নির্বাচনী মাঠ থেকে বিরোধী দলকে সরিয়ে দিতে সরকার ‘ভয়াবহ মহাপরিকল্পনা নিয়েছে—- মীর্জা ফখরুল

আপডেট: মে ৩১, ২০২৩
0

নির্বাচনী মাঠ থেকে বিরোধী দলের নেতাদের সরিয়ে দিতে সরকার ‘ভয়াবহ মহাপরিকল্পনা’ নিয়ে মাঠে নেমেছে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বুধবার দুপুরে নয়া পল্টনে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব এই অভিযোগ করেন।

তিনি বলেন, ‘‘ মৃত্যু যখন ঘনিয়ে আসে, যখন আর কোনো আশা থাকে না তখন অনেকেই চেষ্টা করেন যে, কোনো রকমের কোন কিছু ধরে যদি টিকে থাকা যায়। আজকে বিরোধী দলের নেতৃবৃন্দকে সাজা দেয়ার এই যে রায়, এই রায় হচ্ছে তাদের সেই পরিকল্পনা, যে পরিকল্পনায় বাংলাদেশের রাজনীতিকে একেবারে তিরোহিত করা, বিরাজনীতিকরণ করা, রাজনীতিবিদদের রাজনীতির মাঠ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়া, সরিয়ে আবার যদি এককভাবে পার হওয়া।”

‘‘ এই যে ভয়াবহ পরিকল্পনা নিয়ে তারা(সরকার) মাঠে নেমেছে…কিছুদিন আগেও আমরা বলেছি এই কথাগুলো। আমাদের কানে এসেছে যে, প্রায় সাড়ে ১৩‘শ মামলা চিহ্নিত করা হয়েছে, যে মামলাগুলো নির্বাচনের পূর্বেই তারা শুনানি করে সব শেষ করে সাজা দিয়ে দেবে। তার সবগুলো হচ্ছে রাজনৈতিক মামলা মামলা। প্রত্যেকটি মামলার আসামী হচ্ছেন বিএনপিসহ বিরোধী দলের শীর্ষ নেতারা…।”

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ এটা তাদের(সরকার)অত্যন্ত চমতকার উদ্দেশ্যে। এদেরকে(বিরোধী দলের নেতাদের) যদি আটক করে ফেলা যায়, সাজা দিয়ে দেওয়া যায় তাহলে তাদের কথা মতো এরা তো নির্বাচন করতে পারবে না।”

‘‘ সব সময় সেই সংবিধানের উল্লেখই তারা করছে যে সংবিধান তারা তৈরি করেছে, ১৯৭২ সালে সেই সংবিধান পরবর্তিকালে জনগনের যেটুকু এমেন্ডমেন্ট হয়েছে সেগুলো বাদ দিয়ে তারা নিজেরা শুধু ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য যে সংবিধানকে কাটা-ছেঁড়া করে তাদের মতো করে নিয়েছে সেই সংবিধান অনুযায়ী তারা একদম একা খেলার মাঠে খেলবেন আর গোল দিয়ে যাবেন। যেটাকে আমরা বলি যে, প্রতিপক্ষ কেউ থাকবে না। ওই লক্ষ্যে তারা যাচ্ছে, এগুচ্ছে।”

দুর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক আয় বর্হিভুত মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার সহধর্মিনী জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে মামলার শুনানি এবং দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান তার সহধর্মিনী সাবেরা আমানকে সাজা প্রদান প্রতিবাদ জানাতে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন ডাকেন বিএনপি মহাসচিব।

‘তারেক-জোবাইদার মামলার প্রসঙ্গে’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘গতকাল আদালতে ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে যেটা আমি মনে করি এদেশের বিচার ব্যবস্থার উপরে সবচেয়ে বড় কফিন একটা পেরেগ ঠুকে দেয়া হয়েছে।সেটা হচ্ছে যে, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ২০০৭ সনে। এতো ধরে এই মামলা চলে নাই। হঠাত করে দেখা গেলো যে, দ্রুত মামলার শুনানি শুরু হয়েছে…. তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো সুযোগ দেয়া হয়নি। এখন অতি দ্রুত প্রতিদিন একজন-দুইজন-তিনজন সাক্ষী হাজির করা হচ্ছে এবং তাদের রাত পর্যন্ত সাক্ষ্য নেয়া হচ্ছে।”

‘‘ এই বিষয়গুলো নিয়ে যখন আমাদের আইনজীবীরা ঢাকার কথা বলতে চেয়েছিলেন বিশেষ আদালতে তখন তাদেরকে সেখানে কথা শুধু বলতেই দেয়া হয়নি তা নয়, তাদেরকে সরকারি দলের আইনজীবীরা আক্রমন করেছে, তাদেরকে আহত করেছে এবংকি পুলিশ সেখানে বেআইনিভাবে প্রবেশ তাদেরকে নির্যাতন করেছে। এরপরে আমরা কিভাবে বলব, এই দেশে একটা গণতান্ত্রিক নির্বাচন হওয়ার সুযোগ আছে? এদেশে কিভাবে বলব যে, বিরোধী দলের এখানে রাজনীতি করার, মানুষের ভোট দেয়ার অধিকার, সাংবাদিকদের লেখার অধিকার আছে?”

