পর্যায়ক্রমে এগিয়ে চলেছে সৈয়দপুরের সাহাজান চৌধুরী ইসলামী কমপ্লেক্স’র মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন কার্যক্রম

আপডেট: মে ২৩, ২০২১
0

শাহজাহান আলী মনন, সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি॥
পর্যায়ক্রমে এগিয়ে যাচ্ছে নীলফামারী জেলার সৈয়দপুরের হাজারীহাটে সাহাজান চৌধুরী ইসলামী কমপ্লেক্স’র মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ। ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে হযরত খাদিজাতুল কুবরা (রাঃ) মহিলা নুরানী মাদরাসার দ্বিতল ভবন নির্মান। সেখানে চালু করা হয়েছে প্রায় দেড় শতাধিক নারী ও কন্যা শিশুর কুরআন ও নামাজ শিক্ষা কার্যক্রম। এছাড়া পুরুষদের জন্যও পৃথক নৈশ নামাজ ও কুরআন শিক্ষা ক্লাসও চলমান রয়েছে। আপাতত মাদরাসা দুটি পরিচালনার জন্য একজন মহিলা সুপারভাইজার সহ ৬ জন হাফেজ ও ৬ জন কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
পৈত্রিকসূত্রে প্রাপ্ত বসত ভিটায় গড়ে তোলা মহিলা মাদরাসার পাশাপাশি চলছে ক্যাডেট সিস্টেমে হেফজ ও স্কুল সিলেবাসের সমন্বয়ে পরিচালনাধীন হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রাঃ) ইসলামী একাডেমীর মূলভবন তৈরীর কাজ। কমপ্লেক্স’র মূল চত্বরে অস্থায়ী অফিসকক্ষের পিছনেই চলছে এ কর্মযজ্ঞ। ৭ তলা বিশিষ্ট অত্যাধুনিক সুবিধা সম্বলিত এ ভবনের ভিত্তি স্থাপন শেষে এখন বিল্ডিংয়ের প্রধান বীম নির্মানে ব্যস্ত প্রকৌশলীসহ শ্রমিকরা।
এটি নির্মাণ সম্পন্ন হলে আগামী জানুয়ারীতে নতুন শিক্ষাবর্ষেই শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম শুরু করা হবে। আবাসিক ও অনাবাসিক দুইভাবেই এতে দরিদ্র, মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য সম্পূর্ণ বিনা খরচে পড়াশোনার সুযোগ দেয়া হবে। সকল শিক্ষার্থীর জন্যই থাকা খাওয়া, পোশাক এবং বইসহ শিক্ষা সামগ্রী বিনামূল্যে সরবরাহ করা হবে। পাশাপাশি চিকিৎসা সেবা দেয়ারও ব্যবস্থা রাখা হবে। অনাবাসিকদের জন্য থাকবে পরিবহণের ব্যবস্থা।
মানব সেবার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করে পরকালীন মুক্তি এবং নিজেকে অমর করে রাখার মানসে নীলফামারী-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব শওকত চৌধুরী বাবার স্মৃতিকে ধরে রাখতে ২০১৮ সালে শুরু করেন ইসলামী কমপ্লেক্স বাস্তবায়নের কাজ। সৈয়দপুর উপজেলার কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নের হাজারীহাট পাকাধারা গ্রামে হাজারীহাট-সিপাইগঞ্জ বাজারগামী মূল সড়কের পাশে ১৯৮৫ সালে বাবার হাতে গড়া পূর্ববেলপুকুর স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদরাসা প্রাঙ্গনকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠছে এটি।
