নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ের আগ পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরব না নিশ্চিত—–আবু নাসের মো. রহমত উল্লাহ

আপডেট: সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২২
0

কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী সদস্য , জাতীয়তাবাদী স্বাধীনতা ফোরামের সভাপতি আবু নাসের মো. রহমত উল্লাহ বলেছেন , ”নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ের আগ পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরব না এটা নিশ্চিত। এখন যে পর্যায়ে এসেছে এবং দেশের মানুষ দিশেহারা অবস্থায় রাজপথে নেমে এসেছে। জনগন যখন রাজপথে নেমে আসে তখন সেটা বড় আকারে দৃশ্যমান হয়ে উঠে। এখন যেমন জেলা উপজেলা থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সেটা ছড়িয়ে পড়েছে। যে আন্দোলনে জনসম্পৃক্ততা যত প্রবল হয় সে আন্দোলন ততটাই সফল হয়। জনকল্যানের রাজনীতিতে জনগনের অংশগ্রহনের মধ্য দিয়েই এর ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠিত হয়।”
জনপ্রিয় অনলাইন পোর্টাল দেশ জনতা ডটকমকে দেয়া একান্ত সাক্ষাতকারে তিনি এসব কথা বলেন।

কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী সদস্য , জাতীয়তাবাদী স্বাধীনতা ফোরামের সভাপতি আবু নাসের মো. রহমত উল্লাহকে রাজপথের সংগ্রামী নেতা। তার স্বাধীনতা ফোরামকে নিয়ে বিএনপির জন্য রাজপথেই নিরন্তর সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। রাজপথে থেকে সংগ্রাম বন্ধ করতে আবু নাসের মো. রহমত উল্লাহকে ২০১৫ সালে ২১ জানুয়ারি দুপুর পৌনে ২টার দিকে লালমাটিয়ার বাসা থেকে তাকে পুলিশ গ্রেফতারও করেছিলো তাকে ।

এবার জনপ্রিয় অনলাইন পোর্টাল দেশ জনতা ডটকমের মুখোমুখি হলেন তিনি। অনলাইনের নির্বাহী সম্পাদক ডা.জাকারিয়া চৌধুরী এ সাক্ষাতকার গ্রহন করেন। সাক্ষাতকারটি হবুহু দেশ জনতা রডটকমের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো————

ডা . জাকারিয়া : বিএনপি অবশেষে রাজপথে এলো। বলা যায় পূর্ণ উদ্যমেই এলো। কথা হচ্ছে, ইজ ইট টু লেইট টু প্রটেষ্ট এগেইন্সট দিস রেজিম ?

রহমাতুল্লাহঃ না। বিএনপি আন্দোলনেই ছিল আছে থাকবে। আন্দোলনের গতি প্রকৃতি একেক সময়ে একেক রূপ লাভ করে। আন্দোলন কখনো কথাবার্তার মাধ্যমেও পক্ষ বিপক্ষের মাধ্যমে শুরু হতে পারে, মত বিনিময়ের মাধ্যমে হতে পারে, সেটা-ই গতিশীল হয়ে রাজপথে আসে। মিছিল থেকে মিছিলের মাধ্যমে সেটা বেগবান হতে পারে। অর্থাৎ আন্দোলন একেক সময় একেক রূপে তার গতি বাড়ে বা কমে। শুরু থেকেই বিএনপি আন্দোলনে আছে। এখন যে পর্যায়ে এসেছে এবং দেশের মানুষ দিশেহারা অবস্থায় রাজপথে নেমে এসেছে। জনগন যখন রাজপথে নেমে আসে তখন সেটা বড় আকারে দৃশ্যমান হয়ে উঠে। এখন যেমন জেলা উপজেলা থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সেটা ছড়িয়ে পড়েছে। যে আন্দোলনে জনসম্পৃক্ততা যত প্রবল হয় সে আন্দোলন ততটাই সফল হয়। জনকল্যানের রাজনীতিতে জনগনের অংশগ্রহনের মধ্য দিয়েই এর ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠিত হয়।

সাধারন জনতার চোখ কি দেখছে বলে মনে করেন ? যেমন বিএনপি চেইন আন্দোলনে অতীতে যতবার যেতে চেয়েছে ততবারই সরকার হামলা মামলা চালিয়েছে। পাচ সাতটা খুন গুম, বাড়ি বাড়ি পুলিশের তল্লাসী, পরিবার পরিজনদের হুমকি ধামকি দেয়, প্রকাশ্য রাজপথে গুলি করছে। আন্দোলন কিছুটা হলেও ড্রপ ডাউন করে। আমরা ২০১৩ সালের আন্দোলনে ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতির শিকার হয়েছি বাট আন্দোলন কিন্তু সফল ছিল। তারপর থেকে বিএনপি সেভাবে আর ফিরতে পারেনি ।আপনার কি মনে হচ্ছে পারছে না কেন?

