ডব্লিউএইচও শিশুদের ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধে ১০ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার কথা বলেছে
এমরানা আহমেদ:
শয়ন কক্ষের দেয়ালে বাঁধানো ফ্রেমে বাবা-মায়ের মধ্যমণি হয়ে দাঁড়িয়ে, ৭ বছর বয়সী ছোট্ট ফুটফুটে মিষ্টি চেহারার আবীর। ছবিটিতে আবীরের হাস্যোজ্বল ও বুদ্ধিদৃপ্ত চেহারার প্রকাশভঙ্গি বাসায় আসা অতিথিদের নজর কাড়ে। কিন্তু আবীর নেই। দূর আকাশের তারা হয়ে গেছে। কাঁচের বাঁধানো ফ্রেমে বন্দি হয়ে রয়ে গেছে। ও কেবলই এখন স্মৃতি।
এইতো মাস খানেক আগেও আমাদের চোখের সামনে সারাক্ষণ ঘুরে বেড়াতো। খেলাধূলা করে সারা ঘর মাতিয়ে রাখতো। আমাদের হৃদয়ে সারাজীবনের জন্য ক্ষত এঁকে দিয়ে আমাদের একমাত্র সন্তান না ফেরার দেশে চলে গেছে। চলতি মাসের ১৮ তারিখ সরেজমিন রাজধানীর মিরপুর পল্লবীর বাসায় কান্না জড়ানো কন্ঠে এভাবেই একমাত্র আদরের প্রিয় সন্তান হারানোর কষ্টের কথাগুলো এই প্রতিবেদকের কাছে বলছিলেন আবীরের বাবা রহমত আলী মৃধা। প্রতিবেশীরা জানান, একমাত্র সন্তান হারানোর শোকে মা পাথর হয়ে গেছে। কারো সাথে কথা বলে না। সারাক্ষণ সন্তানের জন্য শুধু কাঁদে। এই অনাকাঙ্গিত দূর্ঘটনায় পুরো সংসারটা তছনছ হয়ে গেছে। এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপচারিতায় রহমত আলী বলেন, রোজার ছুটিতে, মায়ের সাথে নানা বাড়ি বেড়াতে গিয়েছিলো আবীর, খালাতো-ভাই বোনদের সাথে গোসল করতে গিয়ে, পুকুরের পানিতে তলিয়ে যায়। ওর সাথে থাকা শিশু সঙ্গীরা সাঁতার জানলেও ওকে উদ্ধার করার মতো বুদ্ধি ও শক্তি ওই শিশুদের ছিলো না। শিশুরা তাড়াতাড়ি দৌড়ে এসে তার মাকে খবর দিলেও, ততোক্ষণে সব শেষ। উদ্ধারকর্মীরা এসে আবীরের মৃত দেহটি উদ্ধার করে। আবীরের বাবা জানান, ‘এই দূর্ঘটনার পর থেকে আমরা আর স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারিনি। আর কোনোদিন হয়তো পারবোও না।’ ছোট্টো আবীরের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘ছেলেকে স্থানীয় একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি করেছিলাম। দ্বিতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী ছিলো আবীর। শিক্ষকদের পড়া খুব সহজেই রপ্ত করতে পারতো বলে শিক্ষকরাও তাকে বেশ আদর করত। আবীর যে পাড়ায় থাকতো সেখানে ছোট বড় সকলের সাথেই ভীষণ ভাব ছিল তার। যে কোনো কিছু দেখলেই সেগুলো সম্পর্কে জানতে চাইত, অনেক অনেক প্রশ্নে জর্জরিত করত পরিচিত সকলকে। যে কোনো বিষয় সম্পর্কে এত অল্প বয়সে তার জানার আগ্রহ দেখে সকলেই অবাক হতো। সকলেই দোয়া করে বলতো ‘আমাদের ছোট্ট আবীর বড় হয়ে একদিন সারা বিশ্ব জয় করবে’। বাবা-মায়ের মুখ উজ্বল করবে। পাড়ায় আবীরের সাথে কারো দেখা হলেই সকলেই ‘আমাদের বুদ্ধিমান আবীর শোনা’ বলে সম্বোধন করতো। ছোট্ট আবীরকে সকলেই অনেক ভালোবাসতো।
কিন্তু নিয়তির কি নির্মম পরিহাস। বড় হওয়ার আগেই আবীরের জীবন প্রদীপ নিভে গেলো।
