ফাগুনের বাতাসে বইছে প্রেম

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২১
0


এমরানা আহমেদ:

ফাগুনের বাতাসে বইছে প্রেম । একদিকে ঋতুরাজ বসন্তের আগমনী বার্তা । অপরদিকে একই দিনে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। শিমুল- পলাশের সাথে টিয়ে-শালিকের সখ্যতা । কোকিলের কুহুতান, কিংবা প্রিয়তম বা প্রিয়তমার মাঝে নিজেকে খুঁজে পাওয়ার দিন আজ। নানা বয়সের মানুষের ভালোবাসার বহুমাত্রিক রূপ প্রকাশের আনুষ্ঠানিক দিনও আজ।

এ ভালোবাসা যেমন মা-বাবার প্রতি সন্তানের, তেমনি প্রতিটি মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসা প্রকাশের একটি বিশেষ দিন আজ। তারুণ্যের অনাবিল আনন্দ আর বিশুদ্ধ উচ্ছ্বাসে সারা বিশ্বের মতো আমাদের দেশের তরুণ-তরুণী ও সর্বস্তরের মানুষ ভালোবাসা দিবসের এই দিনটি পালন করবে।

আজ গোটা রাজধানী ছিলো ভালোবাসার উৎসবে মুখর। এ উৎসবের ছোঁয়া লেগেছে গ্রাম-বাংলার জনজীবনেও। চলছে উপহার দেয়া-নেয়া। ভালোবাসার গভীরতাকে মোহ নামে আখ্যায়িত করেন অনেকে। স্নেহ-প্রীতির বন্ধন, প্রেম আর ভালোবাসার জন্য কি বিশেষ কোনো দিনের প্রয়োজন হয়!

কিন্তু তারপরও পৃথিবীর অনেক প্রেমিক-প্রেমিকা পালন করে আসছে একটি দিন। আর সেই কাঙ্খিত দিনটিই আজ- আজ, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। হ্যাপি ভ্যালেন্টাইন্স ডে। গত সোমবার ধরণীতে শুরু হওয়া বসন্তের উতল হাওয়ায় প্রেমকাতর হৃদয়ের রক্তরাঙা গোলাপটি তুলে দেবে প্রিয়ার হাতে। হিয়ার মাঝে বেজে উঠবে গান, আমি হৃদয়ের কথা বলিতে ব্যাকুল।
মুঠোফোনের মেসেজ, ই-মেইল অথবা অনলাইনের চ্যাটিংয়ে পুঞ্জ পুঞ্জ প্রেমকথার কিশলয় হয়ে উঠবে পল্লবিত।

তবে, বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের এই একটি দিন ভালোবাসা দিবস হিসেবে পালনকারীদের অনেকেই দেশ জনতা ডটকমের এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপাচারিতায় বলেছেন, কেবল এই একটি দিনই যেন ভালোবাসা প্রকাশের জন্য না হয়, প্রতিটা দিন, প্রতিক্ষণ, প্রিয়জনের প্রতি প্রিয়জনের এবং সর্বস্তরের মানুষের প্রতি যেন মানুষের ভালোবাসা-সহমর্মিতা যেন অটুট থাকে এই দাবি জানান তারা। এ দিনে চকোলেট, পারফিউম, গ্রিটিংস কার্ড, ই-মেইল, মুঠোফোনের এসএমএস-এমএমএসে প্রেমবার্তা, হীরার আংটি, প্রিয় পোশাক, জড়াজড়ি করা খেলনা মার্জার অথবা বই ইত্যাদি শৌখিন উপঢৌকন প্রিয়জনকে উপহার দেয়া হয়।

