নৌকা ডুবিয়ে ভাতিজির পক্ষে কাজ করার পরামর্শ : এমপি ফিরোজের কথোপকোথন ফাঁস

আপডেট: জুন ১৬, ২০২১
0

পটুয়াখালী-২ (বাউফল) আসনের এমপি আ স ম ফিরোজ আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে নির্বাচন থেকে সরে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী ভাতিজার পক্ষে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন। বাউফলের চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থীকে ভোটের মাঠ থেকে উঠে যাওয়ার বিষয়ে ৯ মিনিট ৪৮ সেকেন্ডের কথোপকথনের একটি অডিও রেকর্ডিং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। এ নিয়ে পটুয়াখালী ও বাউফল উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছেন।

চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন পান ওই ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সভাপতি আমির আলী ব্যাপারী। অন্যদিকে এমপি ফিরোজের ভাতিজা ওই ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান এনামুল হক আলকাস মোল্লা এবারও বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। গত নির্বাচনেও আমির আলী ওই ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী ছিলেন। তবে এমপি ফিরোজের ভাতিজা আলকাসই বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। অডিও কথোপকথনে এমপি ফিরোজ সংবাদ সম্মেলন করে শারীরিক অসুস্থতা দেখিয়ে আমিরকে নির্বাচন থেকে সরে আলকাসের পক্ষে কাজ করার পরামর্শ দেন।

ওই অডিওতে নৌকার প্রার্থী আমির আলীকে উদ্দেশ করে আ স ম ফিরোজ বলেন, ‘ভোট যদি একেবারে স্বর্তঃস্ফূর্তভাবেও হয়, তুমি হবা না।’ এ সময় নৌকার প্রার্থী এমপিকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘শোনেন ভোট নিরপেক্ষ হলে আমি হব।’ এরপর এমপি ফিরোজ উত্তেজিত হয়ে বলেন, ‘এসব কথাবার্তা আমাকে কইও না। তুমি স্বাস্থ্যগতভাবে ঠিক নাই। লেখাপড়া জানো না। তোমারে একবার সুযোগ দিছিলাম চেয়ারম্যান হইতে পার নাই। আলকাস মোল্লা চেয়ারম্যান হইছে। ও মাস্টার্স পাস করা ছেলে। ওর বউও মাস্টার্স পাস মেয়ে। ওর জন্য চন্দ্রদ্বীপের লোকজনের মধ্যে আনন্দ চলছে।’

এ সময় নৌকার পক্ষে এক ব্যক্তি বলেন, ‘হুইপ সাইবের ভাইরের ছেলে বলে তাকে (আলকাস মোল্লা) মানুষ ভয় করে।’ এ কথা শেষ হতে না হতেই এমপি ফিরোজ আরও বলেন, ‘এগুলো বলো কেন, আমাকে ছোট করো কেন। নৌকা শেখ হাসিনা তোমাকে দিছে, কিন্তু আলকাস ভালো প্রার্থী। ও (আলকাস) গতবার বিদ্রোহী প্রার্থী ছিল বলে এ বছরও মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। আমার কাছে ওর সম্পর্কে কোনো বাজে কথা বলো না। আমার কাছে বাজে কথা বললে জুতা দিয়া পেটাব।’ এমপি ফিরোজের এই বক্তব্যের পর নৌকার প্রার্থী আমির আলী বলেন, ‘তা হলে কি আমি ভোট বর্জন করব।’ এ সময় আ স ম ফিরোজ বলেন, “তুমি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। যদি তুমি সম্মান বাঁচাতে চাও তাহলে ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন কমিটি নেতাকর্মীদের ডাকো। নেত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলবা, ‘আমার স্বাস্থ্য খারাপ, তাই নির্বাচন থেকে সড়ে দাঁড়াতে চাই।’ যেহেতু আলকাস মোল্লা গতবার নির্বাচিত হইছে তাই আমি মনে করি উন্নয়নের জন্য তাকে ভোট দেওয়া উচিত।”

এ ব্যাপারে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আমির আলী হাওলাদার বলেন, ‘দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর এমপির বাসায় তার সঙ্গে এ ব্যাপারে কথাবার্তা হয়েছে। তখন আরো লোকজন ছিল। কে বা কারা ওই কথা রেকর্ড করেছে তা আমি জানি না। আমি নৌকা মার্কা নিয়ে শেষ পর্যন্ত মাঠে আছি, থাকব এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আমি জিতব ইনশাআল্লাহ।’

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী আলমগীর হোসেন বলেন, ‘চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নে এমপি ফিরোজ সাহেবের ভাতিজা আলকাস মোল্লা বিদ্রোহী প্রার্থী, এটার দায়-দায়িত্ব তার। তবে দলীয় প্রার্থীকে সে সরে দাঁড়াতে বলেছে কি না আমার জানা নাই। তবে আমি আমির আলীকে বলেছি, নির্বাচনে যত ধরনের সহায়তা লাগবে, তা আমাকে বললে আমি তাকে করব।’