নির্লজ্জভাবে দূতাবাসকে মিথ্যাচারে ব্যবহার করা হচ্ছে: ফখরুল

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২২
0

বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোকে সরকার দলীয় অপপ্রচারের কাজে ব্যবহার করেছে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

ওয়াশিংটন-ব্রাসেলসসহ কয়েকটি দূতাবাসের সাম্প্রতিকালের অপেশাদারি কর্মকান্ডের তথ্য তুলে ধরে বুধবার বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব এই অভিযোগ করেন।

তিনি বলেন, ‘‘ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে ধবংস করার চলমান অপততপরতার সর্বশেষ প্রমাণ হচ্ছে, বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস ক্যাডার সমন্বয়ে গঠিত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দলীয় ততপরতা। পৃথিবীর দেশে দেশে বাংলাদেশের স্বার্থ সুরক্ষা দেয়াই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সকল দূতাবাসের দায়িত্ব। জনগনের ট্যাক্সের টাকায় ওইসব দূতাবাসের সকল ব্যয় রাষ্ট্র বহন করে এবং জনগনের ট্রাক্সের টাকায়ই সকল দূতাবাসের কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বেতন বহন করা হয়।”

“ অথচ কি নির্লজ্জ ও অপেশাদার উপায়ে সেই প্রতিষ্ঠানকেও দলীয়করণ করে জনগনের স্বার্থ বিরোধী কাজে লাগানো হচ্ছে, মিথ্যাচার ও প্রতারণা কাজে লাগানো হচ্ছে।”

গত ৩১ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসনাল কমিটির চেয়ারম্যান গ্রেগোরি ডব্লিউ মিকসের নিউইয়র্কের কুইন্স এলাকায় তহবিল সংগ্রহের অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্য ‘বিকৃত’ ব্যাখ্যা দিয়ে ওয়াশিংটন দূতাবাসের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিটি তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, ‘‘ তার(গ্রেগোরি ডব্লিউ মিকস) বক্তব্যকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে দেশী-বিদেশী গণমাধ্যমে ধুম্রজাল সৃষ্টি করে শুধু সচেতন মানুষের সাথেই প্রতারণা করেনি, ওয়াশিংটন দূতাবাস বাংলাদেশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে চরমভাবে হেয়প্রতিপন্ন করেছে। কারণ আপনারা সকলে জানেন, ইতিমধ্যে কংগ্রেসম্যান মিকস নিজেই গত ৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ দূতাবাসের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিকে নাকচ করে, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম, তার নিজস্ব ওয়েবসাইট এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফরেন এফেয়ার্স কমিটির ওয়েবসাইটে তার বক্তব্য তুলে ধরেছেন।”

‘‘ মার্কিন হাউজ অব ফরেন এফেয়ার্স কমিটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ওই বিবৃতিতে তিনি সুস্পষ্টভাবে র‌্যাব ও তার বর্তমান ও সাবেক কয়েকজন কর্মকর্তারদের ওপর দেওয়া নিষেধাজ্ঞাকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন দিয়ে তিনি বলেছেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য বাইডেন প্রশাসনের সিদ্ধান্তকে আমি দৃঢ়ভাবে সমর্থন করি। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক দৃঢ় করা আমি সবসময় সমর্থন করব। আগামী নির্বাচন অবাধ ও তার ‍সুষ্ঠু নিশ্চিতকরণসহ বাংলাদেশের মানাবাধিকার ও গণতান্ত্রিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সাহায্য করার জন্য কাজ করব।”

বেলজিয়াম দূতাবাসের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত একটি বেসরকারি সংবাদ সম্মেলনের সূত্র ধরে সেখানে অবস্থিত দূতা্বাসের পক্ষ থেকে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছিলো। আপনারা দূতাবাসের ওয়েবসাইটে ভিজিট করলে সেই প্রেস বিজ্ঞপ্তিটি এখনো দেখতে পাবেন। যেখানে সুস্পষ্টভাবে আওয়ামী লীগের একজন সক্রিয় কর্মীর মতো বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে। যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, যা দূতাবাসকে রাষ্ট্রের বদলে আওয়ামী লীগের প্রচার প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার প্রমাণ।”

