বঙ্গবন্ধুকে দাফনের আগেই দুই রাষ্ট্রপতি,স্পীকারসহ ২১ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী হয়ে যান খুনী মোশতাকের!

আপডেট: আগস্ট ৪, ২০২১
0

সোহেল সানি
প্রধানমন্ত্রীত্বকালে বঙ্গবন্ধুর একদিন বঙ্গভবন ত্যাগের সময় রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাইদ চৌধুরীর গাড়ির দিকে চোখ পড়ে। বঙ্গবন্ধু গণভবনে ফিরে তাঁর ব্যবহৃত ‘ক্যাডিলাক’ গাড়িটি রাষ্ট্রপতিকে পাঠিয়ে দেন।
রাষ্ট্রপতি হিসাবেই বঙ্গবন্ধু গাড়িটি বরাদ্দ পান। কিন্তু তিনি তো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন। কিন্তু রাষ্ট্রপতি আবু সাইদ চৌধুরী গাড়িটি ফেরত পাঠান প্রধানমন্ত্রীর কাছে একখানা পত্র লিখে। তাতে রাষ্ট্রপতি লিখেন, ” বাংলার বন্ধু, আমার প্রিয়নেতা আমার ইচ্ছে জাতির পিতাই গাড়িটি ব্যবহার করবেন। গাড়িটি আপনি ফেরৎ না নেয়া পর্যন্ত আমি অস্বস্তিবোধ করবো- প্রীতিমুগ্ধ আবু সাঈদ চৌধুরী।”
সেই মধুর সম্পর্কও স্থায়ী হলো না। মওলানা ভাসানী সরকারের বিরুদ্ধে অনশনে। রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধুকে বললেন, মওলানা ভাসানী আমার পিতৃবন্ধু। তাঁকে দেখতে যেতে চাই। বঙ্গবন্ধু বলেন, “আপনি তাঁকে দেখতে বাসায় যেতে পারেন, রাজনৈতিক কার্যালয়ে যেতে পারেন না।” এতে কষ্ট অনুভব করেন রাষ্ট্রপতি। অবশ্য ‘৭৩ সালের ২১ মে ভাসানী হাসপাতালে ভর্তি হলে রাষ্ট্রপতিকে বঙ্গবন্ধু বলেন, এখন যেতে পারেন।

আরও একটি ঘটনা ঘটছিলো ‘৭৩ সালের ১৯ ডিসেম্বর। প্রধানমন্ত্রী রেডক্রস সোসাইটির চেয়ারম্যান গাজী গোলাম মোস্তফার একটি নথি পাঠান রাষ্ট্রপতির কাছে স্বাক্ষরের জন্য। রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষর করা থেকে বিরত থাকেন। উপরন্তু ২২ ডিসেম্বর খুলনা ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউটের ভিত্তিপ্রস্তর অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সারাদেশে দুর্নীতির ব্যাপকতা সম্পর্কে সরকারের সমালোচনা করেন।
রাষ্ট্রপতি ঢাকায় ফেরার পর প্রধানমন্ত্রী তাঁকে ফোনে কথা বলতে চান। রাষ্ট্রপতি গাজী গোলাম মোস্তফার নথিতে সাক্ষর না দেয়ার বিষয় কথা বলবেন, এমনটা আন্দাজ করে রিসিভার কানে তুলে এ প্রান্ত থেকে আগেই বলে ওঠেন, ” বঙ্গবন্ধু আপনার সাথে বঙ্গবন্ধুর সম্পর্ক থাক,আমাকে রেহাই দিন।”
সরকারের ভাবমূর্তি রাষ্ট্রপতির বক্তব্যে প্রশ্নবিদ্ধ হয়। তারপরও তাঁকে পদত্যাগ না করার জন্য বলেন বঙ্গবন্ধু। কিন্তু তিনি পদত্যাগ করেন।
তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিব পূর্ণমন্ত্রীর সমমর্যাদায় আবু সাঈদ চৌধুরীকে সরকারের বিশেষদূত করে দেন। এভাবে তাঁকে দেশের বাইরে পাঠিয়ে জনমনে সৃষ্ট গুজব-গুঞ্জণের অবসান ঘটাতে হয়।
“লন্ডনের রাস্তায় আমার শবদেহ পড়ে থাকবে, তবু পাকিস্তানের সঙ্গে আপোস করে দেশে ফিরব না।”

বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী ১৯৭১ সালের ২৭ আগস্ট মুজিবনগর সরকারের বৈদেশিক দূত হিসাবে সংবাদপত্রকে এ কথা বলেন।
হাইকোর্টের বিচারপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আবু সাঈদ চৌধুরীর ওই বীরত্বের কথা শুনে বঙ্গবন্ধু এতটাই বিমুগ্ধ হন যে, স্বাধীন দেশে ফিরে বঙ্গবন্ধু নিজে প্রধানমন্ত্রী হয়ে রাষ্ট্রপতি পদটি তাঁকে উপহার দেন। অদৃষ্টের লিখন ‘৭৫ সালে ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু প্রায় সপরিবারে নিহত হন। বাকশাল মন্ত্রিসভার ২১জন সদস্য রাষ্ট্রপতি হিসাবে মোশতাকের আনুগত্য প্রকাশ করেন মন্ত্রীত্বের টোপ গিলে। বঙ্গবন্ধুর সেই প্রিয় রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী তার মধ্যে অন্যতম। নিহত হবার এক সপ্তাহ আগে বঙ্গবন্ধু তাকে নৌপরিবহন মন্ত্রী করেন। বঙ্গবন্ধু নিহত হবার পর সেই মুজিবপ্রেমিক বিচারপতি আবু সাইদ চৌধুরী খুনী মোশতাকের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হন। তখনো দেশের বাইরে বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডঃ কামাল হোসেন! মোশতাকের ৮৩ দিনের রাজত্বের অবসান ঘটলে লন্ডনে গিয়ে মুখ খোলেন বিচারপতি চৌধুরী। বলেন,”না গিয়ে উপায় ছিলো না, তা না হলে হয়ত প্রাণ দিতে হতো অথবা গ্রেফতারবরণ করতে হতো।”

মুক্তিযুদ্ধকালীন বঙ্গবন্ধুর ছবি বুকে ধারণ করে থাকতেন এ শিক্ষাবিদ বিচারপতি। সেই তাঁর মুখে শুনতে হয়েছে “ভাগ্যে লেখা ছিলো, তাই ওমন হয়েছে!”
‘৮৫ সালে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন সাবেক রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাইদ চৌধুরী। কিন্তু জাতির পিতা হত্যার বিচারের প্রশ্নে একটি শব্দ উচ্চারণ করেননি। ‘৮৭ সালে সেই শোকাবহ আগস্টেরই ২ তারিখে লন্ডনের আর্লসকোর্স আন্ডারগ্রাউন্ড স্টেশনে নিঃসঙ্গ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন বাংলাদেশের এই সাবেক রাষ্ট্রপতি। ৫ আগস্ট তাঁর মৃতদেহ ঢাকা হয়ে টাঙ্গাইলের নাগবাড়িতে পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়।

“মোহাম্মদ উল্লাহ”
আলংকারিক অর্থে হলেও রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রপ্রধান। বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর পদত্যাগের পর রাষ্ট্রপতি হন তৎকালীন স্পিকার মোহাম্মদ উল্লাহ। সেই রাষ্ট্রপতিই আবার উপরাষ্ট্রপতি হওয়ার নজির সৃষ্টি করেন মোহাম্মদ উল্লাহ। ১৯২১ সালে জন্মগ্রহণকারী মোহাম্মদ উল্লাহ পঞ্চাশ দশকের শুরুতে তরুণ আইনজীবী। ৯০ নবাবপুরে আওয়ামী মুসলিম লীগের এক রুমের অফিস। ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান। মোহাম্মদ উল্লাহ নিজ থেকেই দলের সভ্য হতে চান। শেখ মুজিব তাঁকে স্বাগত জানান সদস্য পদে নিয়োগ দিয়ে। দলের সভাপতি ভাসানী ও সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক কারাগারে। ‘৫০ সালের শুরুতেই কারামুক্ত হয়ে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসাবে শেখ মুজিব দলীয় অফিসটি চালু করেন। দুটো টুল, একটা টেবিল ও দুটা চেয়ার এই ছিল আওয়ামী মুসলিম লীগ অফিসের আসবাবপত্র। নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের সভাপতি দলের প্রতিষ্ঠাতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর। তাঁর অনুরোধে এক বন্ধু অফিসের জন্য একটি টাইপ মেশিন কিনে দেন। মোহাম্মদ উল্লাহ টাইপ মেশিনটি ব্যবহার করেন দলের কর্মসূচি ও বক্তৃতা-বিবৃতি তৈরির জন্য। বেশ পারদর্শীতার প্রমাণ দেন মোহাম্মদ উল্লাহ। দফতর সম্পাদক করা হয় তাকে প্রথম কাউন্সিলে- ১৯৫৩। এ কাউন্সিলেই শেখ মুজিব সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ‘৫৩-‘৭২ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক হিসাবে মোহাম্মদ উল্লাহর তুলনাভার। প্রথম জাতীয় সংসদে স্পিকার করা হয়। ‘৭৩ সালের ২৩ ডিসেম্বর হন রাষ্ট্রপতি।

