পুজামন্ডপে সহিংসতা রোধে ২৬ জেলার পুলিশকে সতর্ক থাকার নির্দেশ

আপডেট: অক্টোবর ২০, ২০২১
0
file photo

সম্প্রতি পূজামণ্ডপে কোরআন অবমাননার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ঘটে যাওয়া সহিংসতা নতুন করে যাতে পুনরাবৃত্তি না হয় সেজন্য ২৬ জেলার পুলিশকে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার পুলিশ সদরদপ্তরে ঊদ্ধর্তন কর্মকর্তাদের এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্তের পর জেলাগুলোতে পুলিশের বাড়তি নিরাপত্তার পাশাপাশি গোয়েন্দারা মাঠে কাজ করছেন। দেশের আর কোথাও যাতে সহিংসতা না হয় সেজন্য গুরুত্ব দিতে বলা হয় বৈঠকে।

পুলিশ সদরদপ্তরের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, আগামী ১০ দিন এ বাড়তি সতর্কতা জারি থাকবে। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় ঈদে মিল্লাদুন্নবী (সা.), সনাতন ধর্মাবলম্বীদের লক্ষ্মী পূজা ও বৌদ্ধদের প্রবারণা পূর্ণিমাকে সামনে রেখে এই বাড়তি সতর্কতার নির্দেশনা দেওয়া হলো। এছাড়া যেসব এলাকায় সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে সেই এলাকায় ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে সেই নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।

সতর্ক করা জেলাগুলো হলো, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পাবনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, মাগুরা, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনী, কক্সবাজার, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, নরসিংদী, মুন্সিগঞ্জ, সিলেট, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার।

গত বুধবার (১৩অক্টোবর) কুমিল্লার একটি পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন পাওয়ার ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এসময় জেলার কয়েকটি পূজামণ্ডপ ভাংচুর করে দুর্বৃত্তরা। এই ঘটনার জেরে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে স্থানীয় জনতার সংঘর্ষে চারজন মারা যান। এ সময় হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলার ঘটনা ঘটে। এছাড়া শুক্রবার নোয়াখালীর বেগমগঞ্জেও হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় একজন নিহত হন। সবশেষ রবিবার রাতে রংপুরের পীরগঞ্জে হিন্দু পল্লীতে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এই ঘটনাগুলোর প্রধান উস্কানি দাতাদের বের করতে মাঠে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

গোয়েন্দারা বলছে, ধর্মীয় উস্কানি দিয়ে হামলাগুলো ঘটনার তদন্ত চলছে। ইতোমধ্যে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে অনেক উস্কানি দিয়েছে। তাদেরকে নজরদারি করা হচ্ছে।
এছাড়া এই ঘটনায় জড়িত কেউ যাতে দেশ ছাড়তে না পারে এজন্য সতর্ক রয়েছে গোয়েন্দারা।

এদিকে জমিজমার বিরোধে রাজধানীর পল্লবীতে দুর্বৃত্তদের হাতে নৃশংসভাবে খুন হওয়া মো. সাহিনুদ্দিনকে হত্যার সময় ধারণ করা ভিডিও ‘নোয়াখালীর হিন্দু মহাজোট কর্মী যতন শাহ হত্যাকাণ্ডের’ ভিডিও বলে গুজব ছড়ানো হয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের বেশ কয়েকজন নাগরিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও টুইটার ব্যবহার করে ধর্মীয় উস্কানি ও গুজব ছড়াতেই এই ভিডিও বানায়। পরে তা বাংলাদেশের বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।

পুলিশ সদরদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, আগামী ১০ দিন যে বাড়তি সতর্কতা দেওয়া হয়েছে এই সময়ের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এলে ধাপে ধাপে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল ও গোয়েন্দা নজরদারি কমিয়ে আনা হবে। আর পরিস্থিতি স্বাভাবিক মনে না হলে সতর্কতার মেয়াদ আরও বাড়বে।

এদিকে হঠাৎ ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে দেশ অশান্ত করতে দুটি বিষয় সামনে রেখে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে ঘটনার তদন্ত করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রথমত, দেশের একাধিক ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল, দ্বিতীয়ত, তৃতীয় কোনো শক্তি বা বিদেশি কোনো গোয়েন্দা সংস্থার ইন্ধন আছে কিনা হামলায় খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। সম্প্রতি ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন ও জড়িতদের গ্রেপ্তারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয় ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊদ্ধর্তনদের দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে।

হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৮০ টি মামলা হয়েছে। এতে প্রায় পাঁচশতাধিক হামলাকারী আটক হয়েছেন।

গতকাল একটি অনুষ্ঠানে স্বরাষ্টমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, যারা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন, উস্কানি দিচ্ছেন, তাদের খুব শিগরিরই গ্রেপ্তার করা হবে। তাদের জবাব দিতেই হবে। তারা মিথ্যা তথ্য ও গুজব ছড়িয়ে কী ফায়দা লোটার চেষ্টা করছেন! শিগগিরই তাদের গ্রেপ্তার করা হবে।