‘‘ বিদেশে বসবানরত বাংলাদেশী একাডেমিশিয়ান, সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মীরা যখন দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি, গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি,নির্বাচনের অনিয়ম, জনগনের ভোটাধিকার ইত্যাদি বিষয়ে সামগ্রিক হতাশাজনক পরিস্থিতি জনগনের সামনে অথবা বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরতে বই অথবা প্রচারপত্র বা আলোচনার উদ্যোগ নেন তখনই এই সরকার তার বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় বাহিনীর শক্তিকে ব্যবহার করে, তার নিজস্ব বাহিনীকে ব্যবহার করে এসব অপকর্মকে ঢাকার প্রচেষ্টায় লিপ্ত হয়। সাম্প্রতিক সময়ে ওয়াশিংটন ও ব্রাসেলসসহ বিভিন্ন দূতাবাসের দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের কর্মকান্ডে আবারো এটাই প্রমাণিত হলো।”

গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।

‘পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দলীয়করণ’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ মধ্যপ্রাচ্যসহ বাংলাদেশী অধ্যুষিত বিভিন্ন শহরের কর্মকর্তাগণ সরকারি দলের অনুষ্ঠানসমূহে নিয়মিত উপস্থিত থেকে দলীয় কর্মীর মতো আচরণ করছেন। যা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মর্যাদাকে ধুলিসাত করেছে। পেশাদারী কর্মকর্তা-কর্মচারিগণ ক্ষুব্ধ হলেও মৌন থাকতে বাধ্য হচ্ছেন।”

‘‘ গত ৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সময় বিকাল ৫টায় ওয়াশিংটনস্থ দূতাবাসের ওয়েব সাইট ভিজিট করে দেখা গেছে যে, গত ৩১ জানুয়ারি কংগ্রেসম্যান মিকসের সংশ্লিষ্ট প্রেস বিজ্ঞপ্তিটি তুলে নেয়া হলেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে সেই প্রেস রিলিজটি এখনেো যথারীতি বহাল রয়েছে। যা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দলীয়করণ করার নির্লজ্জ প্রমাণের ডিজিটাল ডকুমেন্ট।”

তিনি বলেন, ‘‘ এসব ঘটনা দেশবাসী তথা বিশ্ববাসীর কাছে প্রমাণ করেছে যে, গোটা রাষ্ট্রকে এই ফ্যাসিস্ট সরকার কিভাবে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য দলীয় হাতিয়ারে পরিণত করেছে। ১৯৭৫ সালে সংবিধান সংশোধন করে বাকশাল গঠন করার মধ্য দিয়ে তারা সাংবিধানিকভাবে একদলীয় শাসন কায়েম করেছিলো, রাষ্টকে দলীয় হাতিয়ারে পরিণত করেছিল….। এখন তারা সাংবিধানিকভাবে বাকশাল ব্যবস্থা কায়েম করেনি। তবে সংসদ, স্থানীয় সরকার কাঠামো, আমলাতন্ত্র, ফরেন সার্ভিস ক্যাডার থেকে শুরু করে সমস্ত ক্যাডার সার্ভিস, বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় বাহিনী, বিচারিক কাঠামো, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, মানবাধিকার কমিশন ও আইন সংস্কার কমিশনসহ সকল প্রতিষ্ঠানকেই তারা কেবলমাত্র অবৈধ ক্ষমতাকে প্রলম্বিত করার কাজে লাগিয়ে চলেছে।”

‘‘ বিএনপি সুস্পষ্টভাবে বলতে চায়, এখনো সময় আছে, এই অপততপরতা বন্ধ করে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন করার ব্যবস্থা নিন, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও অবাধ ভোটাধিকার নিশ্চিত করার কার্য্করী ব্যবস্থা গ্রহন করুন।”

স্থায়ী কমিটির সদস্য ও বিএনপির পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটি চেয়ারম্যান আমীর খসুর মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘‘ সরকার অসত্য মিথ্যাচার করছে, তারা অপপ্রচার চালাচ্ছে, তারা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের দলীয় কাজে ব্যবহার করছে। আমরা আজকে স্পিসিফিক উদাহরণ দিয়ে বলছি, তারা(সরকার) ওয়াশিংটনে কী করছে, ব্রাসেলসে কী করছে,বিভিন্ন জায়গা কী করছে?”

‘‘ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বিদেশে পাঠানো হয়েছে রাষ্ট্র ও জনগনের সুরক্ষা এবং উন্নয়নকে এগিয়ে নেয়ার কাজ করতে। এখন তারা কাজ করছে এখন একটা দলের জন্য। অনেক উদাহরণ আছে, সব কিছু একদিনে আমরা বলা যাবে না।’’

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু উপস্থিত ছিলেন।