রহমতউল্লাহ : পারছে না !! কথা সেটা না । বললাম না বিএনপি শুরু থেকেই আন্দোলনে ছিল এবং আছে। আন্দোলনের নানান রুপ আছে, গতি আছে এবং অবশ্যই সেটা কন্ডিশনের উপর নির্ভর করে কখনো বেগবান হয় আবার কখনো শ্লথ হয়। একটা সফল আন্দোলন কিন্তু এক দুই দিনের বিষয় নয়। নেলসন ম্যান্ডেলার কথাই ধরুন না। তিনি কি সাউথ আফ্রিকা বা গনতন্ত্রকামী বিশ্বের সবচে আরাধ্য পুরুষ ছিলেন না ? তাকেও ২৭ বছর জেলের কুঠুরিতে থাকতে হয়েছে। তারপর জেল থেকে বের হয়েছেন রাজমুকুট নিয়ে। ফলে আন্দোলন কখনো কখনো নিয়ন্ত্রন করতে হয় আবার কখনো বেগবান হয়। মনে রাখতে হবে বিএনপি লাশের রাজনীতি করে না। বরং বিএনপি চায় একটা অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন। আর সেজন্য একটা বৃহত্তর প্ল্যাটফর্ম গড়ে উঠছে যার মাধ্যমে দেশে অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে রাজপথে নেমেছি। সে দাবি আদায়ের আগ পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরব না নিশ্চিত।

লাশের মিছিল আবারও শুরু হলো। সাম্প্রতিক ঘটনা গুলো পরপর সাজালে সেটাও কিন্তু দৃশ্যমান হয়েছে এবং সরকারী আগ্রাসন থামানোর উপায় কি আছে??কোন পদ্ধতিতে থামাতে পারেন??

রহমত উল্লাহ : হ্যা বিষয়টা স্পষ্ট। আগেও বলেছি বিএনপি লাশের রাজনীতি করে না। এখন একটা খুন হলে আরেকটা খুন যেন না হতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখাও একটা দায়িত্বশীল দলের অবশ্য কর্তব্য। লাশের রাজনীতি যারা করে তারা ভিন্ন গোত্রে বসবাস করে। বিএনপিকে তাদের চোখ দিয়ে দেখা যাবে না।

প্রশ্ন : আন্দোলনে তরুণরা সামনের সাড়িতে চলে আসছে ,তরুণদের প্রাধান্য দিয়ে সারাদেশে বিএনপি তার অংগ ও সহযোগী সংগঠন গুলোতে নেতৃত্ব ঢেলে সাজাচ্ছে বলে মনে হয়।

রহমত উল্লাহ : বারো বছর আগের প্রেক্ষাপট আর আজকের প্রেক্ষাপট এক নয়। তখন যারা যুবক ছিল তারা সবাই যে রাজনীতিতে পরিপক্ক ছিল তা বলা যাবে না। রাজনীতিতে অভিজ্ঞতা একটা বিশাল ফ্যাক্টর। এর কোনোও বিকল্প নেই। একটা লেভেল স্ট্যান্ডার্ড ম্যাচুরিটি ছাড়া চাইলেই সব কিছু আমুল বদলে ফেলা যায় না। ধরুন আপনি নিজেই বারো বছর আগে যে ভাষায় কথা বলেছেন আজ কিন্তু সে ভাষায় কথা বলছেন না। পলিটিক্সে মাঝে মধ্যে জেনারেশন গ্যাপ তৈরী হয়। সেক্ষেত্রে তরুণ তুর্কী উঠে আসার আগ পর্যন্ত চাইলেই আমুল বদলে ফেলা যায় না। একটা টাইমের অপেক্ষায় থাকতে হয়। নবীন প্রবীনের সমন্বয়ে একটা সফল আন্দোলনের ফসল আসে। রাজনীতিতে কোন অংশকে বাদ দিলে এর পুর্নতা পায় না। ফলে এখন দলকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে সমন্বিতভাবে। বিভিন্ন কারনে আগের অনেক কমিটির পুনর্বিন্যাস প্রায় স্থবির ছিল হয়তো কিন্তু বন্ধ ছিল না। এখন যখন বিন্যাস শুরু হয়েছে অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবেই সাবেক ছাত্র নেতারা বিভিন্ন পদে আসছে। এটাই স্বাভাবিক এবং চলমান একটা প্রক্রিয়া। কোন নির্দিষ্ট দিক বা যুবকদের কথা যে বললেন ব্যাপারটা সেরকম নয়। বলা যায় সাবেক ছাত্র নেতারা এখন সিনিয়র হয়েছে এবং যোগ্যতাবলে নতুন নতুন পদে আসছে।

