পরিবেশবাদীদের কথা সরকারের নিকট নিস্ফল লম্ফজম্ফ মনে হচ্ছে— সুলতানা কামাল

আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২১
0

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)’র উদ্যোগে আজ ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১ শনিবার সকাল ১১:০০টায় “পরিবেশ ও ডেঙ্গু: স্বাস্থ্যগত দৃষ্টিকোণ”-শীর্ষক এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভা ‘জুম’ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়।

বাপা’র সভাপতি, সুলতানা কামাল-এর সভাপতিত্বে এবং বাপা পরিবেশ ও স্বাস্থ্য বিষয়ক কমিটির সদস্য সচিব, বিধান চন্দ্র পাল এর সঞ্চালনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা ও রোগ নিয়ন্ত্রণের সাবেক পরিচালক এবং বাপা’র পরিবেশ ও স্বাস্থ্য বিষয়ক কমিটির আহ্বায়ক, ড. আবু মোহাম্মাদ জাকির হোসেন। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বাপা’র কোষাধ্যক্ষ মহিদুল হক খান, বিআইপি’র সাবেক সভাপতি, অধ্যাপক গোলাম রহমান, পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. আফতাব উদ্দিন, বাপা নির্বাহী সদস্য এম এস সিদ্দিকী, ফরিদ হাসান আহমেদ প্রমূখ।

সভাপতির বক্তব্যে সুলতানা কামাল বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং জনসচেতনতার মধ্যে সমম্বয় না থাকলে ডেঙ্গু থেকে বাঁচা দুঃসাধ্য। দেশের পরিবেশ ঠিক না থাকার কারণে আজ বিভিন্ন রোগ-বালাই বেড়েই চলেছে। তিনি বলেন গর্ভনেন্স না থাকলে কোনো আলোচনা ফলপ্রসূ হয় না। দায়িত্ব ও অধিকারবোধের মধ্যে সমন্বয় আজ জরুরি। এটির অভাব দেখা দিলে সমাজে এ ধরনের রোগ বালাই থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে না। তিনি অভিযোগ করে বলেন, পরিবেশবাদীদের কথা সরকারের নিকট নিস্ফল লম্ফজম্ফ মনে হয়; যা অত্যন্ত দূঃখজনক। তিনি বলেন আমরা দেশের স্বার্থে, সাধারণ জনগণের স্বার্থে পরিবেশ ধ্বংসের বিরুদ্ধে কথা বলি। তিনি দেশের পুকুর, দিঘী এবং নদীর প্রশস্ততা হ্রাস পাচ্ছে বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন আগের পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার ধারাবাহিকতা এখন আর লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। এখন পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রকল্প নির্ভর এবং একটি খাসলতে পরিণত হয়ে গেছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। নগরায়ণ করতে গিয়ে আমরা প্রকৃতিকে কতটা সমুন্নত রাখছি সেটি লক্ষণীয়। সাধারণ মানুষকে দেশের কল্যাণমূলক কাজে বেশি সম্পৃক্ত করতে হবে। তিনি বলেন সিভিল সোসাইটি বলতে এখন আর কিছুই নেই; কারণ কথা বলতে গেলেই বিভিন্ন ধরনের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। যারা এই ডেঙ্গু প্রতিরোধ কর্ম প্রক্রিয়ার সাথে সম্পৃক্ত তাদেরকে নিয়ে আমাদেরকে কাজ করতে হবে। ওয়ার্ড কমিশনারদের নিয়ে ডেঙ্গু প্রতিরোধে আলোচনা করা জরুরি। একইসাথে মেয়রদের সাথে আলোচনা করতে হবে; কারণ মূল দায়িত্ব নীতি-নির্ধারকদের, সে দায়িত্ব তারা কখনও এড়িয়ে যেতে পারেন না। সামগ্রিক আঙ্গিকে কাজ না করলে এর সুফল পাওয়া দূষ্কর বলেও তিনি মন্তব্য করেন।


ড. এ. এম. জাকির হোসেন তাঁর মূল বক্তব্যে বলেন, যার মধ্যেই জীবন আছে তাপ তাদের কার্যক্রমকে বাড়াতে পারে এবং কমাতে পারে। আমরা জানি ডেঙ্গির সুপ্তিকাল ৮-১০ দিন। তিনি বলেন ১০০ জনের মধ্যে ভাইরাস গেলে তাদের ৫৪ জনের মধ্যে ডেঙ্গুর উপসর্গ প্রকাশ পাবে না। ডেঙ্গু হলে উচ্চমাত্রায় জ্বর হবে, চোখের পিছনে, মাথায় ও হাড়ের সন্ধিগুলোতে প্রচণ্ড ব্যাথার সৃষ্টি হবে।