গত ২০ মে বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, কমপ্লেক্স প্রাঙ্গনে নির্মাণ শ্রমিকরা কাজে ব্যস্ত। কেউ বীম তৈরীর গর্তে নেমে নতুন রড জোড়া দিচ্ছেন। আবার কেউ রাস্তার পাশে রড সোজা করা ও কাটাসহ ইটের খোয়া তৈরীর কাজ করছে। কেউবা করছে গর্তে মাটি ভরাটের কাজ। তাদের তদারকি করছেন শওকত চৌধুরীর ভাই বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জাপা’র চেয়ারম্যান প্রার্থী ইলিয়াশ চৌধুরী ভলু ও ভাতিজা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মরহুম এনামুল হক চৌধুরী ছেলে আগামী ইউপি নির্বাচনে আওয়ামীলীগের সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী মোঃ বজলুর রশিদ চৌধুরী বুলবুল।
এসময় অস্থায়ী কার্যালয়ে উপস্থিত কমপ্লেক্স’র প্রতিষ্ঠাতা সাবেক এমপি আলহাজ্ব শওকত চৌধুরীর সাথে কথা হলে তিনি কমপ্লেক্স নিয়ে মহাপরিকল্পনার কথা তুলে ধরে বলেন, এটি হবে উত্তরবঙ্গের মধ্যে ধর্মীয় ও আধুনিক শিক্ষা, সেবা ও সমাজ উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের সমন্বিত ও সুপরিকল্পিত একটি বিশালাকৃতির উদ্যোগ। এখানে দ্বীনি শিক্ষার জন্য দু’টি ক্যাডেট পদ্ধতির মাদরাসা, আধুনিক শিক্ষার জন্য মডেল স্কুল, কলেজ করা হবে। যা পর্যায়ক্রমে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত উন্নীত করা হবে। মাদরাসায় প্রাথমিকভাবে ৩শ’ শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। পরবর্তীতে ৫ হাজার শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন শিক্ষা কার্যক্রমে পড়ালেখার সুযোগ সৃষ্টি করা হবে।
গড়ে তোলা হবে নারী ও পুরুষের জন্য পৃথক দু’টি বৃদ্ধাশ্রম। যেখানে ২৫০ জন করে অসহায় বৃদ্ধ ও বৃদ্ধার থাকা, খাওয়া, চিকিৎসা, বিনোদনসহ স্বাভাবিক জীবন যাপনের সকল সুবিধা রাখা হবে। একই সাথে একটি ৩ তলা বিশিষ্ট মসজিদ নির্মাণ করা হবে। যেখানে একসাথে ১০ হাজার মুসল্লী নামাজ আদায় করতে পারবে। মসজিদের পাশেই করা হবে কেন্দ্রীয় কবরস্থান।
কমপ্লেক্স’র মূল চত্বরের বাইরে হাজারীহাট বাজার এলাকায় ১০০ শয্যার একটি আধুনিক হাসপাতাল তৈরী করা হবে। এই হাসপাতালে দিবারাত্রি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দ্বারা সব ধরণের স্বাস্থ্যসেবাসহ অপারেশন ও এম্বুলেন্স সুবিধাও রাখা হবে। এজন্য হাসপাতাল সংলগ্ন একটি নার্সিং ইন্সটিটিউট ও ডেন্টাল মেডিকেল কলেজও পর্যায়ক্রমে স্থাপন করা হবে।
এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য গৃহিত নানা পদক্ষেপ সম্পর্কে শওকত চৌধুরী বলেন, এবতেদায়ী মাদরাসার পাশেই রয়েছে আমাদের পারিবারিক কবরস্থান ও ঈদগাহ মাঠ। এর আশেপাশের প্রায় ৩৩ একর ৩০ শতক জমি ইতোমধ্যে নেয়া হয়েছে কমপ্লেক্স’র নামে। চৌধুরী গ্রুপ অব ইন্ডাষ্ট্রিজ এর চলমান আয় থেকে প্রতিমাসে ৬ লাখ টাকা জমা করা হচ্ছে কমপ্লেক্সের ব্যাংক একাউন্টে। ইতোমধ্যে প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যায় হয়েছে। আমার সার্বিক আয় ও বন্ধু বান্ধবদের সহযোগিতায় এ পর্যন্ত এসেছি। ভবিষ্যতে নিয়মতান্ত্রিকভাবে চালানোর জন্য আমার সকল স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তিও ওয়াক্ফ করে দেয়া হবে।
