নারায়ণগঞ্জে শত কোটি টাকার সড়ক চালু না হতেই যেন বাস-ট্যাংকলড়ীর গ্যারেজ

আপডেট: সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২২
0

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ : নারায়ণগঞ্জে ১১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য বেগম নাগিনা জোহা সড়ক নস্ট হয়ে যাচ্ছে অবৈধ ট্যাংকলড়ী, ট্রাক, বাস পার্কিং, পার্কিং করা ট্যাংকলড়ী থেকে নিগৃত ডিজেল ও মবিলের কারণে। তাছাড়া সড়কটি দেখে মনে হবে যেন বাস ও ট্যাংকলড়ীর গ্যারেজ।
এছাড়া সড়কের বিভিন্ন অংশ হুমকির মুখে পড়েছে। এ বিষয়ে অবৈধ পার্কিং করা বিভিন্ন ট্রাকসমুহ অপসারণ এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সওজ লিখিত অভিযোগ দিলেও এক মাসেও কার্যকরী কোন প্রদক্ষেপ নেয়নি স্থানীয় প্রশাসন। ফলে নির্মানাধীন সড়কটি চালু হওয়ার আগেই পুরোপুরি নষ্ট হওয়ার উপক্রম হবে বলে আশংকা করছেন নারায়ণগঞ্জ সড়ক বিভাগ।
নারায়ণগঞ্জ সড়ক বিভাগের তথ্যমতে, গত বছরের এপ্রিলে ১১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে সাড়ে ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ বেগম নাগিনা জোহা (চাষাড়া-খানপুর-হাজীগঞ্জ-গোদনাইল-আদমজী ইপিজেড) সড়কের নির্মান কাজ শুরু করে নারায়ণগঞ্জ সড়ক বিভাগ। ২০২৩ সালের জুনে কাজ শেষ হওয়ার কথা।
ইতিমধ্যে সড়কের ৮০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকী ২০ ভাগ কাজ চলমান। এরমধ্যে সড়কের সফুরা খাতুন পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে গোদনাইল বারিপাড়া পর্যন্ত সড়কের উপর দুই পাশে সারিবব্ধভাবে শতাধিক ট্যাংকলড়ী পার্কিং করে রাখা হয়েছে।
শুধু তাই নয়, ট্যাংকলড়ীর মেরামত কাজ করা হচ্ছে সড়কের উপর। এতে দিনের পর দিন ট্যাংকলড়ী পার্কিং করে রাখা ও মেরামতের কারণে ট্যাংকলড়ী থেকে নিগৃত ডিজেল ও পোড়া মবিল পড়ে সড়কটির বিটুমিনাস লেয়ার চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এবং নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হওয়ার আগেই সড়কটি বিনস্ট হয়ে যেতে পরে। কোন কোন পয়েন্টে ছোট ছোট গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
এ নিয়ে মুখিকভাবে ট্যাংকলড়ী মালিকদের সতর্ক করা হলেও তারা তাদের পার্কিং অব্যাহত রেখেছে। নির্মাণ শ্রমিকদের মারধর করতেও তেড়ে আসে। ফলে গত ২১ আগস্ট বিষয়টি লিখিত আকারে সিদ্ধিরগঞ্জ থানাকে অবহিত করেন সওজের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী সামিউল কাদের খান। কিন্তু ২৯ দিনেও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ অবৈধ পার্কিং করা গাড়ি অপসারনে কোন প্রদক্ষেপ নেয়নি।
সরেজমিনে দেখা যায়, শুধু ট্যাংকলড়ী নয়, বিভিন্ন পয়েন্টে বাস, ট্রাক পার্কিং করে রাখা হয়েছে। সেই সকল পরিবহন পার্কিং করার পাশাপাশি মেরামত কাজও করা হচ্ছে। এতে গাড়ির জালানী ও পোড়া মবিল পড়ে সড়কের কার্পেটিংয়ের উপরিভাগ পুড়ে যাচ্ছে।
পাথর ও বিটুমিন মিশ্রিত সড়কের আস্তরন সেখানে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এসব কারণে ইতিমধ্যে অনেক জায়গায় সড়কটিতে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে নির্মানাধীন সড়কটি চালু হওয়ার আগেই পুরোপুরি নষ্ট হওয়ার উপক্রম হবে।
এ বিষয়ে ট্যাংকলড়ী মালিক সমিতি মেঘনা ডিপো গোদনাইল শাখার সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন মহাজনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, কিছু গাড়ি রাখা হয়েছে এটা আমরা দেখি। কিন্তু কার গাড়ি রাখা হচ্ছে বলতে পারছি না। মাটির রাস্তা যখন ছিল তখন গাড়ি রাখা হতো।
এখন যেহেতু পাকা রাস্তা হয়ে গেছে তখন তো আর গাড়ি রাখা ঠিক হচ্ছে না। আমি সভাপতির সঙ্গে কথা বলে অবশ্যই মেঘনার গাড়ি সরিয়ে দিবো।
ট্যাংকলড়ী মালিক সমিতি পদ্মা ডিপো শাখার সাধারণ সম্পাদক ইয়ার হোসেন ভুইয়া জানান, পদ্মা গোদনাইল শাখায় তিনটা মালিক সমিতি আছে। সবাইকে চিঠি দিয়ে গাড়ি সরানোর জন্য বলা উচিৎ।
কারণ খালি ময়দান পেয়ে যে যার মতো গাড়ি রাখবে এটা ঠিক না। আমরা চাই যার যার জায়গায় যাতে গাড়িগুলো নিয়ে রাখে। রাস্তাটা ক্লিয়ার থাকলে মানুষ সুন্দরভাবে চলাচল করতে পারবে। রাস্তাটাও ঠিক থাকবে।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মশিউর রহমান জানান, আমরা চিঠি পেয়েছি। ওনারা (সওজ) অবৈধ পার্কিং উচ্ছেদের উদ্যোগ নিলে আমরা পুলিশ দিয়ে সহযোগিতা করবো।
নারায়ণগঞ্জ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সাহানা ফেরদৌস জানান, আমি ১১ সেপ্টেম্বর এখানে যোগদান করেছি। নতুন রাস্তাটা যে গাড়ি পার্কিং করে নস্ট করা হচ্ছে তা আমি অবগত হয়েছি। আমরা অবশ্যই এ বিষয়ে অ্যাকশনে যাবো। প্রয়োজনে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অবৈধ পার্কিংয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এম আর কামাল
নারায়ণগঞ্জ
তারিখ ঃ ২৬-০৯-২০২২