নিরব পথযাত্রা : দানবীয় সরকারকে সরে যেতে বাধ্য করব— মির্জা ফখরুল

আপডেট: জানুয়ারি ২৮, ২০২৩
0

গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের ১০ দফা দাবিতে রাজধানীর বাড্ডা থেকে মালিবাগের আবুল হোটেল পর্যন্ত সোয়া চার কিলোমিটার পথ ‘নিরব পথযাত্রা’ করেছে বিএনপি।

শনিবার দুপুর আড়াইটায় বাড্ডার সুবাস্তু টাওয়ারের সামনের সড়ক থেকে পদযাত্রা শুরু হয়ে বিকাল ৪টার দিকে মালিবাগ আবুল হোটেলের সামনে এসে শেষ হয়। নেতা-কর্মীদের হাতে ছিলো সরকার পদত্যাগ, দ্রব্যের পণ্যমূল্য বৃদ্ধির লেখা সম্বলিত বিভিন্ন প্লাকার্ড এবং জাতীয় ও দলীয় পতাকা। নেতা-কর্মীদের মুখে ছিলো না কোনো শ্লোগান।

এই পথযাত্রা কর্মসূচির উদ্বোধন করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘ আজকে আমরা এক নতুন আন্দোলন শুরু করলাম। এই সংগ্রামের মধ্যে ঢাকা শহরে এই নিরব যাত্রার মধ্য দিয়ে, এই নিরব প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে আমরা জনগনকে সঙ্গে নিয়ে এই ভয়াবহ দানবীয় সরকারকে সরে যেতে বাধ্য করব।”

‘‘ আসুন, এই পদযাত্রার মধ্য দিয়ে এই সরকারকে জানিয়ে দিতে চাই- আর কাল বিলম্ব না করে অবিলম্বে পদত্যাগ করুন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা দিন এবং নতুন নির্বাচনের মাধ্যমে জনগনকে তার ভোটের অধিকার প্রয়োগ করবার ক্ষমতা দিন।”

‘অন্যথায় আপনাদেরকে অত্যন্ত ভারাক্রান্তভাবে চলে যেতে হবে, আপনাদের পালাবার পথ খুঁজে পাবেন না’ বলেও সরকারকে হুশিয়ারি দেন বিএনপি মহাসচিব।

পথযাত্রাপূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, সদস্য সচিব আমিনুল হক বক্তব্য রাখেন। পরে মহাসচিব নেতাদের নিয়ে পদযাত্রা শুরু করেন।

পথযাত্রায় মীর সরাফত আলী সপু, নাজিম উদ্দিন আলম, তাবিথ আউয়াল, মুন্সি বজলুল বাসিত আনজু, সাইফুল আলম নিরব, মীর নেওয়াজ আলী, বাবুল আহমেদ, আবদুল আলিম নকি, এজিএম শামসুল হক, মোনায়েম মুন্না,এসএস জিলানি, রাজিব আহসান, জাকির হোসেন রোকন, আবদুর রহিম, মোস্তাফিজুল করীম মজুমদার, মোঃ মোস্তফা জামান, কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ প্রমূখ নেতারা অংশ নেন।

মহানগর বিএনপি রাজধানীতে যে চারটি স্থানে পদযাত্রার কর্মসূচির ঘোষণা করেছে এটি তার প্রথমটি। সোমবার হবে যাত্রাবাড়ী থেকে শ্যামপুর, মঙ্গলবার গাবতলী টার্মিনাল থেকে মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বর এবং বুধবার মুগদার থেকে মালিবাগ। সবগুলো কর্মসূচি শুরু বেলা ২টায়।

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির উদ্যোগে বেলা ২টায় উত্তর বাড্ডার সুবাস্ত টাওয়ারের সামনের সড়কে বিএনপির নেতা-কর্মীরা সমবেত হয়ে এই পদযাত্রা শুরু করে। শেষ হয় মালিবাগের আবুল হোটেলের কাছে।

মহানগর উত্তর বিএনপি, যুব দল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্র দলসহ কয়েক হাজার নেতা-কর্মী বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে ‘নিরব’ পদযাত্রার এক কর্মসূচিতে অংশ নেয়। পদযাত্রাটি বাড্ডা, মধ্য বাড্ডা, মেরুল বাড্ডা, রামপুরা, চৌধুরী পাড়া প্রভৃতি স্থান অতিক্রম করে বিকাল ৪টায় মালিবাগ আবুল হোটেলের কাছে এসে শেষ হয়।

দেশের অবস্থা তুলে ধরে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘ আমাদের চালের দাম বেড়ে গেছে, আমাদের ডালের দাম বাড়ছে, আমাদের ডিমের দাম বেড়ে গেছে, তেলের দাম বেড়েছে, লবনের দাম বেড়ে গেছে। এই যে রিকশা শ্রমিক ভাইয়েরা, কারাখানার শ্রমিক ভাইয়েরা তারা এখন জীবন-যাপন করতে পারছে না। তারা চাল-ডাল-তেল লবন কিনতে পারছে না। বাচ্চাদের ডিম দিতে পারছে না।”

‘‘ শুধু তাই নয়, আজকে কথা বলতে গেলে গ্রেফতার করা হয়, প্রতিবাদ করতে গেলে মামলা হয়, মিথ্যা মামলা-গায়েবি মামলা দিয়ে সমস্ত বিরোধী দলকে আটক করে রাখা হচ্ছে। সমগ্র দেশকে এরা(সরকার) একটা কারাগারে পরিণত করেছে। আমরা কী এটা মেনে নেবো?”

তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘‘ আমাদের ভোটের অধিকার কি আছে? আমাদের ভোটের অধিকার নাই। সেই অধিকার আমাদেরকে ফিরিয়ে আনতে হবে, আমাদেরকে কথা বলার অধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে, আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তিনি এদেশের মানুষের অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য সারাজীবন সংগ্রাম করেছেন-লড়াই করেছেন, এখনো যিনি গৃহবন্দি হয়ে আছেন, তাকে মুক্তি করবার জন্য।”

‘‘ আমাদের নেতা তারেক রহমান তিনি মিথ্যা মামলায় সুদূরে নির্বাসিত হয়ে আছেন তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। আমাদের ৩৫ লক্ষ মানুষের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা মামলা তাকে প্রত্যাহার করতে হবে, যারা কারাগারে আছেন তাদেরকে মুক্ত করতে হবে,দেশে ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।আমার ভোটের অধিকার, আপনার ভোটের অধিকার। সেজন্য আমরা বলেছি, এই সরকার ক্ষমতায় থাকলে কোনো দিন সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। সেই কারণে আওয়ামী লীগ সরকারকে, শেখ হাসিনার সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, এই সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে হবে….।

ঢাকার সবচেয়ে ব্যস্ততম এই সড়কের পথযাত্রা শুরুর আগ পর্যন্ত যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখে নেতা-কর্মীরা। তবে পথযাত্রা শুরু হলে একদিকের সড়কের নেতা-কর্মীদের ‘নিরব’ মিছিলে ব্যাপক যানজট সৃষ্ট হয়। অনেক যাত্রী পায়ে হেঁটে গন্তব্যে যায়।

কারণ পথযাত্রার সামনেও ব্যাপক যানবাহন ধীর গতিতে চলায় পথযাত্রাও থেমে থেকে চলতে হয়েছে।

পথযাত্রার এই কর্মসূচি উপলক্ষে বাড্ডা-মালিবাগ সড়কে ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করা হয়।