প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প ॥ নতুন ঘর যেন ডুমুরিয়ার ভূমিহীনদের নতুন প্রাণ

আপডেট: জুলাই ১৬, ২০২১
0

মোঃ আনোয়ার হোসেন আকুঞ্জী, খুলনা ব্যুরোঃ
খুলনা জেলার ডুমুরিয়ায় প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেয়ে নুতন প্রাণ খুঁজে পেয়েছে ভূমিহীন পরিবারগুলো। স্বপ্ন পূরণে যেন আশার আলো খুঁজে পেয়েছে তারা। বদলে যাচ্ছে তাদের জীবনযাত্রার মান। বৃহস্পতিবার (১৬ জুলাই) বিভিন্ন আশ্রয়ণ প্রকল্পের উপকারভোগীদের সাথে কথা বলে উঠে এসেছে এসব চিত্র।

খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলায় প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের নির্মিত ৬৪০টি ঘর গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবার দলিলসহ বুঝে পেয়েছে। এর মধ্যে আটলিয়া ইউনিয়নের কাঁঠালতলায় ১০৫টি, রঘুনাথপুর ইউনিয়নের থুকড়ায় ৭৬টি, ডুমুরিয়া সদর ইউনিয়নের সাজিয়াড়ায় ৫৬টি, ধামালিয়া ইউনিয়নে ৪৫টি, শোভনা ইউনিয়নের বাদুরগাছায় ৭৫টি, বাহাদুরপুরে ১৯৬টি, ভান্ডারপাড়ায় ৮০টি, সাহস ইউনিয়নে ৪টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। ১ম পর্যায়ে প্রতিটি ঘরের জন্য বরাদ্ধ ছিল ১ লক্ষ ৭১ হাজার টাকা এবং ২য় পর্যায়ে ১ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা। ইতোমধ্যে এর সুফল পেতে শুরু করেছেন ডুমুরিয়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ঘর পাওয়া ভূমিহীন ও গৃহহীন শত শত পরিবার।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়; উপকারভোগী পরিবারগুলো শেখ হাসিনার উপহার হিসাবে প্রাপ্ত ঘর পেয়ে নতুনভাবে বাঁচার স্বপ্ন দেখছে। এ প্রকল্পের আওতায় পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী পেয়েছে ভালো থাকার নিশ্চয়তা। ঘরগুলোর নির্মাণ কাঠামো সম্পর্কে তাদের অভিব্যক্তি খুবই সন্তোষজনক। নিয়মিত সুফলভোগীদের জীবনযাত্রার মান পর্যাবেক্ষণ করছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সদস্যবৃন্দ।

অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে ২নং রঘুনাথপুর ইউনিয়নের থুকড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা ভূমিহীন মোহাম্মাদ আলী (৬২), আব্দুল হামিদ মোল্যা (৭০), আটলিয়া ইউনিয়নের কাঁঠালতলা গ্রামের রিনা বেগম (২৭), আনার আলী (৬০)সহ অনেক সুফলভোগী জানান; আমাদের ঘর ছিলো না, জমিও ছিলো না। স্বপ্ন ছিলো একদিন নিজের বাড়ি হবে, যে শান্তির বাড়িতে প্রাণ খুলে নিঃশ্বাস নেব। আজ আমরা হাতে জমির দলিল ও বাড়ি পেয়েছি। আমরা দালানে থাকবো কোনদিন স্বপ্নেও ভাবিনি। ঘরগুলো পাকা ও টেকশই খুবই সুন্দর হওয়ায় দূর্যোগের সময়েও আমরা নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জমিসহ আমাদেরকে সুন্দর একটি ঘর উপহার দিয়ে জীবনে নুতন করে আশার আলো জাগিয়েছেন। আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিরকৃতজ্ঞ ও ঋণী হয়ে থাকবো।
আশ্রয়ণের বাসিন্দা রাজমিস্ত্রি মোহাম্মাদ আলী (৬২) বলেন; আমি যে ঘর পেয়েছি তা নিজেই মজবুত করে তৈরি করেছি। বিনামূল্যে এখন নিজের পাকা একটা ঘর হয়েছে, তাতে আনন্দের সাথে পরিবার নিয়ে শান্তিতে আছি।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ আশরাফ হোসেন বলেন; ইতোমধ্যে যে ঘরগলি নির্মাণ করা হয়েছে তা প্রকল্পের নিয়ম অনুস্মরণ করে সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রতিটি আবাসনে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়া হয়েছে। একপ্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন; প্রকল্পের ঘর নির্মাণে বিভিন্ন এলাকায় দুর্নীতি অনিয়মের খবর পেলেও এ উপজেলায় কোন রকম অনিয়মের কথা কেউ বলতে পারবেন না।
ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি মোঃ আব্দুল ওয়াদুদ বলেন; জেলা প্রশাসনের দিক নির্দেশনা, অনান্য কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের আন্তরিক সহযোগিতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজ গুণগত মান নিশ্চিতপূর্বক সমাপ্ত করা হয়েছে। ভূমিহীন ও গৃহহীনদের মাঝে ঘর প্রদানের মাধ্যমে অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর পাশাপাশি তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন হয়েছে। সবাই নিজের ঘরে একটু স্বস্তির জীবন পাওয়ার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর এই উদ্যোগের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা এবং ২০৪১ সালে উন্নত দেশ গড়ার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আরও একধাপ এগিয়ে গেলো।

সাবেক মৎস্য ও প্রাণি সম্পদমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ এমপি বলেন; বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীনতা অর্জনের পর তিনিই সর্বপ্রথম ভূমিহীন গৃহহীন ও ছিন্নমূল অসহায় পরিবার পুনর্বাসনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে এ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ভূমিহীনরা প্রধানমন্ত্রীর দেয়া এই উপহার পেয়ে নতুনভাবে বেঁচে থাকার স্বপ্নও দেখছেন। বিনামূল্যে জমি ও ঘর দেওয়ার ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে এটাই প্রথম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অন্যতম বিশাল এবং মানবিক এ উদ্যোগ সারা বিশ্বের কাছে দারিদ্র বিমোচনে সক্ষমতার প্রমাণ।