নাগরিক ঐক্যের সাথে দেড় ঘন্টার ‘কার্যকর’ রুদ্ধদ্বার বৈঠক অনুষ্ঠিত

আপডেট: মে ২৪, ২০২২
0

বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলতে নাগরিক ঐক্যের সঙ্গে ‘কার্যকর’ আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

মঙ্গলবার বিকালে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বাধীন দলটির সাথে সংলাপ শেষে সাংবাদিকদের কাছে বিএনপি মহাসচিব এই কথা জানান।

তিনি বলেন, ‘‘আমরা একটা বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য এই আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করেছি। উদ্দেশ্যে একটাই এটাকে একটা যৌক্তিক পরিণতির দিতে নিয়ে যাওয়ার জন্য।আমাদের আজকে এই আলোচনা অত্যন্ত সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশে কার্য্করী আলোচনা হয়েছে।”

‘‘আমরা আশা করছি এই আলোচনার রেশ ধরে বাকী দলগুলোর সাথেও আলোচনা ফলোপ্রসু হবে। আমরা অন্যান্য দলগুলোর সাথেও কথা বলব। অতি দ্রুত আলাপ-আলোচনা তাদের সাথে শেষ করে আমরা আশা করছি যে, আমরা একটা যৌথভাবে আন্দোলনের সূচনা করতে পারবো এবং আমরা আশা করি খুব শিগগিরই আমরা এই কাজটা করতে পারবো।”

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আজকে দেশের মানুষ আশা করে আছে যে, বিরোধী দলগুলো একটা ঐক্যের মধ্যে এই সরকারের বিরুদ্ধে সফল কারযকরী আন্দোলন গড়ে তুলবে, সেই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পরিবর্তন আনবে এবং সেই পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে জনগনের একটা সরকার ও পার্লামেন্ট হবে। সেই লক্ষ্যে আমরা আজকে নাগরিক ঐক্যের সাথে কথা বলেছি।”

মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘‘ এই বৈঠক আনুষ্ঠানিক হলেও অনানুষ্ঠানিক পর্যায়ে আমাদের সাথে বিএনপির কথা হয়েছে। আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য যেসব কাজ করা দরকার সবগুলো না হলেও মৌলিক বিষয়গুলো নিয়ে আজকের সভায় আমরা আলোচনা করেছি। এই মৌলিক বিষয়গুলোর একটা হচ্ছে এই সরকারের অধীনে একটা সুষ্ঠু, ভালো, গ্রহনযোগ্য নির্বাচন হতে পারে না। এটা এদেশের সমস্ত বিরোধী রাজনৈতিক দল বলেছে। এরই ভিত্তিতে এই সরকার চলে যাওয়ার পরে পরবর্তি নির্বাচন ও সরকার প্রতিষ্ঠা পর্যন্ত যারা দায়িত্বে থাকবেন তাকে যে নামে ডাকি আমরা- একটা গ্রহনযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান করবেন এই দাবির ভিত্তিতে আমরা বিজয় পর্যন্ত লড়াই করব এই চিন্তায় কাজ করছিলাম-আজকে বৈঠকের প্রথমে আমরা সেই কথার পূনরব্যক্ত করেছি। ’’

‘‘ এই আন্দোলনকে যৌক্তিক পরিণতির দিকে নিয়ে যাওয়া যায় কিরকম করে, আমাদের দলগুলোর পারস্পারিক বুঝাপরা-সমঝোতা, নিজেদের দলগুলোর কোনো সমস্যা, কোন রাজনৈতিক সংকট এগুলো নিয়ে আমরা কথা-বার্তা বলেছি।একটা বৃহত্তর আন্দোলন গড়ার তোলার পদক্ষেপ হিসেবে আজকের এই বৈঠককে আমরা বিবেচনা করছি। আমি মনে বৃহত্তর আন্দোলন হগে তোলার ক্ষেত্রে আমাদের ভুমিকা মূখ্য হবে।”

কী আলোচনা হয়েছে তা ব্যাখ্যা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ যে বিষয়গুলো নিয়ে আমরা কথা বলেছি তার প্রধান বিষয় হচ্ছে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, তার প্রধান বিষয় হচ্ছে, একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য নির্বাচনকালীন সময়ে একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার। আমরা আলোচনা করেছি নিরপেক্ষ সরকার গঠনের পর নির্বাচন কমিশন পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যে নির্বাচন হবে সেই নির্বাচনে অংশগ্রহনকারী সকল দলগুলোকে নিয়ে একটি মতামতের ভিত্তিতে একটা সরকার গঠন করা যেটা আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেছেন যে, একটা জাতীয় সরকার গঠন করা হবে-এগুলো আলোচনার বিষয়বস্তু ছিলো।”

‘‘ আরেক বিষয় ছিলো যেটা হচ্ছে, আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে আটক করে রাখা হয়েছে তার মুক্তি যেটা মাহমুদুর রহমান মান্না সাহেব বলেছেন। বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা, গায়েবী মামলা ও যাদেরকে আটক করে রাখা হয়েছে তাদের মুক্তির বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

‘ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে’র রুপরেখা প্রণয়নে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে বিএনপির সংলাপ শুরুর প্রথম দিনে বিকালে বিএনপি মহাসচিব তোপখানা রোডে নাগরিক ঐক্যের কার্যালয়ে আসেন। কার্যালয়ের পাশে শিশু কল্যাণ পরিষদ ভবনের সম্মেলন কক্ষে নাগরিক ঐক্যের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠকে বসেন বিএনপি মহাসচিব।

বিকাল ৫টা থেকে দেড় ঘন্টা এই রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয়।

বৈঠকে বিএনপির প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার সঙ্গে ছিলেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম ও নির্বাহী কমিটির সদস্য জহির উদ্দিন স্বপন।

নাগরিক ঐক্যের নেতৃত্ব দেন দলটির সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নান। প্রতিনিধি দলে ছিলেন দলটির উপদেষ্টা এস এম আকরাম, সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার, প্রেসিডিয়াম সদস্য মোফাখখারুল ইসলাম নবাব, জিল্লুর চৌধুরী দিপু, জাহেদ উর রহমান, কেন্দ্রীয় নেতা আবু জাহেদ মোহাম্মদ সারওয়ার, আনিসুর রহমান খসরু, মাহবুব মুকুল, মঞ্জুর কাদের, এসএমএ কবির হাসান, আবু তালেব দেওয়ান, মুহিদুজ্জামান মুহিদ, আবদুর রাজ্জাক রাজা প্রমূখ।