নারায়ণগঞ্জে মৃত্যুর আগেই নিজের কুলখানি করলেন ৮৮ বছরের বৃদ্ধ মোসলেম

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২১
0

এম আর কামাল, নারায়ণগঞ্জ : নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় মোসলেম প্রধান নামে ৮৮ বছরের এক বৃদ্ধ নিজের কুলখানিতে ১০ গ্রামের কয়েক হাজার লোককে খাইয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছেন।

গত শুক্রবার দিনব্যাপি উপজেলার ধামগড় ইউনিয়নের কামতাল এলাকায় মোসলেম প্রধানের নিজ বাড়িতে কুলখানির ওই ভোজ অনুষ্ঠিত হয়। বৃদ্ধ মোসলেম প্রধান নিজ হাতে আমন্ত্রিতদের আপ্যায়ন করেন। এর আগে ১০ গ্রামের ১০ মসজিদের ঈমামগণদের দিয়ে মিলাদ ও দোয়ার আয়োজন করেন। বিষয়টি এখন পুরো উপজেলা জুড়ে আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হয়েছে। আমন্ত্রিত অথিতিদের আপ্যায়নের ব্যয় ভার তিনি নিজেই বহন করেন। খাবারের মেন্যুতে ছিল সবজি গরুর গোশত ও ডাল।

মুসলিম রীতি অনুযায়ী পরিবারের কোন সদস্যের মৃত্যুর ৪ অথবা ৫ দিন পর মিলাদ ও দোয়ার আয়োজন করা হয়। সেখানে আমন্ত্রিতদের আপ্যায়ন করা হয়। অতীতে দেশের কোথাও কোথাও মৃত্যুর পূর্বেই জীবীত অবস্থায় কুলখানি করার কথা শোনা যেতো।
হাজী মো. মোসলেম প্রধানের বয়স প্রায় ৮৮ বছর হলেও এখনও তিনি সুস্থ-সবল আছেন। পায়ে হেঁটে চলাফেরা করতে পারেন। নিজের ভাড়া দেওয়া বাড়ি তদারকি করেন। চার ছেলে পাঁচ মেয়ের জনক তিনি।

স্ত্রী বেঁচে আছেন। চার ছেলের সংসারে নাতি-নাতিনসহ একান্নবর্তী পরিবার তার। ছেলে-মেয়েদের মধ্যে আগেই সম্পত্তি ভাগ বাটোয়ারা করে লিখে দিয়েছেন। ছেলেরাও স্বচ্ছল, ব্যবসা বাণিজ্য করেন। তার বড় ছেলে নবীর হোসেন বন্দরের ধামগড় ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান।

মোসলেম প্রধান বলেন, তার ইচ্ছে ছিল আল্লাহ যদি আমাকে অর্থশালী করেন তাহালে মৃত্যুর আগেই তিনি প্রতিবেশী, নিজ গ্রাম এবং আশপাশের গ্রামবাসীসহ আতœীয়-স্বজনদের দাওয়াত করে নিজের হাতে খাওয়াবেন। আল্লাহ আমার মনের ইচ্ছা পূরণ করেছেন।
দাওয়াতে অংশ নেওয়া বেশ কয়েকজন গ্রামবাসী বলেন, সাধারণত পরিবারের কেউ মৃত্যু বরণ করলে ৪ দিন পর বাড়িতে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করে থাকি আমরা।

মোসলেম প্রধান মৃত্যুর আগেই নিজ গ্রামের পাড়া প্রতিবেশীসহ আশপাশের কামতাল, মালিভিটা, দশদোনা, হালুয়াপাড়া, আড্ডা শ্যামপুর, মহজমপুর ও যোগীপাড়া চিড়ইপাড়াসহ ১০ গ্রামের নারী-পূরুষ এবং পাশর্^বর্তী সোনারগাঁ উপজেলার আতœীয়স্বজনসহ কয়েক হাজার মানুষকে দাওয়াত করে খাইয়েছেন। গত ১৫ দিন আগ থেকেই প্রত্যেক ঘরে দাওয়াত পৌঁছে দেয় মোসলেম প্রধানের চার ছেলে। গত বৃহস্পতিবার রাত থেকেই শুরু হয় রান্নার আয়োজন।

শুক্রবার সকালে মিলাদ মাহফিল ও মোনাজাত শেষে আমন্ত্রিত অথিতি খাওয়া-দাওয়া শুরু হয়ে শেষ হয় বিকেলে। মৃত্যুর আগে মোসলেম প্রধান নিজের খরচ (কুলখানি) নিজে করেছেন বলে ঘটনাটি এখন তার নিজ গ্রামসহ আশপাশের গ্রামে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।

এম আর কামাল
নারায়ণগঞ্জ