পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি: মধ্য ও নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর চাপ

আপডেট: অক্টোবর ১২, ২০২১
0

বাংলাদেশে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বাজারে চাল, ডাল, পেঁয়াজ ও ভোজ্য-তেলের মত নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম যেভাবে বাড়ছে, তা নিয়ে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষ ক্ষুব্ধ।

এ অবস্থায় সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পেঁয়াজের শুল্ক প্রত্যাহার এবং অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেল এবং চিনির শুল্ক কমানোর অনুরোধ জানিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে।সোমবার সচিবালয়ে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে এক বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়।

অন্যদিকে, বাজারে নিত্য পণ্যের দাম বৃদ্ধির দায় নিতে নারাজ খুচরা বিক্রেতারা । তারা বলছেন, আড়তদারেরা পণ্য মজুদ করছে বলেই দাম বাড়ছে।

মাসখানেক ধরে মাছ বা মাংস খায়নি তারাবানুর পরিবার
করাইল বস্তিতে ১০ ফুট বাই ১০ ফুটের ছোট্ট একটি ঘরে তার তিন মেয়েকে নিয়ে থাকেন বরিশালের তারাবানু ।
প্রায় ২০ বছর ধরে গৃহকর্মীর কাজ করে একাই সংসার চালাচ্ছেন তারাবানু।

তার তিন মেয়েই স্কুলে পড়ে, মহামারির কারণে স্কুল এতদিন বন্ধ থাকলেও, নিয়মিত প্রাইভেট পড়ার খরচ যোগাতে হয়েছে তাকে।
বিবিসিকে তিনি বলছিলেন, এই চার সদস্যের পরিবারের কোন সদস্যই গত প্রায় মাস খানেক ধরে মাছ বা মাংস খাননি।
তিনি জানিয়েছেন, বাজারে জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বেড়েছে তাতে সংসার চালানোই মুশকিল হয়ে পড়েছে।

তিনি বলছেন, “আগে দিনে ১০০ টাকা খরচ হলে খাওয়া হয়ে যাইত, এখন সেইটা ২০০ টাকায়ও কুলায় না। মাছ, মাংস ডিম সবজি সব কিছু দামই বাইড়া গেছে। এক দেড় মাসের মত হয় ডিম আর সবজি দিয়াই চালাইতেছি খাওয়া-দাওয়া।”


‘চায়ের দাম বাড়াইতে পারি নাই, কিন্তু চাউলের দাম তো বাড়ছে’

তেজগাঁয়ের পলিটেকনিক কলেজ মোড়ে একটি চায়ের দোকান চালান নারায়ণগঞ্জের আনুয়ারা বেগম। তিনি বলেছেন, চিনি-দুধ-চা’পাতার দাম বাড়লেও তিনি চায়ের দাম বাড়াতে পারেননি। ফলে দোকানের খরচ মিটিয়ে সংসার চালানো একটি দুরূহ ব্যাপার তার জন্য।

তিনি বলেন, “দুধ-চিনি-চা’পাতা সব কিছুর দাম বাড়তি, দোকানের খরচ তো বাড়ছে অনেক। কিন্তু চা প্রতি কাপ আগেও পাঁচ টাকা ছিল, এখনো তাই। বাড়াতে পারি নাই।””কিন্তু আগে যে চাউলের কেজি ছিল ৪০ বা ৫০ টাকা সেইটা তো হইছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা। আমরা কামাই করি কী, আর খামুই বা কী!”—তিনি বলেন।

দোকানীরা দুষছেন আড়তদারদের

ঢাকার সরকার নির্ধারিত একটি পাইকারি বাজারে গিয়ে বিবিসির প্রতিবেদক দেখেছেন, সব ধরণের চালের দামই গত কয়েক সপ্তাহে বেড়েছে।
পেঁয়াজের দাম গত দুই সপ্তাহে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে।এছাড়া মসুর ডাল, আদা, চিনি, ভোজ্য তেল–সব কিছুরই দাম উর্ধমুখী। এমনকি সবজি, মুরগি এবং মুরগির ডিমের দামও ডজনপ্রতি অন্তত ১০ টাকা বেড়েছে গত তিন সপ্তাহে।আর তাতে মধ্য এবং নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর বাড়তি এক ধরণের বড় চাপ তৈরি হয়েছে।

কিন্তু দাম বাড়ানোর দায় নিতে বিক্রেতারা নারাজ। তাদের অভিযোগ, আড়তদারেরা দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন, ফলে তাদেরও বাড়তি দামে পণ্য বেচতে হচ্ছে। বনানী বাজারের একজন বিক্রেতা মোঃ: ইমরান হোসেন বলছেন, “আমরা পাইকারি মার্কেট থেকে আনি। তারা বলে দাম বেশি, নিলে নেন, নাইলে নাই। আমার মনে হয় এইটা শ্যামবাজার, কাওরানবাজারের মত বড় আড়তগুলা করতেছে।”

তিনি আরো বলছিলেন, “এখন বাজারে জিনিসপত্রের ঘাটতি নেই, কিন্তু তবু জিনিসের দামে বেশি। লকডাউনে গাড়ি বন্ধ ছিল, তখন দাম বাড়ে নাই এখন তাইলে কেন বেশি—এইটার উত্তর নাই আমাদের কাছে।”
সরকার কী বলছে?

সরকার বলছে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি কমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। সোমবার ঢাকায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাথে বৈঠক করেছে।বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সী বিবিসিকে বলেছেন, পেঁয়াজ-ভোজ্যতেল-চিনিসহ যে ক’টি পণ্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে আমদানি করা হয়, সেগুলোর দাম কমানোর জন্য শুল্ক প্রত্যাহার এবং শুল্ক হ্রাসের জন্য রাজস্ব বোর্ডকে অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।

বিবিসি