অনলাইন গনমাধ্যম দেশ জনতা ডট কমের ব্রাক্ষণবাড়িয়ার আড়াইবাড়ীর প্রতিনিধি সূত্রে জানা যায়, মাত্র ১৫ আগে ব্রাক্ষনবাড়িয়ার আড়াইবাড়ী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশু শ্রেণীর শিক্ষার্থী নাইছা (৫) ও ইমন (৭)। একসাথে বাড়ির পাশে দিঘীতে গোসল করতে গিয়ে আর ফেরেনি। পরে জানা যায়, সাঁতার না জানা পাঁচ বছরের নাইছাকে বাঁচাতে গিয়ে ছয় বছরের ইমনও পানিতে ডুবে মারা যায়। এ নিয়ে ইমনের ভাই জানায়,‘‘আমার খালাতো বোনটা গোসল করতে গিয়ে পানিতে পড়ে যায়, তাকে বাঁচাতে গিয়ে আমার ছোট ভাইটাও পানিতে পড়ে যায় মারা যায়। ঘন্টাখানেক পরে, জড়ানো অবস্থায় পাওয়া যায় তাদের লাশ। দেড় বছর বয়সী শিশু তামিম বাড়ির পাশের পুকুরে পানিতে ডুবে যখন মারা যায়, তখন তার মা ঘরের কাজে ব্যস্ত ছিলেন। কর্মব্যস্ততা শেষে তিনি দেখলেন তার আদরের সন্তানটি ভেসে উঠেছে পুকুরের পানিতে। তামিমের মা কান্না জড়ানো গলায় জানায়, ‘আমি ঘরের কাজ করতে ছিলাম, আর আমার বাচ্চা খেলতেছিলো। খেলতে খেলতে সে পুকুরে পড়ে যায়। অনেক খোঁজাখুঁজির পর দেখি,‘পুকুরের পানিতে উপুড় হয়ে পড়ে আছে, আমার আদরের ছোট্ট সোণামণির নিথর শরীর।’
ছোট্ট আবীর, নাইছা, ইমন, তামিম মতো পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর মতো এমন মর্মান্তিক ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে। বাংলাদেশে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর হার খুবই ভয়াবহ। সরকারি হিসাবেই দেখা গেছে, গত তিন বছরে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর হার বেড়েছে দ্বিগুনের বেশি। অনূর্ধ্ব পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের মৃত্যুর চতুর্থ কারণ এখন পানিতে ডুবে মৃত্যু। প্রতিটি শিশু অপার সম্ভাবনা নিয়ে পৃথিবীতে আসে। কিন্তু এমন একটা বয়সে তারা মারা যায়, যে বয়সে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গেলে তারা হয়তো হয়ে উঠতে পারত এক একজন সুনাগরিক। পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু মধ্যম ও নিম্ন আয়ের দেশগুলোয় এটি একটি বড় সমস্যা। সাধারণত ১২ থেকে ১৫ মাস বয়সের মধ্যে শিশুরা হাঁটতে শেখে এবং নতুন এই অভিজ্ঞতার পুরোটাই তারা উপভোগ করতে চায়। ফলে এই শিশুদের পরিবারের সদস্যরা ব্যস্ত থাকলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা বেশি থাকে।
চলতি বছরের এপ্রিল মাসে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো প্রকাশিত স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকসে (২০২১) দেখা গেছে, পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের মোট মৃত্যুর ৭ দশমিক ৪ শতাংশ হয় পানিতে ডুবে। এছাড়াও এসব মৃত্যুও ৮০ শতাংশ ঘটে বাড়ি ঘরের খুব কাছে।
পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর ঘটনায় বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণে করে দেখা গেছে, প্রথম জন্মদিনের পরপরই শিশুদের মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ে। পানিতে ডুবে সবচেয়ে বেশি মারা যায় এক থেকে চার বছর বয়সের শিশুরা। মৃত্যুর ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটে সকাল ৯ টা থেকে ১ টার মধ্যে। অনেকেই হয়তো বলবেন, এ সময় মা কি করেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে এ সময় মা বাসাবাড়ির রান্না, গৃহস্থালি নানা কাজকর্ম নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। ফলে শিশুটির খোঁজ সব সময় সেভাবে মা নিতে পারেন না। গবেষকরা বলছেন, পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার প্রধান কারণ হলো সাঁতার না জানা।
