবার মায়ের কবর আমি হেফাজত করতে পারিনি। আর মুক্তিযোদ্ধাদের কবর অবমানননা করা হয়েছে।

এম আর কামাল
নারায়ণগঞ্জ