প্রতিমন্ত্রীর উপস্থিতিতে সাংবাদিকদের ‌‌’মফিজ ‘বলে তাচ্ছিল্য করলো বিমানবন্দর ম্যানেজার

শাহজাহান আলী মনন, সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি :নীলফামারীর সৈয়দপুর বিমানবন্দর ম্যানেজার সাংবাদিকদের মফিজ বলে তাচ্ছিল্য করেছেন। সিভিল এভিয়েশন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মোঃ মাহবুব আলী এমপি’র উপস্থিতিতেই এমন ঘটনায় তোলপাড়া সৃষ্টি হয়েছে। তাৎক্ষনিক উপস্থিত সংবাদকর্মীরা এর প্রতিবাদ জানিয়ে অনুষ্ঠান বর্জন করে ম্যানেজারের বিচার দাবি করেন। পরে মন্ত্রী তার পক্ষ থেকে মার্জনা চেয়ে অনুষ্ঠান শেষ করার অনুরোধ জানান এবং এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আস্বস্ত করলে উত্তেজনা প্রশমিত হয়।
বৃহস্পতিবার সৈয়দপুর-চট্টগ্রাম রুটে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের সরাসরি ফ্লাইট উদ্বোধন করা হয়। এ উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী। এই অনুষ্ঠানের দাওয়াত দেয়া হয় সৈয়দপুর ও নীলফামারীর গণমাধ্যমকর্মীদের। ইউএস বাংলার মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) মোঃ কামরুল ইসলামের মুঠোফোন কল ও এসএমএস’র মাধ্যমে দাওয়াত পেয়ে সকাল ১১ টায় উপস্থিত হয় সাংবাদিকরা। কিন্তু প্রধান অতিথি ঢাকা থেকে যশোর বিমানবন্দরে চট্টগ্রাম রুটে সরাসররি ইউএস বাংলার ফ্লাইট উদ্বোধন উপলক্ষ্যে যশোর যাওয়ায় সেখান থেকে সৈয়দপুরে আসতে বিলম্ব হয়।
দীর্ঘ প্রায় ২ ঘন্টা সাংবাদিকরা বিমানবন্দরের লাউঞ্জের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকে। এসময় ইউএস বাংলার কর্তৃপক্ষ প্যাসেঞ্জার লাউঞ্জে সাংবাদিকদের বসার ব্যবস্থা করার জন্য বললে বিমানবন্দর ম্যানেজার অনুমতি দেয়নি। এতে চরম ভোগান্তি পোহায় সাংবাদিকরা। তারপরও সৈয়দপুর বিমানবন্দরের স্বার্থে তারা দাড়িয়েই অপেক্ষা করতে থাকে মন্ত্রীর আগমনের। দুপুর ২ টায় প্রতিমন্ত্রী ও ইউএস বাংলার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন এসে আলোচনা শেষে ফিতা কেটে ফ্লাইটের উদ্বোধন করেন। এসময় সাংবাদিকরা রানওয়েতে প্রবেশ করলে বিমানবন্দর ম্যানেজার ক্ষিপ্ত হয়ে যান। এক পর্যায়ে তিনি বেফাস মন্তব্য করে বলেন সৈয়দপুরের সাংবাদিকরা একেবারে মফিজ। এসময় দুইজন সাংবাদিক এর প্রতিবাদ করেন। তাতে তিনি আরও উত্তেজিত হয়ে বের হয়ে যেতে বলেন।
এ ঘটনা তাৎক্ষনিক ছড়িয়ে পরে অন্যান্য সংবাদকর্মীদের মধ্যে। এর প্রেক্ষিতে মন্ত্রীর সাথে মতবিনিময় ও প্রীতিভোজের অনুষ্ঠান বর্জনের ঘোষনা দেয় তারা। এতে চরম হট্টগোল ও উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। সংবাদকর্মীরা ম্যানেজারের এহেন ঘটনার বিচার দাবি করেন প্রতিমন্ত্রীর কাছে। এসময় ম্যানেজার দ্রæত সটকে পড়েন এবং মন্ত্রী যাওয়া অবধি তার আর দেখা পাওয়া যায়নি। পরিস্থিতি প্রতিকুল হওয়ায় ইউএস বাংলার এমডি আব্দুল্লাহ আল মামুন ও প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী মার্জনা চেয়ে বিষয়টি পরে দেখা হবে বলে কথা দেন। ফলে অপ্রীতিকর পরিস্থিতির অবসান ঘটে।
এসময় সংবাদকর্মীরা প্রতিমন্ত্রীকে আরও জানান, বিমানবন্দরে বহিরাগত রাজনৈতিক নেতাকর্মী, মাইক্রো ড্রাইভার সচরাচর প্রবেশ করতে পারলেও সংবাদকর্মীদের ঢুকতে দেয়া হয়না। পরিচয় দেয়ার পরও ঢাকাস্থ সিভিল এভিয়েশন থেকে অনুমতি নেয়ার কথা বলেন বিমানবন্দর ম্যানেজার সুপ্লব কুমার ঘোষ। তিনি এখানে আসার পর নানা অঘটন ঘটিয়ে চলেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- বিমানবন্দর মার্কেটের দোকানদারদের বৈদ্যুতিক সংযোগ বিনা নোটিশে কেটে দিয়ে বাড়তি অর্থ দাবি করেন। গত ২১ ফেব্রæয়ারী তার বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে পিকনিক করার নামে বিমানবন্দরে হিন্দি গান বাজিয়ে আনন্দ উল্লাস করেন। এমনকি রাতের বেলা রানওয়েতে ড্রাইভিং শেখার নামে কার চালানোয় ওই সময়ের ফ্লাইট অবতরণ করতে গিয়ে অল্পের জন্য দূর্ঘটনা থেকে রক্ষা পায় ইউএস বাংলার একটি এয়ারপ্লেন। এছাড়াও তিনি বিমানবন্দর সংস্কারে ব্যাপক অনিয়ম ও দূর্নীতি করেছেন বলেও অভিযোগ করা হয়। এসব বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় তিনি সংবাদকর্মীদের প্রতি এমন হীন মনোভাব পোষন করেন বলে ধারণা। (বিমানবন্দর ম্যানেজার সুপ্লব কুমার ঘোষের ছবি সংযুক্ত)

শাহজাহান আলী মনন
সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি