পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় দেশে দেশে নারী শাসিত রাষ্ট্রব্যবস্থা !

আপডেট: মে ১৪, ২০২২
0

সোহেল সানি :

অতিপ্রাচীনকালে পুরুষ নারীকে দেবীর মর্যাদা দিয়েছে । নারীর মূর্তি বানিয়ে পুজা করেছে। নারীকে ভাগ্য বিধার্থীর অবস্থানে কল্পনা করে। আবার ধর্মে মনোনিবেশ করে সেটাকে অস্বীকার করেছে। প্রতিষ্ঠা করেছে মাতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা।

ইহুদী ধর্মে নারীকে সমস্ত পাপের মূল কারণ বলে মনে করে। তারা পুরুষকে পুরোহিতের অধিকার দিয়ে নারীকে সেবিকার মানে দেখে।
ইহুদী আইনে পুরুষ উত্তরাধিকারীর বর্তমানে নারী উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হতো। ইহুদী ধর্মে পুরুষের বহুবিবাহ একটি অতি সাধারণ ব্যপার মাত্র। সেই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদেও নারী হিলারী ক্লিনটনকে প্রার্থী করে নতুন ইতিহাস রচনা করেছে। ১৯১৮ সালে আমেরিকায় নারীরা ভোটাধিকার পেলেও সমাজ, রাষ্ট্র পর্যায়ে প্রতিনিধিত্বে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ পায় ২০০০ সালে প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের আমলে। হিলারী ক্লিনটন তাঁর স্ত্রী।

খ্রীষ্টান ধর্মে নারীর মর্যাদাকে অতি নীচুস্তরে দেখানো হয়েছে। খ্রীষ্টান পাদ্রীর মতে নারীই (হাওয়া) পুরুষকে (আদম) পাপের পথে নিয়ে গেছে।

খ্রীষ্টান সাহিত্যেও নারীকে ঘৃণা ও তিরস্কারের চোখে দেখা হয়। সেই ব্রিটিশ রাজত্বেও নারী মার্গারেট থ্যাচার প্রধানমন্ত্রী হয়ে ইতিহাস রচনা করেন।

অহিংস ধর্ম বলে যার প্রচার সেই বৌদ্ধ ধর্মেও নারীর মর্যাদা অতি নগণ্য। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানেও নারীর অধিকার শর্তসাপেক্ষ। পিতা অবলীলায় নিজের সন্তান বিক্রি করে দিতে পারতেন। নারীর কোন স্বাধীন সত্তাই কল্পনা করা শাস্তিজনক অপরাধ বলে গণ্য হতো।

ভারতের হিন্দু ধর্মে নারীর অবস্থান অত্যন্ত করুন। হিন্দু নারী কখনও দাসত্ব ও পরাধীনতার জীবন থেকে মুক্ত হতে পারেনি সেই যুগে। মনু সংহিতার মাধ্যমে হিন্দু নারীর হীন অবস্থান গ্লানীপূর্ণ করা। মনু সংহিতা মূলতঃ কতিপয় পন্ডিত ভাববিশ্বাসের রচনা সংকলন মাত্র। এ হিন্দু আইনের জনক মনুর নাম অনুসারে একে বলা হয় ” মনু সংহিতা”। খ্রীষ্টপূর্ব ও পরবর্তী দুই শত বছরের মধ্যে মনুর এই আইন গ্রন্থ পূর্ণতালাভ করে এবং তা প্রথম ও দ্বিতীয় খ্রীষ্টাব্দের মধ্যে হিন্দু ধর্মের মূল আইনগত ভিত্তি হয়ে ওঠে। মনু বাল্যবিবাহ আইন করেন এবং বরপক্ষ কর্তৃক কনের পিতাকে দেয়া শুল্কপ্রথা বিলুপ্ত করেন।

