নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতায় উত্তরায় মহানগর মহিলা পরিষদের প্রতিবাদ সমাবেশ

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২১
0

মহিলা পরিষদ ঢাকা মহানগর কমিটি আয়োজিত অব্যাহত নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা ও ধর্ষণ, নির্যাতনের প্রতিরোধ ও প্রতিকারের দাবীতে ধারাবাহিক কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত প্রথম সমাবেশ উত্তরা শাখা ও উত্তর খান পাড়া কমিটির তত্ত্বাবধানে বিকাল ৩ টায় আজমপুর বাস স্ট্যান্ড ৭ নম্বর সেক্টরে, উত্তরা, ঢাকাতে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের ঢাকা মহানগর কমিটির সভাপতি মাহাতাবুন নেসা।

স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা মহানগরের উত্তরা শাখা কমিটি সাধারণ সম্পাদক সুলতানা পারভীন বলেন নারীর প্রতি অব্যাহত সহিংসতা প্রতিরোধে সামাজিক আন্দোলন ও সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। তিনি আরও বলেন নারী ও কন্যার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, যৌন সহিংসতার শিকার নারী ও কন্যাকে দোষারোপ না করা। নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।

সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র অ্যাডভোকেট দীপ্তি রানী সিকদার বলেন সমাজের প্রতিনিয়ত ঘটে যাওয়া নারী সহিংসতা বন্ধে শুধু প্রয়োজন সবার আন্তরিক সহযোগিতা। সবার সহযোগিতা এবং অংশগ্রহণ ছাড়া সরকারের একার পক্ষে নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করা সম্ভব নয়। তিনি তাঁর বক্তব্যে সমাবেশ উদ্দেশ্য সম্পর্কে আলোচনা করেন। নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সমন্বিত চেষ্টা করতে হবে বলে সকলকে প্রতি আহ্বান জানান।

সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির অ্যাডভোকেসি ও লবি পরিচালক
জনা গোস্বামী বলেন নারী ও শিশু নির্যাতন-ধর্ষণের ঘটনা প্রতিরোধ ও প্রতিকারের দাবিতে আমাদের সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। প্রত্যেক জায়গায় নারীদের নিজের ওপর নিজের সাহস রাখতে হবে। নারীসহ সবাইকে সচেতন করতে হবে। নির্যাতনের শিকার হওয়া নারীর নিজের কোনো দোষ নয়, বরং নির্যাতনকারীই এর জন্য দোষী। সবাইকে একত্রিত করে চিন্তা ও মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তনের মাধ্যমে নারীর প্রতি নির্যাতন প্রতিরোধ করার আহ্বান জানান।

সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির লিগ্যাল অ্যাডভোকেসি ও লবি পরিচালক অ্যাড. মাকসুদা আখতার লাইলী বলেন বিচারহীনতার কারণে নারী ও শিশু নির্যাতন মামলার আসামিরা ছাড় পেয়ে যায়। নারী এবং শিশুর প্রতি যৌন সহিংসতায় জিরো টলারেন্স। সেই আঙ্গিকে আমাদের সবাইকে যার যার জায়গা থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে।

ধর্ষণের শিকার নারীকে দোষী সাব্যস্ত করা হচ্ছে। এসব কিছু বহাল রেখে কেবল মৃত্যুদণ্ডের আইন পাস করলেই ধর্ষণ বন্ধ হবে না। নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সামাজিক আন্দোলন ও সচেতনতা বৃদ্ধি করার আহ্বান জানাচ্ছি।

ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রেহানা ইউনুস বলেন পরিবার, সমাজ,রাষ্ট্র এক ক্রান্তিকালের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে। এক অনিশ্চিত গন্তব্যের দিকে আমরা ধাবিত হচ্ছি।কেন রাস্তায় দাঁড়াতে হবে? নারীরা ঘরে-বাইরে কোথাও আজ নিরাপদ নয় কেন? ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় আমরা মর্মাহত। এসব প্রশ্নের জবাব রাষ্ট্রকে দিতে হবে। দ্রুত বিচার করে ধর্ষকের শাস্তি নিশ্চিত করা, ধর্ষণ মামলায় আপস না করা।নারী নির্যাতন প্রতিরোধে সাধারণ মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে তেমনি সমাজের সকল শ্রেণীর পেশার মানুষকে নারী নির্যাতন ও নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি,নারীবান্ধব সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. মাসুদা রেহানা বেগম বলেন নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনাগুলো দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়ায় শুধু একটি সংখ্যা হয়ে যায়। রাষ্ট্র, মিডিয়া, কোনো সংগঠনই ঘটনাগুলোর ধারাবাহিক ফলোআপে মনোযোগী হয় না।রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে নির্যাতনের শিকার নারীকে সামাজিক নিরাপত্তাবলয়ের মধ্যে আনতে আমাদের পদক্ষেপ নিতে হবে। কেবল মৃত্যুদণ্ডের আইন পাস করলেই ধর্ষণ বন্ধ হবে না। ধর্ষণ প্রতিরোধে দ্রুত বিচার ব্যবস্থা গ্রহণ ও সামাজিক আন্দোলন পাশাপাশি সবার ভেতর সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।

সমাবেশে উত্তরা কমিটি সাংগঠনিক সম্পাদক জাহানারা কোহিনুর বলেন দেশের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হলে নারীর প্রতি সহিংসতা ও নারী নির্যাতন, ধর্ষণ প্রতিরোধে দ্রুত বিচার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। নারীর ওপর নির্যাতন কমানোর জন্য প্রথমে যা প্রয়োজন, তা হচ্ছে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের আহ্বান জানান।

উত্তরা কমিটির সদস্য ফাতেমা বেগম বলেন সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক অস্থিরতার সাথে নারীর প্রতি সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। নারীর প্রতি সহিংসতা বাড়ার আরেকটি বড় কারণ হচ্ছে, কোথাও কোনো নির্যাতনের ঘটনা ঘটলে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসে না। নারীর সুরক্ষায় যেসব আইন আছে, সেসব আইনের যথাযথ প্রয়োগ হচ্ছে না। নারী নির্যাতন প্রতিরোধে আইনের সঠিক প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন প্রয়োজন বলে তিনি মন্তব্য করেন।

সাধারণ প্রস্তাব পাঠ করে ঢাকা মহানগর কমিটি সহ-সাধারণ সম্পাদক মঞ্জু ধর বলেন: নারীর প্রতি অব্যাহত সহিংসতা ও ধর্ষণ প্রতিরোধে সমাজের সকলের সমন্বিত চেষ্টা করতে হবে।

নির্যাতনের শিকার হওয়া নারীর নিজের কোনো দোষ নয়, বরং নির্যাতনকারীই এর জন্য দোষী। সামাজিক অবক্ষয় ওপর্নোগ্রাফির বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। নির্যাতন প্রতিরোধে পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় ক্ষমতা কাঠামো, শিক্ষা ব্যবস্থা ও আইনী কাঠামোতে সামগ্রিক পরিবর্তন আনতে হবে। নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে অনলাইন সেবা কার্যক্রম পরিধি আরও সক্রিয় করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে । বিচারপ্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা নারীর প্রতি সহিংসতা বাড়িয়ে তুলছে বলে তিনি জানান ।

সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা মহানগর কমিটি সভাপতি মাহাতাবুন নেসা বলেন সাম্প্রতিক সময়ে নারীর প্রতি সহিংসতা ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। নারী ও শিশুর স্বাধীন চলাচলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সময়োপযোগী নতুন আইন প্রনয়ন করা দরকার। পাশাপাশি অভিভাবকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আসুন আমরা নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলি।

প্রতিবাদ সমাবেশ কর্মসূচিতে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ, ঢাকা মহানগর কমিটির নেতৃবৃন্দ সংগঠক, পাড়া শাখার সদস্যবৃন্দ, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক ও শুভানুধ্যায়ীরা উপস্থিতি ছিলেন। নারী নির্যাতন প্রতিরোধ করতে হবে, সকলের প্রচেষ্টার নারীবান্ধব সমাজ প্রতিষ্ঠা আহ্বান জানিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ সমাপ্ত হয় ।

সভা সঞ্চালনায় ছিলেন ঢাকা মহানগর কমিটির উত্তর খান আহ্বায়ক কমিটি, আহ্বায়ক, গুলশান আরা।