‘আমরা পরিস্কার করে বলতে চাই, এসব মামলা-মোকাদ্দমা দিয়ে জগনের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পাবার যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, ফ্যাসিবাদকে পরাজিত করবার যে আন্দোলন শুরু হয়েছে….. এই আন্দোলনকে মামলা-মোকাদ্দমা দিয়ে বন্ধ করা যাবে না্’- হুশিয়ার উচ্চারণ করেন।

তিনি বলেন, ‘‘ জনগন জেগে উঠেছে, জনগনের উত্থানের মধ্য দিয়ে তাদেরকে সরে যেতে হবে, পরাজিত হতে হবে এবং পরিস্কার ভাষায় আবারো বলতে চাই, একটি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তত্ত্ববধায়ক সরকার ছাড়া এদেশে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হওয়া সম্ভব নয়।”

‘‘ সেই কারণেই আমরা বলতে চাই যে, এখনো সময় আছে। এই সমস্ত খেলাধূলা বাদ দেন, এই সমস্ত মানুষকে প্রতারনা করবার পথ থেকে সরে গিয়ে, মানুষকে নির্যাতন করবার পথ থেকে সরে এসে সোজা পথ ধরেন…. একটা নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন এবং দেশে সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন।”

ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও আমান উল্লাহ আমান ও তার স্ত্রী সাবেরা আমাদের বিরুদ্ধে মামলার দায়েরের কঠোর সমালোচনা করেন বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ উদ্দেশ্য একটাই সাজা দিয়ে আমাদের নেতৃবৃন্দকে নির্বাচন থেকে বিরত রাখা।”

একই ধরনের মামলায় আওয়ামী লীগের নেতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, মহিউদ্দিন খান আলমগীর ও মোহাম্মদ নাসিমের(প্রয়াত) মামলায় তাদেরকে আদালত খালাস দেয়ার কথাও তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।

ঢাকা মহানগরে স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্‌চ চন্দ্র রায়, আবদুস সালাম, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মহানগর দক্ষিনের সদস্য রফিকুল আলম মজনু, কেরানিগঞ্জে নিপুণ রায় চৌধুরী, চট্টগ্রামে ডা. শাহাদাত হোসেনসহ সারাদেশের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের ঘটনার পরিসংখ্যান তুলে ধরেন ফখরুল।

‘‘ এভাবে তারা(সরকার) মিথ্যা মামলা দায়ের করে গোটা দেশে ভয়-ত্রাস এবং একটা নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চায়। এই নৈরাজ্য সৃষ্টি করার মধ্য দিয়ে তারা একই কায়দায় এককভাবে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে চায় যেটা এদেশের মানুষ এটা হতে দেবে না। এদেশের মানুষ তাদের বিতারণ করেই নির্বাচন করবে।”

দলের আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, ‘‘ রাজনীতির কারণে আইন মন্ত্রণালয়ের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধায়নে সংশ্লিষ্ট আদালত এই মামলা(তারেক রহমান ও জোবাইদা রহমান) তাড়াতাড়ি নিষ্পত্তি করার জন্য দিনে তিন-চার জনের সাক্ষী নিচ্ছেন। আপনারা শুনে অবাক হবেন যে, সন্ধ্যার পরে রাতেও এই মামলার সাক্ষী চলছে….। আমরা মনে করি সংশ্লিষ্ট আদালত সরকারের রাজনৈতিক ইচ্ছা বাস্তবায়ন করার জন্য বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেব ও উনার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানকে তড়িঘড়ি করে তাদের বিরুদ্ধে রায় দেয়ার জন্য উনি উঠে পড়ে লেগেছেন।”

‘‘ এই অবস্থায় আমরা শুধুমাত্র উদ্বিগ্ন নই, আমাদের কাছে মনে হচ্ছে গোটা বিচার ব্যবস্থাকেই বিএনপির নেতৃত্ব তথা বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদেরকে ব্যবহার করা হচ্ছে। আমরা মনে করি, দেশের সর্বোচ্চ আদালত এবং এই আদালতের অভিভাবক মাননীয় প্রধান বিচারপতি মহোদয় উনার দৃষ্টি আকর্ষন করবো… অনতিবিলম্বে হস্তক্ষেপ করুন।বিচারের নামে আজকে প্রহসন চলছে, বিচারের নামে আজকে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদেরকে বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ও তাদের বিরুদ্ধে রায় দেয়া হচ্ছে।”

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, আবদুল আউয়াল মিন্টু, শামসুজ্জামান দুদু, নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, কেন্দ্রীয় নেতা শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, আবদুস সালাম আজাদ, মীর সরাফত আলী সপু, কায়সার কামাল, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, আসাদুল করিম শাহিন, জয়নুল আবেদীন মেজবাহ, এম এ খালেক আমিনুল হক, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।