অর্থাৎ উল্টো বরপক্ষ কনের পিতাকে শুল্ক (বরপণ) প্রথা প্রচলন করেন। বিধবা বিবাহ নিষিদ্ধ করে সতীদাহ প্রথা উদ্ভব ঘটিয়ে বর স্বামী মারা গেলে স্তী হিসাবে কনে নারীকে জ্যন্ত চিতায় নিক্ষেপ করা হতো। ব্রাক্ষ্মনরা ধর্ম ব্যাখ্যায় কঠিন বিধি আরোপ করে করে নারীর কঠোর অবরোধ প্রথা সতীদাহ, নারীর উত্তরাধিকারহীনতা, পুরুষের বহুগামীতা ও বিধবা নারীর বিবাহ রোধ নারীকে নির্যাতনের যাঁতাকলে পিষ্টকারী কুপ্রথার প্রচলন করেন। মধ্যযুগে বাংলার আইনবিশারথ জীমুত বাহন সর্বপ্রথম হিন্দু নারীকে সম্পত্তির নুন্যতম কিছু অংশ দেয়ার কন্য দুটি উদারনীতি গ্রহণ করেন। পতি অন্য পত্নী গ্রহণ করলে পূর্ব পত্নীকে ভরণপোষণ দিতে বাধ্য ও পুত্র সন্তান আগের পত্নীর গর্ভজাত হলে বিবাহিত পতি সম্পত্তির এক চতুর্থাংশ ওপর অধিকার থাকবে কন্যার বা কনের।

নির্মম সত্য নারীর এ সামান্য অধিকারও বাঙালী পুরুষতন্ত্র স্বীকার করেনি। জীমত বাহনের নীতির বাস্তবায়ণ বাধ্যতামূলক হওয়ায় বাংলার সমাজপতিরা স্বামীর মারা গেলে বিধবা পত্নীর কাছে হাজির হয়ে দুইটি প্রস্তাব করতো- হয় মৃত পতির সঙ্গে জ্যান্ত সহমরণে রাজী হতে হবে নয়তো সম্পত্তির অধিকার পুরোপুরি ছেড়ে দিয়ে হবে, তা নাহলে তার সন্তানদেরও সম্পত্তির প্রতি কোন অধিকার থাকবে না।

অসহায় সন্তানদের মাতৃত্বের বন্ধন কোন মা কি অস্বীকার করতে পারে? অতএব বিধবা মা মৃত পতির সঙ্গে জলন্ত চিতায় উপবিষ্ট হয়ে সহমরণে রাজী হয়ে প্রাণ সংহার করে সম্তানের মূল্য দিয়ে পতির দায় শোধ করতো। ফলে সন্তানের সঙ্গে মাতৃত্বের নারীর বাঁধন ছিন্ন না করে বাংলার সতীদাহের হার বেড়েই চলছিল। রাজা রাম মোহন ও ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগরের মতো গুণী মনীষীদের কারণে সেই প্রথার অবসান হয়। ভারতে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী হয়ে এবং সর্বশেষ সুষমা পাতিল রাষ্ট্রপতি হয়ে নারীর মর্যাদাকে পুরুষের সম করে তোলেন।
প্রাক ইসলামী যুগে আরবেরা নারীকে নির্যাতন করতো এমনভাবে যা কোন লেখক সাংবাদিকের বর্ননাতীত। সন্তানকে পুড়িয়ে মারা, জীবন্ত কবর দেয়া, ঘোড়ার লেজে বেঁধে টেনেহেঁচড়ে পাশবিক অত্যাচার ছিল তাদের দৈনন্দিন উৎসবের আনন্দকর ফূর্তি বিশেষ। পবিত্র ইসলাম নিয়ে হযরত মোহাম্মদ (সঃ) নারীকে সম্মান ও মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠা করে বলেন, ইসলামে নারী -পুরুষের সমান সম মর্যাদা এবং নারীর জন্য অভিন্ন আইন প্রণীত হয়েছে। নারীদের অধিকার পবিত্র তাতে হস্তক্ষেপ করো না। নারী (পত্নী) পুরুষের (পতির) পরিচ্ছদ ও পুরুষ (পতি) নারীর (পত্নী) পরিচ্ছদ (আল বাকারাঃ১৮৭), পত্নীর তেমনি ন্যয় সঙ্গত অধিকার আছে, স্বামীদের ওপর যেমন আছে স্বামীদের ওপর পত্নীর ওপর(আল বাকারাঃ২২৮), তোমরা পরসপরের প্রতি উদারতা করতে ভুলিও না।” (আল বাকারাঃ২৩৭) ।