শহরের চেয়ে গ্রামে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর হার অনেক বেশি। তবে ঢাকা মহানগরেও পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা কম নয়। ঢাকাকে ঘিরে রাখা বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ, ধলেশ্বরী নদীতে অনেক শিশু ডুবে যায়। রাজধানীতে নিচু এলাকা বা ঝিলের ওপর গড়ে ওঠা বস্তির শিশুরা নর্দমায় ডুবে মারা যায় বেশি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী, প্রতিবছর বছরে প্রায় ৩ লক্ষ ৭২ হাজার মৃত্যু হয় পানিতে ডুবে। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুর হারে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম। বাংলাদেশে ১ থেকে ৪ বছর বয়সী শিশুদের মোট মৃত্যুর ৪৩ শতাংশই পানিতে ডুবে মারা যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, দেশে প্রতিদিন গড়ে ৪০ জন শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। এদের মধ্যে ৩২ জনই চার বছরের কম বয়সী। বছরে এ সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ১২ হাজারে। এছাড়া পানিতে ডোবার কারণে আরো ১৩ হাজার শিশু স্থায়ী পঙ্গুত্ব বরণ করে। এক লাখ শিশু পানিতে ডোবার কারণে বিভিন্নভাবে আহত হয়। ডব্লিউএইচও’র তথ্য মতে, পানিতে ডুবে মৃত্যু বর্তমানে বিশ্বের অনিচ্ছাকৃত মৃত্যুর ঘটনাগুলোর মাঝে তৃতীয় অবস্থানে আছে। শিশুস্বাস্থ্য গবেষকেরা মনে করেন, শিশুমৃত্যু কমানো না গেলে সহস্রাব্দ উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যাবে না। এতে যেমন একটি পরিবার তার সন্তান হারায়, তেমনি দেশ হারায় মানব সম্পদ। এজন্য সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি গণমাধ্যমকেও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে বলেও জোড়ালো মত দেন শিশুস্বাস্থ্য গবেষকরা।
সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চের(সিআইপিআরবি) নির্বাহী পরিচালক এ কে এম ফজলুর রহমান বলেন,‘আমরা গবেষণায় দেখেছি, পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু দুনিয়াজুড়ে একটি নিরব মহামারী। প্রতিবছর পাঁচ বছর বয়সী অন্তত ১১ হাজার শিশুর মৃত্যু হয় পানিতে ডুবে। এই মৃত্যুর বড় অংশের খবর পত্রিকায় আসে না।’ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই মৃত্যুকে নিছক দুর্ঘটনা হিসাবে গণনা করা হয়। জাতীয় মৃত্যু নথিতে এই বিশাল সংখ্যক মৃত্যু দৃষ্টিগোচর হয় না। তাই মৃত্যু নথিতে, পানিতে ডুবে মৃত্যুকে মৃত্যুর কারণ হিসাবে উল্লেখ করা জরুরি। এজন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে উদ্যোগী হতে হবে। একই সাথে পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধের যে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি রয়েছে তা তৃণমূল পর্যায়ে বাস্তবায়নে জোর দিতে হবে বলেও উল্লেখ করেন এ কে এম