গ্লান্ডগুলো ফুলে যেতে পারে। দ্বিতীয়বার অন্য একটি সিরোটাইপ দিয়ে ডেঙ্গু হলে তার ফলে হেমোরেজিক জ্বর বা শক সিন্ড্রোম হতে পারে এবং এর ফলে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অর্গানগুলো থেকে প্লাজমা বের হয়ে যায় (অনূর্ধ্ব এক বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে তা প্রথম বারেই হতে পারে)। দ্বিতীয়বার অন্য টাইপ দিয়ে ডেঙ্গু হলেই এরকম ভয়ানক অবস্থার সৃষ্টি হয়। মানুষের শরীরের স্বাভাবিক রোগ-প্রতিরোধ শক্তি, যেমন, এন্টিবডি সংক্রমণকারী ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করে না। এন্টিবডি যেখানে শরীরের উপকার করে এক্ষেত্রে বরং বিরূপ প্রভাব ফেলে। গর্ভবতী মহিলার ডেঙ্গু হলে এন্টিবডি তৈরি হয় যা শিশুদের বিরূপ উপর প্রভাব ফেলে। ডেঙ্গুতে রক্তের প্লেটিলেট কণিকা অনেক কমে যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ডেঙ্গুকে দুইভাগে ভাগ করেছে। একটি সাধারণ এবং অন্যটি মারাত্নক ডেঙ্গু। মারাত্নক ডেঙ্গু হলে শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া কঠিন হয়ে যাওয়াসহ আরো অনেক জটিল উপসর্গ দেখা দেয়। সাধারণত ডেঙ্গু হলে প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষধ দেওয়া হয়; অ্যাসপিরিন জাতীয় ঔষধ দেওয়া যাবে না; এর ফলে রক্তনালী থেকে আরো বেশি তরল বের হয়ে যাবে।

তিনি চিকিৎসক এবং সেবিকাদের ডেঙ্গু বিষয়ে ভালো প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে ডেঙ্গুর মৃত্যুর হার ২০ এর বেশি থেকে ১ এর নিচে নামান সম্ভব বলে জানান। তিনি জানান যে যাদের ডেঙ্গু হয়নি এমন লোককে টিকা দিলে এর ফল খারাপ হয়। সেজন্য যাদের মধ্যে একবার ডেঙ্গু হয়েছে তাদেরকে ডেঙ্গুর টিকা দেওয়া উত্তম। এডিস মশা, যা ডেঙ্গুর জন্য দায়ী, পরিষ্কার স্থির পানিতে ডিম পাড়ে। যে পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ কম থাকে সেখানে লার্ভা পাওয়া যায়। লার্ভাগুলো ফড়িং ও ট্রাইটিনোরিংকাস মশার লার্ভা ও কিছু কিছু মাছ খেয়ে ফেলে। পানিতে ডিম পাড়ার পরে যদি পানি শুকিয়ে যায় তার পরেও এই ডিমগুলো মাসের পর মাস বেঁচে থাকতে সক্ষম। তাপামাত্রা ও বাতাসে আর্দ্রতার কারণে ডেঙ্গু বৃদ্ধি পায় বলেও তিনি তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন। তিনি আরো বলেন বিশ্বে বর্তমানে ১০০টির মত দেশে এই ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে যা ১৯৭০ সালে নয়টি দেশে।

পৃথিবীর ৭০% ভাগ ডেঙ্গু এশিয়া মহাদেশে ঘটে। কোনোভাবে একবার যদি ভাইরাসটি একটি মশার মধ্যে প্রবেশ করে তাহলে তা মশাটির মধ্যে সারাজীবনের জন্য থাকে। এডিস মশা ডিম পাড়ার পূর্বে অনেকবারই মানুষকে কামড়ায়, অথচ অন্যান্য মশা শুধু একবার কামড়ায়। এডিস যে ডিমটি পাড়ে সে ডিমও ডেঙ্গুর ভাইরাস বহন করে যা সবচেয়ে মারাত্নক বিষয় বলে তিনি মন্তব্য করেন। জলবায়ু পরিবর্তন, ভৌগলিক পরিবর্তন, বৃষ্টির মৌসুমের পরিবর্তন, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, আন্তর্জাতিক চলাচল ও ব্যবসার মাধ্যমে ডেঙ্গুর সমান্তরাল এবং উচ্চতর তথা পূর্বের শীতল স্থানসমূহে বিস্তার ঘটছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি সরকারকে কীটনাশক ছিটানোর তিন দিন পরে উক্ত