নারায়ণগঞ্জে ৭ মাসে ৪১০ অগ্নিকান্ড ক্ষতি ৩৩ কোটি টাকা নিহত-৬১

আপডেট: আগস্ট ৮, ২০২১
0

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ : শিল্প ও কলকারখানা সমৃদ্ধ এলাকা নারায়ণগঞ্জ। এখানে অগ্নিকান্ড ও অগ্নিকান্ডের মৃত্যু যেন স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাড়িয়েছে। অহরহ জেলার বিভিন্ন স্থানে এসব ঘটনা ঘটেই চলছে। কোন ঘটনা অল্প ক্ষতিতেই হচ্ছে সমাপ্ত। আবার কিছু ঘটনা তৈরী করছে নির্মম ভয়াবহতার গল্প। চলতি বছরের শুরু থেকে মাত্র সাত মাসে ৪১০টি অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতিসহ ঘটেছে বেদনাদায়ক মৃত্যু হয়েছে। এসব ঘটনায় পুড়েছে হাজারো পরিবারের সোনালি স্বপ্ন। সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ ও অসচেতনতার কারণে অগ্নিকান্ডের পুনরাবৃত্তি হচ্ছে বলে জানান নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ।
জেলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সূত্র মতে, ২০২১ সালের প্রথম সাত মাসে জেলাজুড়ে ৪১০টি অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এসব অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ মোট ৩৩ কোটি ৪০ লক্ষ ৫৬ হাজার ৫০০ টাকা। গতবছর অগ্নিকান্ডের ঘটনা ছিল ৫৯৪ টি। গতবারের তুলনায় এ বছরে মাসিক অগ্নিকান্ডের হার বেড়েছে। সেই সাথে আহত ও নিহতের সংখ্যাও বেড়েছে পূর্বের তুলনায় কয়েকগুণ। ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত, সাত মাসেই অগ্নিকান্ডের ঘটনায় আহত ১০৫ জন এবং নিহত হয় ৬১ জন। ২০১৯ সালে আহত হয়েছিল ২৭ জন এবং নিহত হয় ৫ জন। ২০২০সালে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় আহত হয় ১৬ জন এবং নিহত হয়েছিল ৩৯ জন।
নারায়ণগঞ্জ ফায়ারসার্ভিস কর্তৃক জানা যায়, অগ্নিকান্ডের ৯০ শতাংশ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ৪টি গুরুতর কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। বৈদ্যুতিক গোলযোগ, চুলার আগুন ও সিগারেটের জলন্ত টুকরো ও গ্যাস লাইনের আগুন থেকেই অধিকাংশ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। জুলাই মাসে ৩৪ টি অগ্নিকান্ডে আহত ৪৬ জন এবং ৫৪ জন নিহত হন। জুন মাসে ৩৪ টি অগ্নিকান্ডে ২ আহত ও একজন নিহত হন। মে মাসে ৪৮ টি অগ্নিকান্ডে আহত ২০ জন। এপ্রিল মাসে ৮৩ টি অগ্নিকান্ডে আহত ১৫ জন এবং নিহত হয় ২ জন। মার্চ মাসে ৮৩ টি অগ্নিকান্ডে আহত ৭ জন। ফেব্রুয়ারি মাসে ৬৬ টি অগ্নিকান্ডে আহত ৭ জন ও নিহত ২ জন। জানুয়ারি মাসে ৬২ টি অগ্নিকান্ডে আহত ৮ জন ও নিহত হয় ২ জন।
গত মাসের ৮ জুলাই বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে রূপগঞ্জ উপজেলার কর্ণগোপ এলাকার সজিব গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ এর সেজান জুস কারখানায় অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ৫২ জনের মৃত্যু ঘটেছে। এদের মধ্যে ৪৯ জন অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান। এ ঘটনায় রূপগঞ্জ থানায় ১০ জুলাই একটি হত্যা মামলা করেন ভুলতা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক নাজিম উদ্দিন। পরে তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডি। এ মামলায় সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল হাসেম সহ ৮ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
মর্মান্তিক এ ঘটনার রেস কাটার আগেই আগস্ট মাসের শুরতে রূপগঞ্জে আরেকটি ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। ৪ আগস্ট উপজেলার তারাবো পৌরসভার মৈকুলী এলাকার এম হোসেন কটন এন্ড স্পিনিং মিলের ইউনাইটেড লেদারের ক্যামিকেলের গোডাউনে এই অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। প্রায় তিন ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন ফায়ার সার্ভিসের ১৪টি ইউনিট। তবে অগ্নিকান্ডে কোন প্রকার হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরেফীন জেলায় মাত্রাতিরিক্ত অগ্নিকান্ডের কারণ ও সমাধানের বিষয়ে বলেন, নারায়ণগঞ্জ শিল্প পরিপূর্ণ একটি নগরী। এখানে ব্যাপক পরিসরে কলকারখানার কার্যক্রম চলে। এ ধরনের অঞ্চলে পর্যাপ্ত সর্তকতা অবলম্বন না করা হলে প্রচুর অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এ বছরের গত সাত মাসে সর্বাধিক অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে বৈদ্যুতিক গোলযোগ ও ক্রটিপূর্ণ গ্যাস লাইনের কারণে। বৈদ্যুতিক সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি ৩ মাস পরপর বৈদ্যুতিক সংযোগ ঠিক আছে কিনা তদারকি করা উচিত। একই ভাবে তিতাসের গ্যাস লাইনের কার্যক্ষমতা ও পরিস্থিতি নিয়ে তদারকি করা প্রয়োজন। কিন্তু এমনটা হয়না। বছরের পর বছর চলে যায় এসব লাইনের মেরামত বা কার্যক্ষমতা নিরীক্ষা করা হয়না। ক্রটিপূর্ণ সংযোগ ও সুইচবোর্ডের কারণে একাধিক দূর্ঘটনা ঘটে। প্রাকৃতিক দূর্ঘটনা ব্যতীত অধিকাংশ ঘটনা মানুষের অসচেতনতার কারণে ঘটছে। মানুষের মাঝে সচেতনতার পাশাপাশি বহুতল ভবন ও সব ধরনের প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয় অগ্নি প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে এসকল ঘটনা সংখ্যা হ্রাস পাবে।