ফজলুর রহমান। সাঁতার জানা, সাঁতার শেখা হচ্ছে প্রতিরোধের প্রধান উপায়। ১০ বছর বয়সে শিশু সাতার শেখার উপযুক্ত হয়। আবার শিশুদের যদি দিনের ঝুঁকিপূর্ণ সময়ে পানি থেকে দূরে রাখা যায়, তবে বিপদ এড়ানো সম্ভব। এই চিন্তা থেকে ২০০৫ সাল থেকে বেশ কয়েকটি জেলায় শিশুমৃত্যু রোধে প্রতিরোধ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সিআইপিআরবি। বর্তমানে দেশের ১০টি উপজেলায় ৩ হাজার ২০০টি কেন্দ্রে প্রায় ৮০ হাজার শিশুকে দিবাযত্ন কেন্দ্র বা আঁচলে রাখার ব্যবস্থা সিআইপিআরবি।। প্রতিটি কেন্দ্রে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একজন করে নারী শিশুদের দেখভাল করেন। যিনি ‘আঁচল মা’ নামে পরিচিত। আঁচল মায়ের একজন নারী সহযোগীও রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি দেখেছে, ঝুঁকিপূর্ণ সময়ে একটি নির্দিষ্ট স্থানে শিশুদের রাখলে ৮০ শতাংশ এবং সাঁতার শেখালে ৯৫ শতাংশ মৃত্যু কমানো সম্ভব।
জাতিসংঘের ঘোষণা অনুযায়ী, ২০২২ সালের ২৫ জুলাই দেশে প্রথমবারের মতো পালিত হয়েছে ‘পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক দিবস’। বাংলাদেশ সরকার এই দিবসটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে পালন করে। ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স ফর ড্রাউনিং প্রিভেনশনের মহাসচিব আবদুল জলিল চৌধুরী বলেন, পানিতে ডোবা প্রতিরোধ দিবস পালনের অন্যতম উদ্যোক্তা বাংলাদেশ। এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য গণমাধ্যমকে ভূমিকা পালন করতে হবে। শিশুমৃত্যু নিয়ে এসডিজি’র লক্ষ্য অর্জনে প্রতিরোধযোগ্য এ মৃত্যু কমানো জরুরি। পারিবারিক পর্যায়ে সচেতনতা সৃষ্টি ও সহযোগিতামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে বহু সংখ্যক শিশুকে পানিতে ডুবে মৃত্যু থেকে রক্ষা করা সম্ভব। এটি করতে পারলে এসডিজি’র লক্ষ্য অর্জন সহজ হবে। এজন্য সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি গণমাধ্যমকেও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।
পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু রোধে কিছু সরকারী উদ্যোগ:
এ প্রকল্পের প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. তারিকুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু প্রতিরোধে সরকার গত বছরের (২০২২) ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ‘সমাজভিত্তিক সমন্বিত শিশু যতœ কেন্দ্রের মাধ্যমে শিশুদের প্রারম্ভিক বিকাশ ও সুরক্ষা এবং শিশুর সাঁতার সুবিধা প্রদান’ নামে তিন বছর মেয়াদি একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়। ২৭১ কোটি ৮২ লাখ টাকার প্রকল্পটি গত বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি একনেকে অনুমোদিত হয়। প্রকল্পটি অনুমোদন পাওয়ার পর মে মাসে মন্ত্রণালয় থেকে আদেশ পাওয়া যায়। তবে এক বছরের বেশি সময় পার হলেও প্রকল্পটির কার্যক্রম ধীর গতিতে চলছে। তিনি আরো জানান,‘চলতি বছরের জুলাই থেকে জোরেশোরে কাজ শুরু করব আমরা। প্রকল্পটি পরিচালনার জন্য ১৮ মাস সময় পাওয়া যাবে।’ তিন বছর মেয়াদি এ প্রকল্পের আওতায় এক থেকে পাঁচ বছর বয়সী দুই লাখ শিশুর জন্য আট হাজার সমাজভিত্তিক শিশুযতœ কেন্দ্র স্থাপন করার কথা। প্রতিটি কেন্দ্রে ২৫ জন শিশুকে ভর্তি করা হবে। সকাল নয়টা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত শিশুরা ওই কেন্দ্রে থাকবে। এতে কর্মসংস্থান হবে ১৬ হাজার গ্রামীণ নারীর। কিন্তু এ পর্যন্ত সরকারি এই প্রকল্প অনুযায়ী, ১৬ জেলায় এর কাজ চলবে। আর এসব পরিচালনা করবে স্থানীয় এনজিওগুলো। কিন্তু প্রকল্পের ১৫ মাস পরেও কেবল ১৬ জেলায় ১৬ কর্মকর্তা নিয়োগ পেয়েছেন। এনজিওগুলোও কাজ শুরু করেনি। প্রকল্প পরিচালকও এখনো নিয়োগ হয়নি।
পানিতে ডুবে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের চিকিৎসক তাজনীম বলেন, কোনো শিশু পানিতে পড়ে গেলে তার শ্বাসনালি দিয়ে পানি ফুসফুসে ঢুকে যায়। ফলে শ্বাসপ্রশ্বাস বাধাগ্রস্ত হয়ে শরীরে অক্সিজেন কমে যায় এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড জমে যায়। ফুসফুসে পানি প্রবেশ করায় অক্সিজেন-স্বল্পতাজনিত এবং পরবর্তী সময়ে মস্তিষ্কে অক্সিজেনের অভাবে মৃত্যু ঘটে। এ ছাড়া মস্তিষ্কে অক্সিজেনের ঘাটতিতে শিশুরা দ্রুত জ্ঞান হারায়। দ্রুত উদ্ধার না করলে শ্বাস বন্ধ হয়ে শিশুটি মারা যায়। এ জন্য দরকার যত দ্রুত সম্ভব শিশুর শ্বাস-প্রশ্বাস প্রতিস্থাপন করা। অনেক সময় শীতলতার কারণেও মৃত্যু ঘটে
দুর্যোগ ফোরাম মনে করে- সচেতনতা বৃদ্ধি এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে সাঁতার শেখানোর মধ্য দিয়ে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর হার কমানো সম্ভব। শিশু হামাগুড়ি দিতে শেখার সময় থেকে পাঁচ বছর বয়স পর্যন্তু শিশুদের ওপর সার্বক্ষণিক নজরদারি রাখতে হবে। ডোবা ও পুকুরের চারপাশে বেড়া দেওয়ার পাশাপাশি শিশুকে পানিতে পড়ার ক্ষতিকর দিকও জানাতে হবে এবং ছয় বছরের পরই তাকে সাঁতার শেখানোর চেষ্টা করতে হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) শিশুদের ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধে ১০টি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছে। এগুলো হলো শিশু দিবাযতœ কেন্দ্র স্থাপন, সাঁতার শেখানো ও প্রাথমিক চিকিৎসা।
করণীয়
দ্রুত উদ্ধার করে শিশুকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে হবে এবং নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিতে হবে।
দীর্ঘদিন ধরে চলা কিছু সংস্কার যেমন শিশুকে পানি থেকে তুলে মাথায় নিয়ে ঘোরানো, পেটে চাপ দিয়ে পানি বের করা, ছাই বা লবণ দিয়ে শিশুর শরীর ঢেকে দেওয়া বা তাকে বমি করানোর চেষ্টা করানো এসব করে সময় নষ্ট করা যাবে না। যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে।
প্রতিরোধ
সব সময় খেয়াল রাখতে হবে শিশু যেন একা একা কোনো জলাধারের কাছে না যায়।
বাড়ির পাশের অপ্রয়োজনীয় ডোবা বা গর্তগুলো ভরাট করা যেতে পারে, যাতে সেখানে পানি জমতে না পারে। বাড়ির পুকুরের চারপাশে বেড়া দেওয়া যেতে পারে।
বাড়িতে পানিভর্তি পাত্র বা বালতি সব সময় ঢেকে রাখতে হবে।
শিশুর বয়স ৫ বছর হলে তাকে সাঁতার শেখানো উচিত। এতে ঝুঁকি কমবে।
শিশুকে একা পানিতে নামতে দেওয়া যাবে না।
#####