নাসিক নির্বাচনে মনোনয়ন দৌড়ে বাড়ছে আ’লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২১
0

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ :
সিটি কর্পোরশেন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক অঙ্গন।

একের পর এক নানা ইস্যু নিয়ে মেয়র আইভীর বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছে খোদ আওয়ামীলীগের একাংশ শামীম ওসমান পন্থিরা। উদ্দেশ্য একটাই আসন্ন নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন ঠেকিয়ে যে কোন মূল্যের বিনিময়ে নিজেদের পছন্দমত নেতাকে মনোনয়ন লাভে সহায়তা করা।

জেলা সদর , আড়াইহাজার, সোনারগাঁ এবং রূপগঞ্জ থানায় মেয়র আইভীরও ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। কারন আড়াইহাজার ও রূপগঞ্জের এমপি এবং সোনারগাঁয়ের সাবেক এমপির সাথে মেয়র আইভীর বেশ ভালো সম্পর্ক রয়েছে। ফলে ফতুল্লা ছাড়া বাকী সব জায়গায়ই পৃথক পৃথক ভাবে পালন করা হচ্ছে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচি।
অপরদিকে ওসমান পরিবার ঘোষনা দিয়ে পোষ্টারিং করে বিভিন্ন জায়গায় সভা সমাবেশ করছে।

এভাবেই সিটি কর্পোরেশনের আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরকার দলীয় প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের নোংরা রাজনীতি খেলায় মেতে উঠেছে বলে আইভীপন্থীরা জানিয়েছে।

কারন হিসেবে তারা বলেছে, নারায়ণগঞ্জের জাতীয় সংসদের প্রধান দুটি আসন-৪ ও ৫ এর মধ্যে সরকারী প্রতিষ্ঠানসহ সমস্ত কিছু ওসমান পরিবারের দখলে থাকলেও দীর্ঘদিন হাতছাড়া রয়েছে সিটি করপোরেশন। তাই তারা এবার কোমড়ে গামছা বেধে মাঠে নেমেছে আইভীকে ঠেকাতে।

আসন্ন নাসিক নির্বাচনে মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক এডভোকেট খোকন সাহা নিজেই আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। অপরদিকে মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ও নাসিক মেয়র আইভীর সাফ কথা, দলীয় মনোনয়ন না পেলে তিনি নির্বাচন করবেন না। মনোনয়নের মালিক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী শেখ হাসিনা।

দলের যে কেউ মনোনয়ন চাইতে পারেন। এটা তার অধিকার। কিন্তু দলীয় মনোনয়নের আশায় নারায়ণগঞ্জে এখন চলছে নোংরা রাজনীতি। বিষয়টি নিয়ে তিনি খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে নালিশ জানাবেন। এখন যা হচ্ছে তা আমার ক্ষতির চাইতে দল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বেশী। নগরবাসীরা এখন বিরক্ত। মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে সাধারন ভোটারা।

নির্বাচন যতো এগিয়ে আসছে ততোই বাড়ছে এই জেলায় আওয়ামী লীগের আভ্যন্তরিন কোন্দল। এরই মাঝে মেয়র আইভীর বিরুদ্ধে শহরের জিউস পুকুর ইস্যুতে লেলিয়ে দেয়া ওসমান পন্থি হিন্দু সম্প্রদায় আন্দোলন করছে।

মেয়র আইভীর পূর্ব পুরুষদেরকে দখলবাজ প্রমান করার চেষ্টা চলছে। যদিও মেয়র আইভীর পরিস্কার বক্তব্য হলো, প্রায় চল্লিশ বছরের অধিক সময় আগে জিউস পুকুরের অংশ কিনেছিলো তার নানা। তাতে তার কোনো সম্পৃক্ততা ছিলো না। কিন্তু এই ইস্যুতে তাকে তুলোধুনো করে বক্তব্য রাখছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসনাত শহীদ বাদল এবং মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট খোকন সাহাসহ এই বলয়ের নেতাকর্মীরা।

তবে আইভী সমর্থকরা মনে করেন বিগত নির্বাচনের মতোই এবারের এই নির্বাচনেও তার মনোনয়ন ঠেকানোর চেষ্টা চলছে, তবে আগামী নির্বাচনে পরিস্থিতি কি হবে সেটা এখনই বলা না গেলেও আগামী দিনগুলিতে যে এই বিরোধ আরো বাড়বে এটা অনেকটাই অনুমেয়।

এদিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ শুরু থেকেই দুই ভাগে বিভক্ত। এক ভাগ এমপি শামীম ওসমান পন্থী ও আর এক ভাগ নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডাক্তার সেলিনা হায়াৎ আইভীপন্থী। তবে জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে শামীম ওসমান নেই।

মেয়র আইভী এই কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি। কিন্তু জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই এবং সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ বাদল শামীম ওসমানের অনুসারী। তাদের সঙ্গে আরো অনেকে রয়েছেন।

ওদিকে মেয়র আইভীর নেতৃত্বে রয়েছেন সহ-সভাপতি আবদুল কাদির, আরজু রহমান ভুইয়া, সাবেক পিপি আসাদুজ্জামান, যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, আওয়ামীলীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য এডভোকেট আনিসুর রহমান দিপু এবং সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সুফিয়ানসহ আরো অনেকে। জেলা আওয়ামী লীগের এই কমিটি শুরু থেকেই পৃথকভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। প্রথম দিকে সভাপতি আবদুল হাই দুই গ্রুপের মাঝে সমন্বয় করার চেষ্টা করলেও পরে তিনি পূরোপূরি শামীম ওসমান বলয়ে চলে যান।

অপরদিকে নারায়ণগঞ্জ জেলার পাঁচটি নির্বাচনী এলাকার সাতটি থানার মাঝে প্রায় সব থানায় কম বেশি শামীম ওসমানের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগে শামীম ওসমানের একচ্ছত্র প্রভাব বিরাজ করছে। এই থানায় মেয়র আইভীর তেমন কোনো প্রভাব নেই।