রাজধানীর বিভিন্ন উদ্যান, বাংলা একাডেমির বইমেলা, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, কফিশপ, ফাস্টফুড শপ, লং ড্রাইভ অথবা নির্জন গৃহকোণে একান্ত নিভৃতে চলবে তরুণ-তরুণীদের ভালোবাসার অভিসার। চকোলেট, পারফিউম, শুভেচ্ছা কার্ড, ই-মেইল, মোবাইলে এসএমএস, প্রেমবার্তা, আংটি, প্রিয় পোশাক, খেলনা, বই অথবা রক্তগোলাপ উপহার হিসেবে আজ দেয়া-নেয়া হবে তরুণ-তরুণীদের মাঝে। শুধু তরুণ-তরুণীরাই নয়, এদিনে সন্তানের প্রতি তাদের পিতামাতার ভালোবাসাও উৎসারিত হয় স্বর্গীয়ভাবে।

ভালোবাসা দিবস উদযাপনের ইতিহাস বেশ পুরনো। এ নিয়ে একাধিক কাহিনী প্রচলিত রয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি যে গল্পটি প্রচলিত সেটি হচ্ছে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামে একজন রোমান ক্যাথলিক ধর্মযাজকের ২৬৯ খ্রিস্টাব্দের একটি ঘটনা নিয়ে। সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামে ওই ধর্মযাজক একইসঙ্গে চিকিৎসক ছিলেন। তখন রোমান সম্রাট ছিলেন দ্বিতীয় ক্লডিয়াস। বিশ্বজয়ী রোমানরা একের পর এক রাষ্ট্র জয় করে চলেছে। যুদ্ধের জন্য রাষ্ট্রে বিশাল সৈন্যবাহিনী গড়ে তোলা দরকার। কিন্তু লোকজন বিশেষ করে তরুণরা এতে উৎসাহী নয়। সম্রাটের ধারণা হল, পুরুষরা বিয়ে করতে না পারলে যুদ্ধে যেতে রাজি হবে।

তিনি তরুণদের জন্য বিয়ে নিষিদ্ধ করলেন। কিন্তু প্রেমপিয়াসী তারুণ্যকে কি নিয়মের বেড়াজালে আবদ্ধ করা যায়! এগিয়ে এলেন সেন্ট ভ্যালেন্টাইন। ভ্যালেন্টাইন প্রেমাসক্ত তরুণ-তরুণীদের বিয়ের ব্যবস্থা করলেন। কিন্তু একদিন ধরা পড়ে গেলেন ভ্যালেন্টাইন। তাকে জেলে পোরা হল।

দেশজুড়ে এই খবর ছড়িয়ে পড়লে তরুণ-তরুণীদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া দেখা দিল। অনেকেই ভ্যালেন্টাইনকে জেলখানায় দেখতে যান। ফুলেল শুভেচ্ছা জানাতে আসেন। কারাগারের জেলারের একজন অন্ধ মেয়েও ভ্যালেন্টাইনকে দেখতে যেত। চিকিৎসক ভ্যালেন্টাইন মেয়েটির অন্ধত্ব দূর করলেন। তাদের মধ্যেও সৃষ্টি হল হৃদয়ের বন্ধন। ধর্মযাজক হয়েও নিয়ম ভেঙে তিনি প্রেম করেন। আইন ভেঙে তিনিও বিয়ে করেন। খবর যায় সম্রাটের কানে।

তিনি ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যুদন্ড দেন। সে তারিখটি ছিল ২৬৯ খ্রিস্টাব্দের আজকের এই ১৪ ফেব্রয়ারি। ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার আগে তার প্রিয় বধূকে যে চিঠিটি লিখবেন তা শেষ হয়েছিল এভাবে, লাভ ফ্রম ইওর ভ্যালেন্টাইন।

অতঃপর এই ভালোবাসার স্বীকৃতি পেতে দুই শতাব্দী নীরবে-নিভৃতে পালন করতে হয়েছে ১৪ ফেব্রয়ারি। ৪৯৬ খ্রিস্টাব্দে রোমের রাজা পপ জেলুসিয়াস এই দিনটিকে ভ্যালেন্টাইন দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন।