প্রধানমন্ত্রী বক্তব্যে দাম্ভিকতার : বিএনপিও কোনো ছাড় দেবে না—– মীর্জা ফখরুল

আপডেট: মার্চ ১৪, ২০২৩
0

নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রশ্নে ‘বিএনপি কোনো ছাড় দেবে না’ বলে বলে জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য এবং সংলাপ দুইদিক থেকে নাকচ হওয়ায় আগামী নির্বাচন অনিশ্চিত হয়ে পড়বে কিনা জানতে চাইলে মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব দলের অবস্থান জানান দেন।তিনি বলেন, ‘‘ আমরা তার আগে সংলাপ নাকচ করে দিয়েছি। এতে অবশ্যই অবশ্যই এবং আগামী নির্বাচন শূধু অনিশ্চিত নয়, আওয়ামী লীগ দায়ী হবে আগামী নির্বাচনে যদি আরো খারাপ কিছু ঘটে।”

‘‘ আমরা আর ছাড় দেবো না, এদেশের মানুষের এখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। আমার কথা বলছি না। চলেন না বেরুই একসাথে। দ্যাট গো-আউট। টক টু দ্যা পিপলস, ফারমার্স, রিকসাপুলার্স। নিরপেক্ষ ভাবে চলে, আপনি ইনভেস্টিগেশন করেন- দেখবেন মানুষ কি বলে। পিপল ওয়ান্ট এ চেঞ্জ। দিস ইজ ট্রুথ।”

গণমাধ্যমের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আপনারা অনেক কিছু করতে পারেন। এদেশে মিডিয়া যা করেছে, মিডিয়ার জন্য পরিবর্তনটা অনেক তরান্বিত হয়েছে। চিন্তা করেন এরশাদের পতনের কথা। পত্রিকা বন্ধ করে দিলেন আপনারা। তারপরে সেটা অনেক এগিয়ে গেলো।”

‘‘ আমরা সব মানুষ কি চাটুকার হয়ে যাবো, সব মানুষ কি স্বার্থপর হয়ে যাবে, সব মানুষ কি আমরা নিজের স্বার্থটা আর কিছুই দেখবে না। সেলফ সেন্সরশীপ করতেই থাকবো।আমরা তো মরে যাবো কয়েকদিন পরে। দিস ইজ ইউর কান্ট্রি-এটা মনে রাখতে হবে।”

গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে গতকাল দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতে এই সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়।

‘প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে দাম্ভিকতার বর্হিপ্রকাশ’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ কাল আমাদের অনির্বাচিত স্বঘোষিত, প্রবল প্রতাপশালী, অহংকারী, দাম্ভিক প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, নো প্রেসার উইল ওয়ার্ক অন মি। তার ওপর কোনো চাপই কাজ করবে না।”

‘‘ এখানেই বুঝা যায় তার(প্রধানমন্ত্রীর উক্তিতে) এদেশের প্রতি, এ্ই মানুষের প্রতি তার যে কোনো দায়িত্ব নেই, তার যে সন্মান নেই, তার যে কোনো রকমে জনগনের ভবিষ্যত নিয়ে এই রাষ্ট্রকে একটা সত্যিকার অর্থে কার্যকর রাষ্ট্র করার চিন্তা তার নেই।”

চাপ কেনো পড়ছে ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘‘ এর কারণ হচ্ছে গত দুইটা নির্বাচন তারা করেছেন সম্পূর্ণভাবে একতরফাভাবে তাদেরকে ক্ষমতায় বসানো জন্য যত রকমের ভোট জালিয়াতি,যত রকমের কারচুপি, যত রকমের সন্ত্রাস, সেই সন্ত্রাসের মধ্য দিয়ে ভোটারদেরকে ভোট কেন্দ্রে যাওয়া বাধা দিয়ে ভোট কেন্দ্রে শূণ্য করে তারা ফলাফল ঘোষণা করে বেআইনভাবে ক্ষমতায় গেছেন।”

‘‘ এখন আজকে যখন আবার নির্বাচন আসছে তখন তারা দেখছেন যে, জনগন তাদের সঙ্গে নেই। সত্যিকার অর্থে যদি সুষ্ঠু ভোট হয় তাহলে তারা ক্ষমতায় যেতে পারবে না। এই কারণে তারা যেটা করছেন আগে থেকেই একটা অবস্থা তৈরি করছেন সেই অবস্থাটা হচ্ছে যে, আমাদের দেশের নির্বাচনের ব্যাপারে কেউ বাইরে থেকে হস্তক্ষেপ করবে না, কেউ কথা বলবে না এবং নির্বাচনটা আমাদের মতোই করছি এবং বিদেশীরা যারাই যাচ্ছে তারাই বলছে যে, আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চাই। সরকার বলছে যে, না সব ঠিক আছে তো। নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন করবে, তারা ফ্রি যা-খুশি তাই করতে পারবে। এই যে গতকালও একজন বৃটিশ মন্ত্রী দেখা করতে গেলেন, এর আগেও একজন গেলেন তাদের উনি(প্রধানমন্ত্রী) একই কথা বলছেন।”

সংলাপ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে সত্যের অপলাপ বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, ‘‘ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ২০১৮ সালে নির্বাচনের আগে সংলাপের ফল কি? আমাদেরও প্রশ্ন ওয়াট ওয়াজ দ্য রেজাল্ট। প্রধানমন্ত্রী তিনি যেভাবে আসুক তিনি আমাদের সকলের সামনে মিটিংয়ে অঙ্গীকার করেছিলেন যে, নির্বাচনে সরকার কোনো হস্তক্ষেপ করবে না। পুলিশ আর গ্রেফতার করবে না, পুলিশ কোনো মামলা দেবে না, কাউকে গ্রেফতার করা হবে নির্বাচন পর্যন্ত…।”

‘‘ তার বক্তব্যের তিনদিন পর থেকে সারাদেশে পুলিশি নির্যাতনে বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের তারা সব পালিয়ে গেছে। ঘরে থাকতে পারেনি, রাস্তায়ও থাকতে পারেনি। আমি বিএনপির মহাসচিব আমি আমার এলাকায় প্রথম গিয়ে ঢুকেছি। আমি যে এলাকায় গেছি সেখানে আমার গাড়ির উপরে আক্রমন হয়েছে, আমার কনভয়ের উপরে আক্রমন হয়েছে। পুলিশ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেছে। নির্বাচনের ৭/৮ দিন আগ থেকে সেখানে নতুন নতুন প্লট তৈরি করা হয়েছে। তারা(ক্ষমতাসীনরা) যে নির্বাচনী অফিস তৈরি করেছিলো সেগুলো তারা নিজেরাই আগুন লাগিয়ে দিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা, মোটর সাইকেল পুঁড়িয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে। এটা শুধু আমার এলাকায় নয়, সারাদেশে সব জায়গায় করা হয়েছে। এসবের পরও আজকে যদি শেখ হাসিনা বলেন যে, ওয়াট ওয়াজ দ্য রেজাল্ট। রেজাল্ট তো ইউ নো ওয়াট হেড ইউ ডান।”

‘বিএনপি শুধু নয়, কেউ যাবে না’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ তারপরে কি করে উনি(প্রধানমন্ত্রী) আশা করেন তিনি সরকারে থাকবেন আর দেশের রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন করবে। একা বিএনপি তো নয়, আজকে সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলো কেনো বলছে যে, এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়া যাবে না।”

‘‘ এমন কি সিপিবি তারা পর্যন্ত বলেছে যে, নির্বাচনে যাওয়া যাবে না। এই বিষয়গুলো ‍যখন তিনি বলেন, তথন তিনি চূড়ান্তভাবে সত্যের অপলাপ করেন। জনগনের সঙ্গে প্রতারণা করেন, জনগনকে বিভ্রান্ত করেন এবং তিনি একটা প্রচন্ডরকম দাম্ভিকতায় ভুগছেন যে, তিনি গণতন্ত্রের যে ব্যাসিক কথা সেই ব্যাসিক কথাগুলো থেকে উনি বাইরে চলে যাচ্ছেন।”

তিনি বলেন, ‘‘ আমরা তো আগে বলেছি যে, তার সাথে সংলাপ করবো। তিনি তো কথাই রাখেন না। আমরা ডায়ালগের কথা সেজন্য বলি নাই। একবারের জন্য আমরা ডায়ালগের কথা বলি নাই।”

‘‘যারা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বিনা কারণে ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে গ্রেফতার করে জেলে মধ্যে পুরিয়ে আটকিয়ে রাখে তাদের সঙ্গে আমরা কি সংলাপ করবো।ওই মামলায় প্রত্যেককে ৭দিনের মধ্যে জামিন দেয়া হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়াকে এখন পর্যন্ত জামিন দেয়া হয়নি।”

সরকারের উদ্দেশ্যে ফখরুল বলেন, ‘‘ আমার কথা খুব পরিস্কার। এতো যদি সাহস থাকে আপনাদের, এতোই যদি উন্নয়ন করে থাকেন, এতোই যদি জনগনের ভালোবাসা থাকে আপনি পদত্যাগ করেন এবং একটা কেয়ারটেকার গভমেন্টকে দায়িত্ব দেন- নির্বাচন হোক। আসবে আমরা মাথা পেতে নেবো।”

‘‘ এসব কথা(গতকাল প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য) গুলো মানুষ এখন খায় না। নতুন কথা বলতে বলেন। যদি গণতন্ত্র দিতে চান সত্যিকার অর্থে, যদি সিনসিয়ার হন প্রথমে পদত্যাগ করেন, একটা কেয়ারটেকার গভমেন্ট দেন, তারপরে কেয়ারটেকার গভমেন্ট সব্ দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে তাদের মতামতের ভিত্তিতে একটা নির্বাচন কমিশন করবে, সে নির্বাচন করবে।”

কেয়ারটেকার গভমেন্ট কিভাবে করবে তার পথ বাতিয়ে দেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, ‘‘কেয়ারটেকার গভমেন্ট কী ভাবে করবে? আলোচনা করেন রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে। তাহলেই হয়ে যাবে।”

‘‘ ওবায়দুল কাদের সাহেব কাল বলেছেন যে, কেয়ারটেকার গভমেন্ট চিন্তাও করবেন না। এটা এখন চলবে না। তা ২০০৬ সালে কেয়ারটেকার গভমেন্টের সংস্কার প্রস্তাব আপনারাই পার্লামেন্টে দিয়েছিলেন। আমাদের কাছে কফি আছে তো। সেইম ধিংক এখন আমরা যেটা বলছি, ওরা একই কথা বলেছে তো।”

২০১৮ সালের একাদশ নির্বাচনে সময়ে বিএনপি মনোনয়ন যে বানিজ্য করেছে বলে প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছে তার প্রতিবাদ জানান বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, ‘‘ এটা মিথ্যাচার। আমি নাম বলব না, এটা সৌজন্যমূলক নয়। কত নাম কত টাকা দিয়ে কে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে পায়, কত টাকা দিয়ে কে মন্ত্রীত্ব পায় এগুলো আমরাও জানি। বাংলাদেশে এতটুকু দেশ।”

‘‘ আমরা স্থায়ী ৭/৮ ধরে বৈঠক করে মনোনয়ন দিয়েছি। সেখানে এতটুকু কোনো রকমের সমস্যা ছিলো না। প্রশ্ন আসে আমরা তিন জন করে দিয়েছি কেনো? আমরা তিন জন করে দিয়েছে আওয়ামী লীগের জন্য । আমরা জানি যে, আওয়ামী লীগ শয়তানি করতেই থাকবে। প্রার্থীকে বেআইনি ঘোষণা করবে, উপযুক্ত নয় ঘোষণা করবে, ট্রাইব্যুনাল থেকে আউট করে দেবে সেজন্য আমাদেরকে বিকল্প প্রার্থী রাখতে হয়েছে।ওদের কি? আমরা তিন রাখি, ১০ জন রাখে তোমাদের কি ?”

‘এই ইসি কোন ইসি’

নির্বাচন কমিশন সংলাপে ডাকলে আপনারা যাবেন কিনা প্রশ্ন করা হলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ এই নির্বাচন কমিশন কোন নির্বাচন কমিশন? যে নির্বাচন কমিশন কালকে(সোমবার) বলেছে যে, আমরা কোনো দায় নেই যে, অন্যান্য দলগুলো আসলো কি আসলো না। তাকে কি আমি নির্বাচন কমিশন বলব? তার কি দায়-দায়িত্ব আছে বলব।”

আপনারা জনগনের কথা চিন্তা করে তো নির্বাচন কমিশনে যেতে পারেন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘‘

আমরা জনগনের কথা চিন্তা করেই তো এই দাবিগুলো বলছি। আমরা তো বলছি না, বিএনপিকে ক্ষমতায় বসাও। আমরা বলেছি নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করো, একটা লেভেল প্লেয়ি ফিল্ড তৈরি করো। আমরা তো এখনই বলছি না যে, আমাদের আপনারা এখনই ক্ষমতায় বসিয়ে দেন।”

‘‘ আমরা বলছি যে, নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে, সমানভাবে, সমান অধিকার নিয়ে করতে পারি- সেই জিনিসটা চাচ্ছি। উই ওয়ান্ট এ লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড। আপনি একদিকে আমার সমস্ত লোকদেরকে ধরে ধরে জেলে পুরবেন, আপনি মিটিংয়ে মধ্যে আক্রমন করবেন, মারবেন। আপনি শান্তির সমাবেশ করবেন আর আমাকে মারতে মারতে ঢুকাই দেবেন-এটা তো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড না।”

ফখরুল বলেন, ‘‘ নির্বাচনের পরিবেশটা কোথায়? বলেন। ম্যাডামকে (খালেদা জিয়া) জেলে রাখবেন। উনাকে ছাড়েন। মামলাগুলো সব প্রত্যাহার করেন।”

‘‘ নির্বাচন পরিবেশ তৈরি করেন।তখন আপনি বলবে, এখন কেনো যাচ্ছেন না। তার আগে একথা আপনি বলতে পারেন না।”

‘কষ্টের কথা’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আমার খুব কষ্ট হয়। এইরকম একজন বিশাল মানুষের কণ্যা। আমরা কেউ বলি না বলি এটা তো সত্য কথা যে, শেখ মুজিবুর রহমান এদেশের নিসন্দেহে ওয়ান অব দ্যা গ্রেটেস্ট সান। তার মেয়ে গোটা জাতিকে ধবংসের মুখে ঠেলে দিলো।”

‘‘ উনি(শেখ মুজিবুর রহমান)ও দিয়েছিলেন ওই যে বাকশাল তৈরি করে।ওই যে বলি না- বডি কেমেস্ট্রিতে আছে আওয়ামী লীগের। ওরা লুট করবে, ওরা ভোগ করবে আর আমাদেরকে পায়ের তলে পিষে মারবে, সাধারণ মানুষকে।”

সংবাদ সম্মেলন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইসমাইল জবিহউল্লাহ ও সমবায় কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন উপস্থিত ছিলেন।