বংশানুক্রমিক সমাজ ব্যবস্থায় পরিবার ও সমাজ নিয়ন্ত্রনে নারীর ভুমিকাই ছিল প্রধান।

পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পরিবার ও সমাজের নেতৃত্ব উঠে আসে পুরুষের হাতে। অসভ্য যুগ থেকে বর্বর যুগের সূচনা হলে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকা গৌষ্ঠিসমাজ জননী বিধির পরিবর্তে ‘জনক’ বিধির প্রয়োগে পিতৃতান্ত্রিক পরিবার ও সমাজব্যবস্থা প্রচলন শুরু হয়। অর্থাৎ ‘ মাতৃতন্ত্র’ এর পরিবর্তে ‘পিতৃতন্ত্র’ কায়েম হওয়ায় ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে রাজনৈতিক,সামাজিক বলয়ে নারীর নুন্যতম অংশগ্রহণও নিষিদ্ধ হয়ে পড়ে। বাংলার অনার্য সমাজ পরিচালিত হতো মাতৃতান্ত্রিক কাঠামোয়ে সম্পূর্ণভাবে ‘জননী’ বিধি অনুসরণ করে। আর্য আগমনে নারীর সর্বময় কর্তৃত্ব ভেঙ্গে যায়।

সমাজের কর্তৃত্ব চলে আসে পুরুষের হাতের মুঠোয়। আদিম যুগে অবসানের পর ভারত উপমহাদেশে সপ্তম শতাব্দীর মধ্যেই সামন্ততান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার আবির্ভাব হলে নারীর অবস্থান আরও নীচে নেমে যায়। ‘জনক’ বিধি নারীকে গৃহকোণে আবদ্ধ করে। শিক্ষা,শিল্প সংস্কৃতি,সংগীত প্রভূত বিকাশ ঘটলেও নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির কোন পরিবর্তন ঘটেনি। অথচ, সেই সামন্ত যুগে গ্রীক ও রোমান সভ্যতা ইউরোপে সভ্যতা বিকাশে অবদান রাখে। প্রাচীন এ্যাথেনীয় গ্রীক দর্শনে নারী সম্পর্কে বলা আছে যে, আড়াই হাজার বছর আগে গ্রীকরা নারীর বিষয়ে যে দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে নীতিমালা প্রণয়ন করে তা সর্বক্ষেত্রে নারীর বিকাশে বিঘ্নতার সৃষ্টি করে।
গ্রীক মূল্যবোধ নারী-পুরুষের ভুমিকায় নারীর ভুমিকা নেতিবাচক।

গৃহ ও পরিবারে নারীর কর্মক্ষেত্র নির্দিষ্ট বিধায় রাজনীতি বা সামাজিক কর্মের সঙ্গে তার যোগসূত্র থাকার সুযোগ নেই। এরিষ্টটল বলেন, নারী দুর্বল কর্তৃত্বহীন; সে তার স্বামীর মুখাপেক্ষী।

প্লেটো-ই প্রথম মনীষী যিনি নারীর ভূমিকা নির্ধারণ করতে গিয়ে নারীকে পুরুষের সমমর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেন। তিনি আদর্শ রাষ্ট্র বাস্তবায়ন করতে যেয়ে নারীর শক্তি ও সামর্থ্যকে কাজে লাগানোর প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন। অর্ধেক জনসংখ্যা নারী কিন্তু নারী হয়ে জন্মেছে বলে তার রাষ্ট্রের সর্ব্বোচ্চ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ অভিভাবক শ্রেণীতে অন্তর্ভূক্ত করা যাবে না, এটা পুরুষের স্বেচ্ছাচারিতা ছাড়া আর কিছুই নয়।

