পটল চাষে স্বাবলম্বী : বছরে আয় লাখ টাকা

আপডেট: নভেম্বর ১৫, ২০২১
0

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি :
সুলতান হাসান তারা দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে অনান্য সবজির পাশাপাশি পটল চাষ করে
আসছেন। এতে স্বাবলম্বীও হয়েছেন। তার বাড়ি কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের ফকিরপাড়া গ্রামে। প্রতিবছরের মতো এবারও তিনি ২০ হাজার টাকা ব্যায়ে বসত বাড়ী সংলগ্ন ৩৫ শতক জমিতে পটোলের চাষ করেছেন।
পটলের ফলনও অত্যন্ত ভালো হয়েছে। এ মৌসুমে এখন পর্যন্ত তিনি তার ক্ষেত থেকে ১২০ মন পটোল উত্তোলন করে দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার বাজারে পাইকারী বিক্রি করেছেন।

প্রথমে বাজার দর কম থাকায় প্রতি মন ৪শ টাকা দরে ৫০ মন পটল বিক্রি করলেও বর্তমানে বাজার দর ভালো যাওয়ায় প্রতি মন ১২শ টাকা দরে আরও ৭০ মন পটল বিক্রি করেন তিনি। এভাবে পটল চাষ করে তিনি বছরে আয় করছেন লাখ টাকা।

সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের ফকির পাড়া গ্রামে এমন চিত্র দেখা যায়।
এক সময় তার সংসারে ছিল সীমাহীন অভাব-অনটন। সেই অভাব থেকে মুক্তি পেতে দীর্ঘ দিন ধরে দিন রাত পটল ক্ষেতে শ্রম দিয়ে আসছেন তিনি। সেই শ্রম তার বিফলে যায়নি। পটল চাষ করে তার সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে। পটল চাষ করে তার ভাগ্য বদলে ফেলেছেন। পটল বিক্রির টাকায় জায়গা কিনেছেন। বাড়ী ঘর তৈরী করেছেন।

পটল চাষী সুলতান হাসান তারা বলেন পটোল চাষে খরচ কম লাভ বেশী। তিনি ২০ হাজার টাকা ব্যায়ে ৩৫ শতক জমিতে পটোলের চাষ করেছেন। এ মৌসুমে এখন পর্যন্ত তিনি তার ক্ষেত থেকে ১২০ মন পটোল উত্তোলন করে জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন বাজারে পাইকারী বিক্রি করেছেন। প্রথমে বাজার দর কম থাকায় প্রতি মন ৪শ টাকা দরে ৫০ মন পটল বিক্রি করলেও বর্তমানে বাজার দর ভালো যাওয়ায় প্রতি মন ১২শ টাকা দরে আরও ৭০ মন পটল বিক্রি করেন তিনি। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে ও বর্তমান বাজার দর অব্যাহত থাকলে ১ লাখ টাকারও বেশী আয় করবেন তিনি। এতে গড়ে তার প্রতিবছর এক লাখ টাকা আয় হয়। তার এলাকাটি উঁচু হওয়ায় সেখানে বন্যার পানি প্রবেশ করেনা। জমির মাটি উর্বর হওয়ায় ক্ষেতের ফলন ভালো হয়। এতে করে কোন মৌসুমে পটোল চাষ করে তাকে লোকসান গুনতে হয়নি।

তিনি বলেন, এক সময়ে সংসারে খুবই অভাব অনটন ছিল। দিনমজুর পিতার সামান্য অায়ে পরিবারের সদস্যের তিন বেলার আহার জোটানো ছিল খুবই কষ্ট সাধ্য। উপায় না পেয়ে সেই কিশোর বয়সেই বাবার সাথে কৃষি জমিতে কাজ শুরু করি। অনান্য সবজীর পাশাপাশি প্রথম পটোল চাষ করেই লাভবান হই। সেই পটোল চাষে লাভের নেশা আর ছাড়তে পারিনি। সেই থেকেই প্রতি বছর পটোল চাষ করে আসছি। আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এখন প্রতি বছর গড়ে ১ লাখ টাকা আয় করে আসছি। পটোল বিক্রির টাকায় বাড়ী করেছি ও ৬ শতক জায়গাও কিনেছি।
পটোল চাষী সুলতান হাসান তারার বাবা বৃদ্ধ হাবিবুর রহমান বলেন, আমার অস্বচ্ছল সংসারে ছেলের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে স্বচ্ছলতা এসেছে। বৃদ্ধ বয়সে এখন শুধু নামাজ কালাম পড়ি আর ছেলের সাথে পটোল ক্ষেতে যতটুকু সম্ভব হয় কাজ করি। পটোল চাষে ছেলের সফলতা দেখে খুবই আনন্দ লাগে।
জেলা শহরের শহীদ জিয়া বাজার ব্যবসায়ী সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে পটোলের বাজার দর ভালো থাকায় প্রতি পাঁচ কেজি (১ ধারা) পটোল দোকানদারদের কাছে ১৪০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খামার বাড়ী অফিস সূত্রে জানা যায়, চলমান মৌসুমে জেলার নয়টি উপজেলার ৭ হাজার হেক্টর জমিতে শাকসবজী চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে। এখন পর্যন্ত অর্জিত হয়েছে ২ হাজার ৯ শত ৫০ হেক্টর জমির শাক সবজি।
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাকির হোসেন বলেন, সদর উপজেলায় ৩৫০ হেক্টর জমিতে শাকসবজী চাষের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত ২শ হেক্টর জমিতে শাকসবজীর চাষ হয়েছে। তার মধ্যে ৬৫ হেক্টর জমিতে পটোলের চাষ হয়েছে। পটোল চাষে খরচ কম লাভ বেশী। সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের জমি উচু ও মাটি উর্বর হওয়ায় এলাকায় পটোলের ফলন ভালো হয়। পটল জনপ্রিয় সবজি। সারা বছর ধরেই কম-বেশি পাওয়া যায়। পটোল চাষ করে সদর উপজেলার অনেক কৃষকই স্বাবলম্বী হয়েছেন।
####