কমপ্লেক্স করার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে শিল্পপতি ও বর্নাঢ্য রাজনীতিবিদ শওকত চৌধুরী বলেন, সংসদ সদস্য থাকাকালীন এই কমপ্লেক্স’র কাজ শুরু করতে পারতাম। কিন্তু করিনি, কারণ তখন হয়তো মানুষের মাঝে একটা বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতো। এমন একটি মহৎ কাজ করার ক্ষেত্রে কোন প্রকার সন্দেহের অবকাশ না রাখতেই এমপিত্ব শেষ করার পর এ কাজে হাত দিয়েছি। সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে এবং অর্থায়নে করা হচ্ছে সাহাজান চৌধুরী ইসলামী কমপ্লেক্স’র কাজ।
কারণ, আমরা যত কিছুই করিনা কেন আমাদের শেষ অবস্থান হলো কবর। মৃত্যুর পর ভালো কাজের প্রতিদান পেতে এর চাইতে শিক্ষা, সেবা ও সমাজ সংলস্কারমূলক কাজের চেয়ে উত্তম সদকায়ে জারিয়া আর কিছু হতে পারেনা। তাই আমার আজীবনের অর্জন দিয়ে আমি এই কমপ্লেক্স করতে উদ্যোগী হয়েছি। যা আমার ও আমার পরিবারের বিগত ও আগামী প্রজন্মের সকল সদস্যের জন্য পরকালীন মুক্তির কিয়ামত পর্যন্ত প্রবাহমান পূণ্যময় কাজ হিসেবে পরিগণিত হবে।
তিনি বলেন, আমি মনে করি সমাজের সবচেয়ে উত্তম মানুষ হাফেজে কুরআন তথা দ্বীনি শিক্ষার আলোয় আলোকিত ব্যক্তিরা। কিন্তু চলমান বাস্তবতায় তাঁরা খুবই অবহেলিত। এর কারণ দ্বীনি শিক্ষা থাকলেও তাদের যুগোপযোগী আধুনিক শিক্ষা না থাকার কারণে শুধুমাত্র মসজিদ মাদরাসা কেন্দ্রিক উপার্জনে বাধ্য হয় তাঁরা। তাই তাদেরকে কুরআনের হাফেজ বানানোর সাথে সাথে যেন আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে সমাজের সকল স্তরে নিজস্ব যোগ্যতায় প্রতিনিধিত্ব করার সক্ষমতা অর্জন করতে পারে সেভাবে তৈরী করার লক্ষ্যেই মূলতঃ সমন্বিত মাদরাসা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছি। যেখানে শিক্ষার্থীরা ফজরের পর থেকে সকাল ৮ টা পর্যন্ত হেফজ্ করবে এবং সকাল ১০ টা থেকে দুপুর ২ টা পর্যন্ত স্কুলে পড়ালেখা করবে।
মূলতঃ শিক্ষার প্রসারের পাশাপাশি এ অঞ্চলকে একটি অত্যাধুনিক সমৃদ্ধ জনপদে রুপান্তরিত করার জন্য সব ধরণের প্রয়োজনীয় কার্যক্রম পরিচালনা ও বাস্তবায়নের সার্বিক পরিকল্পনা আমার রয়েছে। কারণ আমার আর চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই। কোন ছেলে সন্তান নেই। দুটি মেয়েকে সুপাত্রস্ত করে বাকি জীবন আল্লাহর রাস্তায় কাজ করতে চাই। কমপ্লেকটি মূলতঃ শওকত চৌধুরী ট্রাস্টের মাধ্যমে পরিচালিত হবে। ইতোমধ্যে এই ট্রাস্টের গঠন প্রক্রিয়া শুরু করেছি। অতিদ্রুত এটি সম্পন্ন করা হবে এবং সরকারী নিবন্ধনও নেয়া হবে। এখন আমি ট্রাস্টের চেয়ারম্যান, আমার মৃত্যুর পর আমার স্ত্রী এ দায়িত্ব পালন করবে। তার মৃত্যুর পর ওয়াক্ফকৃত সম্পত্তির আয় থেকে সার্বিক ব্যায় নির্বাহ করা হবে। যা ট্রাস্টের পরিচালনা কমিটি তদারকি ও নিয়ন্ত্রণ করবে।
আমি যেন আমার এ শেষ আশা সুসম্পন্ন করে যেতে পারি এজন্য আল্লাহর সহযোগিতা কামনার পাশাপাশি সকলের দোয়াও প্রত্যাশা করছি।