প্রশ্ন : রিলায়েবল এবং সাসটেইনেবল একটা ফরেন উইংস, মিডিয়া সেলের দাবি আমরা করে আসছি সেই ২০১২-১৩ সাল থেকে। পৃথিবী ভার্চ্যুয়াল যুগে প্রবেশের পরপরই এর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছি। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এসবের গুরুত্ব অনুধাবনে বিএনপি লেট করেছে। ২০১৬ সালে এর তার হাতে পায়ে ধরে যে বিএনআরসি দিয়ে বিএনপির ভার্চ্যুয়াল প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ করে। আজকের মিডিয়া সেল এবং উইং তার আউটপুট… এর বিশাল ফল এখন বিএনপি হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করছে। দেশের মানুষ এক ক্লিকেই দিনের যাবতীয় ঘটনা প্রবাহ জানতে পারছে। এ যাত্রাটা ছিল অবৈতনিক। তবু চেয়েছি হোক। রাস্তার হকারদের কাছ থেকে দুপুরের খাবার খেয়ে কাজ করে গেছি……… এখন এসব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ঠিক কিন্তু আমাদের চোখের পানি কেউ মুছে দেয়ার কথাও ভাবেনি ???

রহমতউল্লাহ : এটা নিয়ে দুঃখ পুষে রাখার কিছু নেই। দলটা স্বাধীন মত প্রকাশের সুযোগ তার জন্মলগ্ন থেকেই রেখে এসেছে। বিএনপির সাথে মিডিয়ার সম্পর্ক বরাবরই ছিল। উইংসও ছিল। হয়তো এতোটা বৃহৎ পরিসরে ছিল না। যে দলে গনতন্ত্রের চর্চা স্বাধীন সেখানে বহু ভিন্ন ভিন্ন মত পথের প্রস্তাবনা আসে। এর জন্য নানান যাচাই বাছাইয়ের প্রয়োজন আছে। বিএনপি লেট করেছে বলে মনে করিনা। এটা সত্য যে ভার্চ্যুয়াল ওয়ার্ল্ডে বিএনপিকে টেনে এনেছে বিএনপির ছেলেরাই। শাহবাগ আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার যে ফ্যাসিজমের যাত্রা শুরু করেছিল তা এক পর্যায়ে একদল নিবেদিত মানুষের কারনেই এক সময় থামিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছিল সরকার। যুগে যুগে দেখা গেছে দেশের ক্রাইসিসে কেউ না কেউ এগিয়ে আসে। সেনাকর্তা হয়েও জিয়াউর রহমান যেমন বাংলাদেশকে বিলং করেছেন। হেরে গেলে তার ফাসি হত নিশ্চিত জেনেও……… এভাবেই পরিবর্তন আসে। সে সময়ের আন্দোলন থেকে বিএনপি যেমন শিক্ষা গ্রহন করেছে তেমনি সরকারও মেসেজ পেয়েছে। তারা বুঝেছে দেশটা তাদের একার নয়। জাতির জনয এ যুদ্ধের প্রয়োজন ছিল।

প্রশ্ন : ধারাবাহিকভাবে সর্বত্র আন্দোলনে নেমেছে। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সে আন্দোলনের অগ্নিশিখা ছড়িয়ে পরেছে। সাধারন জনগন রাস্তায় নেমে গেছে। রিক্সাওয়ালারাও রিক্সা থামিয়ে নেতাদের কথা শুনছে। আন্দোলনের সাথে প্রায় সব শ্রেনী পেশার মানুষ যুক্ত হয়ে পরেছে। আপনি কি মনে করেন, এবারের আন্দোলনে এই বিষফোড়া গলবে ?

রহমত উল্লাহ : গলবে মানে কি ! এ সরকার পালাবার পথও খুজে পাচ্ছে না। দুনিয়ার কোথাও ফ্যাসিস্ট সরকার আজীবন টিকে থাকেনি। ইতিহাসে এর ভুরি ভুরি উদাহরন রয়েছে। এ আন্দোলন সফল হবে। এ সরকার ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবে। মনে রাখতে হবে, শহীদের রক্ত দুনিয়ার কোথাও বিফলে যায়নি। আজ কাল পরশু এ সরকারকে যেতেই হবে। তাদের পায়ের তলে শুণ্যতা ছাড়া কিছু নেই। হম্বিতম্বি ধমক ধামক কিংবা খুন রাহাজানি করে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে পারবে না। জুলুম নিপিড়নের মাধ্যমে নিজেদের ঝুলিতে নিজেদের পাপ-ই কেবল জমা করছে। তাদের প্রতিটা কান্ডের পাই পাই হিসেব নেয়া হবে। এদেশের মাটিতে আবার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হবে। অপরাধীদের তালিকা ধরে ধরে বিচার করা হবে। নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন সুদিন আসছে। এ দেশ জনগনের। এখানে আবার জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে। হতাশা বা নিরাশার কিছু নেই। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। কামান রাইফেলের শক্তি জনশক্তির চেয়ে বড় নয়।

আপনাকে ধন্যবাদ।
রহমত উল্লাহ: আপনাকেও ধন্যবাদ।