নারী নেত্রী বুলা ওসমানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে অনলাইনে স্মরণসভা অনুষ্ঠিত

আপডেট: এপ্রিল ২১, ২০২১
0

বাংলাদেশ প্রয়াত নারীনেত্রী এবং সংগঠনের শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক বুলা ওসমানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে অনলাইনে স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। উক্ত স্মরণসভায় প্রয়াত নারী নেত্রীর উদ্দেশ্যে স্মৃতিচারণ করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম, রোকেয়া সদন সম্পাদক নাসরিন মনসুর, লিগ্যাল এডভোকেসী ও লবি পরিচালক এড. মাখছুদা আখতার লাইলী এবং প্রয়াত নারীনেত্রীর পরিবারের সদস্য পুত্র এশরার ওসমান সুমিত।

সভার শুরুতে প্রয়াত নেত্রীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। নীরবতা পালন শেষে সংগীত পরিবেশন করেন সংগীত শিল্পী বুলবুল ইসলাম। আবৃত্তি করেন বিশিষ্ট আবৃত্তিকার লায়লা আফরোজ। এছাড়াও সভায় সংগীত পরিবেশন করেন বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী এবং সংগঠনের সুহৃদ শারমিন সাথী ইসলাম এবং সংগীত শিল্পী ডা. সুস্মিতা আহমেদ।

সভায় প্রয়াত নারীনেত্রী এবং সংগঠনের শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক বুলা ওসমানের জীবনী পাঠ করেন সংগঠনের নির্বাহী কর্মকর্তা রুনু দাশ। তিনি বলেন মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের এই মুক্তিযোদ্ধা নারীনেত্রী ১৯৬৯-এর গণ-আন্দোলনসহ দেশের সকল প্রকার প্রগতিশীল আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যুক্ত থেকে কাজ করেছেন। বুলা আহমেদ বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের প্রতিনিধি হিসেবে শিশু কল্যাণ পরিষদের একজন সক্রিয় সদস্য হিসেবে নারী আন্দোলন সহ সকল প্রকার প্রতিবাদ আন্দোলনের সহযোদ্ধা ছিলেন। তাঁর প্রয়ানে নারী আন্দোলনের তথা বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের যে অপূরনীয় ক্ষতি সাধিত হয়েছে তা কখনো পূরন হবার নয়।

সভায় সংগঠনের নেত্রীবৃন্দ প্রয়াত বুলা ওসমানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তার উদ্দেশ্যে স্মৃতিচারণ করেন। তারা বলেন

বুলা ওসমান ব্যক্তিজীবনে একজন অতি সাধারণ,সরল এবং সাবলীল একজন মানুষ। নিজের মত জীবনকে উপভোগ করে গেছেন। তার জন্য স্মরণসভা আয়োজন করা অত্যন্ত বেদনাদায়ক এবং চিন্তাতীত। তিনি পারিবারিক পরিবেশ থেকে যেসকল মানবীয় গুণাবলি অর্জন করেন তা তিনি আমৃত্যু লালন করে গেছেন। নীরবে, নিভৃতে কাজ করেছেন। তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল চেতনার একজন ভালোবাসাপূর্ণ স্নেহশীল মানুষ। কারো সাথে যোগসূত্র যোগাযোগ তৈরি হলে তা সবসময় রক্ষা করতেন। মহিলা পরিষদের জন্য তিনি এক অমূল্য সম্পদ। তিনি একজন আদর্শ ও একনিষ্ঠ সংগঠক । তিনি প্রথমে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন পরে শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক হন। আবৃত্তি শিল্পী, গানের শিল্পী সকলের সাথে তার ছিলো নিবিড় যোগাযোগ এবং শ্রদ্ধাপূর্ণ সম্পর্ক।

বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সম্মাননা জানানো, তাদের সাথে যোগসূত্র তৈরির জন্য সকলকে সাথে নিয়ে যেতেন, যা সংগঠনের সামাজিক পরিচিতির ক্ষেত্রকে প্রসারিত করতে অনেক সহায়তা করেছে, সংগঠনকে ঋণী করেছে। তিনি সংগঠনের পক্ষ থেকে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটিতে প্রতিনিধিত্ব করেছেন, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাগুলোতে তিনি প্রতিনিধিত্ব করেছেন। শিক্ষাক্ষেত্রে আসা পশ্চাৎপদতা দূর করতে করণীয় সম্পর্কে কর্মসূচী গ্রহণ, স্কুল কলেজে যেয়ে শিক্ষার্থীদের সচেতন করার কর্মসূচী তিনি গ্রহণ করতেন। এই সকল কাজগুলোর পাশাপাশি তার শিল্পীসত্তার দিকটি টিও ছিলো উল্লেখযোগ্য। সংগঠনের শিক্ষা ও সংস্কৃতি সম্পাদক হিসেবে সাংস্কৃতিক কর্মসূচীকে সফল করতে সবাইকে নিয়ে কাজ করতে ভালবাসতেন, নিরলসভাবে মঞ্চের পেছনে থেকে কাজ করেছেন।সকল অনুষ্ঠানের সাংস্কৃতিক পর্বে নিজেকে সক্রিয়ভাবে যুক্ত রেখে কর্মসূচিকে সফল করতে সর্বাত্মকভাবে কাজ করে গেছেন।

সংগঠনের সাংস্কৃতিক কর্মসূচী বাস্তবায়নে তার অভাব অপূরণীয়। তিনি তার রেখে যাওয়া সুদীর্ঘ কর্মের মাধ্যমে সকলের মাঝে বেঁচে থাকবেন। সংগঠন তার অবদানকে সবসময় শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে।

স্মরণসভা আয়োজনের জন্য এশরার ওসমান সুমিত সংগঠনকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন মায়ের সাথে মহিলা পরিষদের সম্পর্ক যেন অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। সংগঠনের জন্য তার ভালবাসা ছিলো প্রবল। নির্দ্ধিধায় তিনি সংগঠনের জন্য কাজ করতেন। শেষ তিনমাসের মত যখন হাসপাতালে ছিলেন, তখন তাঁর মাঝে বেচে ওঠার আকুতি ছিলো অনেক। সবসময় অন্যদের খোঁজখবর করতেন। এসময় তিনি মহিলা পরিষদকে যেকোনো কাজে সহযোগিতা করার জন্য আহ্বান জানিয়ে বক্তব্য শেষ করেন।

সভাপতির বক্তব্যে সংগঠনের সভাপতি ডাঃ ফওজিয়া মোসলেম বলেন

করোনায় সংগঠন অনেক নিবেদিত সংগঠকদের হারিয়েছে, তার মধ্যে বুলা একজন। ৫০ বছরের জীবনের ইতিহাসে তার সাথে থাকা স্মৃতি আজকের স্মরণসভায় বলে শেষ করে যাবে না। বুলা আমাদের কাজের সাথে অনেকদিন ছিলেন। বুলার মত মানুষ মহিলা পরিষদের জন্য গৌরব। সাম্প্রদায়িক চেতনা, প্রগতিশীল মনোভাব এবং গণতান্ত্রিক চেতনায় উদবুদ্ধ থেকে যেভাবে তিনি মহিলা পরিষদকে ধারণ করেছেন তা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ । পরিবারের মধ্যে থেকেও নিজের আত্নসম্মানবোধ নিয়ে নিজের অস্তিত্বকে ধরে রাখার দিকটি তার মাঝে ছিলো প্রবল। সে সাধারণ হলেও তার অসাধারণ ব্যক্তিত্ববোধ, তার আদর্শবাদিতা আমাদের কাছে তাকে চিরস্মরণীয় করে রাখবে। সংগঠনের নিয়মিত সভা, সাংস্কৃতিক কর্মসূচী সহ সকল কর্মসূচী গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বুলার ওসমানের অভাব সংগঠন সবসময়ই অনুভব করবে।

অনলাইন স্মরণসভায় সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ, কর্মকর্তা এবং সাংবাদিক সহ প্রায় ৩০ জন উপস্থিত ছিলেন। সভা সঞ্চালনা করেন সাংগঠনিক সম্পাদক উম্মে সালমা বেগম।

উল্লেখ্য যে, নারীনেত্রী, সংগঠনের শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমানের সহধর্মিণী বুলা ওসমান গত ১৭ জানুয়ারি (রোববার) সকালে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। তিনি দীর্ঘদিন বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে

তাঁর বয়স হয়েছিল ৭০ বছর।