চতুর্থ শতকে রোমক সাম্রাজ্য ভেঙ্গে যাওয়ায় খ্রীষ্টিয় দৃষ্টিভঙ্গি ও জার্মানীর উপজাতীয় প্রথা রোমক চিম্তাভাবনায় পরির্বতন ও সংশোধন ঘটলে নারীর মর্যাদা হ্রাস পায়। পুঁজিবাদ নারীর হাতে -পায়ে শোষণ ও বৈষম্যের শিকল পড়িয়ে দেয়। কারণ পুঁজিবাদের বৃহৎ যন্ত্র কলকারখানায় লাখ লাখ নারীকে গৃহকোণ থেকে মুক্ত করে টেনে আনলেও নির্মমভাবে শোষিতই হয়। মজুরীর বেলায়ও। পুরুষ বা স্বামী কর্তৃক শোষিত হতে থাকে। গোটা মধ্যযুগে নারীরা স্বাধীনতা নামক অধিকার ভোগ করতে পারেনি। এ আবহাওয়ার বিরুদ্ধে রেনেসাঁস বা আধুনিক যুগের আর্বভাব হলে নারীরাও আন্দোলনে নেমে পড়ে। ভোটাধিকারের আন্দোলন দিয়ে নারীর যাত্রা শুরু। ওই সময়েই উপনিবেশগুলোতে পরাধীনতার শৃঙ্ল ভাঙ্গার মুক্তির সংগ্রাম দিকে দিকে হুঙ্কার দিয়ে ওঠে। ভোটাধিকার অর্জনের জন্য শত শত বছর নারী সমাজকে সংগ্রামে প্রবল বিরোধিতার মুখোমুখি হতে হয়। ১৮ শতকে এর শুরু। ১৯ শতকে তীব্র রূপধারণ করে।

১৮৯৩ সালে নিউজিল্যান্ডের নারীরা সীমিত ভোটাধিকার দেয়া হলেও ১৯২৮ সাল পর্যন্ত লেগেছে তা বাস্তবায়ণ করতে। ১৯১৭ সালে সোভিয়েত নারীরা সার্বজনীন ভোটাধিকার পেলেও আমেরিকার ভোটাধিকার দাসপ্রথা আম্দোলনের সঙ্গে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত থাকায় নিগ্রোরা গৃহযুদ্ধের পর ভোটের অধিকার পেলেও নারীরা তখনও পায়নি। ১৯১৫ সালে ১৫ অঙ্গ রাজ্যে নারীর ভোটের অধিকার আন্দোলন তীব্র হয়ে উঠলে ১৯২০ সালে গোটা আমেরিকায় নারীরা ভোটের অধিকার পায়। দীর্ঘ ৬৩ বছর পর এ জন্য সংগ্রাম করতে হয়। বিগত অর্ধশত বছর আগেও সরকারের কোন স্তরে নারীদের স্থান ছিল না। ২০০০ সালে পৌর স্তরে অঙ্গরাজ্যে স্তরে ফেডারেল স্তরের বিভিন্ন পদে নারীদের স্থান দেয়া হয়। বৃটেনের নারীদের শাসন সরকারে আসীন হওয়ার কাল একশত বছরের সামান্য বেশী। ১৯০৩ সালে নারীরা আন্দোলন করে ” উইমেন্স স্যোাশাল এন্ড পলপটিক্যাল ইউনিয়ন” এর ব্যনারে। ১৯১৮ সালে ভোটাধিকার স্বীকৃত করতে রাজনীতিবিদদের উত্যক্ত করা, আইন অমান্য করা, গ্রেফতারবরণ করতে হয়। বর্তমানে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ৬৭৯ সদস্যের মধ্যে ১২৫ জন নারী।

এদের মধ্যে শতাধিক লেবারপার্টির। ১৯১৩ সালে নরওয়ে ১৯১৫ সালে ডেনমার্ক, ১৯১৮ সালে অস্ট্রেলিয়া, জার্মান, পোল্যান্ড, ও চেকোশ্লোভাকিয়া, ১৯২৫ সালে বাংলার নারীরা তথা ভারতবর্ষ এর নারীরা ভোটাধিকার আদায় করেন ইংরেজদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে। সুইডেনে পার্লামেন্টে নারী প্রতিনিধির হার সবচেয়ে বেশী। ১৯৯৫ সালে সুইডেনই পৃথিবীর কোন রাষ্ট্র যে, তারা পুরুষ ও নারী সমসংখ্যক হারে মন্ত্রিসভা কায়েম করে। নারী সদস্যের হার ৪৩ভাগ। আফ্রিকা ৩০ শতাংশ। ভিয়েতনাম -২৬ শতাংশ মেক্মিকো-১৭শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্র মাত্র ১৩ শতাংশ, ভারত আরও কম মাত্র ৬ শতাংশ। ব্রাজিল- ৬ শতাংশ, কেনিয়া ৪ শতাংশ আর সর্বনিম্ন ইজিপ্ট-২ শতাংশ। জাতিসংঘের প্রস্তাবে সমস্ত স্তরে নারী প্রতিনিধিত্ব করতে পেরেছে ফিনল্যান্ড ৩৯শতাংশ, নরওয়ে ৩৯ শতাংশ, ডেনমার্ক ৩৩ শতাংশ।
। উন্নয়নশীল দেশে ৫৫টি দেশের পার্লামেন্টে নারী হার মাত্র ৫ শতাংশ
ব্যতিক্রম চীন ২১ ও কিউবা ২৩ উত্তর কোরিয়া ২০ শতাংশ। দীর্ঘ পথ পরিক্রমার শেষে ভারত উপমহাদেশে এবং পরবর্তীকালে বাংলাদেশে নারীরাযোগাযোগ স্থাপন করতে পেরেছে একটা শক্ত ভিত্তি রচনা করে। দক্ষিণ এশিয়ায় একমাত্র অঞ্চল যেখানে ৭টি দেশের দুটিতে সরকার প্রধান ও রাষ্ট্র প্রধান পদে নারী অভিষিক্ত হয়েছে। শ্রীলঙ্কা নারী প্রেসিডেন্ট একই সঙ্গে নারী প্রধানমন্ত্রী বিরল ইতিহাস। ভারত ও পাকিস্তান। স্বাধীন ভারতে ১৯৬৭ থেকে ১৯৮৪ ১৫ বছর ইন্দিরা গান্ধী প্রধানমন্ত্রীত্ব করেছেন। প্রধানমন্ত্রী কালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ডাকে পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ অভ্যুদয়ে মিত্র শক্তি হিসাবে তাঁর ভারত অবিস্মরণীয় অবদান রেখেছেন পাক হায়েনাদের বিরুদ্ধে। পাকিস্তান ১৯৭১ বাংলাদেশ স্বাধীন আগ পর্যন্ত কোন নারী প্রধানমন্ত্রীর অস্তিত্ব ছিল না।

বেনজীর ভুট্টো পাঁচ বছর শাসন করে যখন আবার মির্বাচনী প্রচারে ভোটযুদ্ধে তখনই তাঁকে হত্যা করা হয়েছে
যেমনি ১৯৮৪ সালে হত্যা করা ভারতের বিশ্বনন্দিত প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীকে। ১৯৪৭ -১৯৭১ নারী নেতৃত্ব

পাকিস্তান হাসিল হলেও নারীরা কঠোর অবরোধ নিরক্ষতা,কুসংস্কারাপন্ন হয়ে পড়ে। মুসলিম লীগ নারীর প্রশ্নে উগ্র মৌলবাদী ও চরম প্রতিক্রিয়াশীল। তারা হত্যা করে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বেনজীর ভুট্টোকে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতিহাস রচনা করেছেন সবাইকে চমকে দিয়ে। নারী হিসাবে তিনি সরকার প্রধান হলেও বাস্তবতা হলো তিনিও পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার অধীনতা স্বীকার করেই নারীদের শীর্ষস্থানীয় পর্যায়ে তুলে এনেছেন সরকারে। ২০০৮ সালে ৩০ ডিসেম্বর মহাবিজয়ের পর তিনি সংসদ উপনেতা, হুইপ স্পীকার, পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র, কৃষিসহ সংস্থাপন, ডাকটেলিযোগাযোগ, মহিলাশিশুবিষক প্রতিমন্ত্রীসহ বড় বড় মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রীত্বই শুধু নয়, সুপ্রিমকোর্ট, হাইকোট, জর্জকোট, বিশ্ববিদ্যালয়, সামরিক বাহিনী, পুলিশ, বিডিআর, এসএসএফ, সচিব পদসহ সংবিধিবদ্ধ সরকারী কর্তৃপক্ষের বহু প্রতিষ্ঠানের গুরুদায়িত্বে নারীদের আসীন করে যে নারী জাগরণের দ্বার উন্মোচণ করেছেন তা বাংলাদেশের পূর্ববর্তী কোন সরকারই দাবী করতে পারবে না। আর এ সবই সম্ভব হয়েছে দুটি কারণে এক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়, এবং তাঁর সুযোগ্য কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন।

লেখকঃ সাংবাদিক ও কলামিস্ট
01720153385