‘৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি সাংবিধানিক বিপ্লবে বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রপতি হলে তাকে পদত্যাগ করতে হবে। ওদিন কাজী নজরুল ইসলামকে বঙ্গভবনে আনা হয়েছে। জাতীয় কবি হিসেবে অনারারি ডক্টরেটসহ স্বর্ণপদক উপহার দেয়ার আয়োজন। সকাল ১০টায় অনুষ্ঠান শুরু বঙ্গভবনে।
এরই মধ্যে সংসদ থেকে ছুটে গেছেন চিফ হুইপ শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন ও প্রতিমন্ত্রী নুরুল ইসলাম মঞ্জুর বঙ্গভবনে।
তারা জানালেন, ” বঙ্গবন্ধু আপনার জন্য অপেক্ষায়, এই পত্রখানায় স্বাক্ষর করে দিন। বঙ্গবন্ধু স্পিকার আবদুল মালেক উকিলের কাছে রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথগ্রহণ করবেন।”
রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ উল্লাহ একটু সময় চান। কবির গলায় জাতীয় কবির পদকপড়ানো পর্যন্ত।
যাহোক, ওদিনই সংবিধান চতুর্থ সংশোধনী পাস হবার মাধ্যমে সব দল বিলুপ্ত হয়ে যায়। যাতে বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা উল্লেখ করা হয় এবং পাঁচ বছরের জন্য রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত বলে ঘোষণা করা হয়।
শাহ মোয়াজ্জেম রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে বিল স্বাক্ষর করিয়ে আনেন। সংসদ লবীতে বসে স্পিকারের কাছে রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথগ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধু। মন খারাপ দেখে পদত্যাগী রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ উল্লাহকে আশ্বাস দিয়ে আসেন চীফ হুইপ শাহ মোয়াজ্জেম। তখন বঙ্গভবনে কেবিনেট সচিব তৌফিক এলাহী ও সচিব আবু জাফর উপস্থিত। চীফ হুইপ বলেন, স্যার চিন্তার কোন কারণ নেই বঙ্গবন্ধু বলেছেন আপনাকে মন্ত্রী করা হবে।”

মোহাম্মদ উল্লাহ দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলেন,” শাহ সাহেব, বঙ্গবন্ধুকে বলে আমাকে পূর্ণ অবসর দেয়া যায়না? রাষ্ট্রপতির পর আর মন্ত্রীত্ব ভালো লাগবে না, আর ভালো দেখায়ও না।”
সেই মোহাম্মদ উল্লাহই বাকশাল মন্ত্রীসভায় যোগ দিয়ে ভূমিমন্ত্রী হন।
‘৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু নিহত হলে মোহাম্মদ উল্লাহ খুনী মোশতাককে রাষ্ট্রপতি মেনে নিয়ে উপরাষ্ট্রপতি হন!

বঙ্গবন্ধু মোহাম্মদ উল্লাহকে প্রথমে ডেপুটি স্পিকার করেছিলেন গণপরিষদের। স্পিকার শাহ মোহাম্মদ হামিদের মৃত্যু হলে স্পিকার করা হয় তাকে। বিশ্বস্ত ভেবেই বঙ্গবন্ধু তাকে রাষ্ট্রপতি করেন এবং পরে ভূমিমন্ত্রী। সেই মোহাম্মদ উল্লাহ খন্দকার মোশতাকেরই উপরাষ্ট্রপতি হন। পরে যোগ দেন বিএনপিতে। এমপি হয়ে বহু চেষ্টা করে জিয়ার মন গলায়ে মন্ত্রীত্ব লাভ কিংবা উপরাষ্ট্রপতি পদ ভাগাতে পারেননি। জেনারেল জিয়া নিহত হবার পর রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আব্দুস সাত্তারেরও উপরাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন এই মোহাম্মদ উল্লাহ। কিন্তু ‘৮২ সালের ২২ মার্চ সেনাপ্রধান জেনারেল এরশাদ সামরিক শাসন জারি করেন। ফলে দুদিনের মাথায় মোহাম্মদ উল্লাহরও পতন ঘটে।
“আপনি সেই ভাগ্যবান ব্যক্তি যিনি আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক হতে ডেপুটি স্পিকার, স্পিকার, রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রী, উপরাষ্টপতি এমপি সব হয়েছেন। এখন শুধু বাকী দারোগা হওয়া।”
শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন রসিকতা করে কথাটা বলেছিলেন মোহাম্মদ উল্লাহকে। শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনও অবশ্য বঙ্গবন্ধুকে ত্যাগ করে মোশতাকের প্রতিমন্ত্রী ও এরশাদের উপপ্রধান মন্ত্রী হন। সর্বশেষ বিএনপিতে আছেন পদহীন অবস্থায়। সাবেক রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ উল্লাহ ‘৯৯ সালের ১২ নভেম্বর নীরবে নিভৃতে মৃত্যুবরণ করেন।

উল্লেখ্য ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বিকাল পাঁচটায় রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথগ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধু সরকারেরই বানিজ্য মন্ত্রী খন্দকার মোশতাক আহমেদ। সন্ধ্যায় শপথ নেন ১০ নেতা মন্ত্রী হিসেবে এবং ১১ নেতা প্রতিমন্ত্রী হিসেবে। মোশতাকের উপরাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ উল্লাহ। আর মোশতাক সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিচারপতি আবু সাইদ চৌধুরী, পরিকল্পনা মন্ত্রী অধ্যাপক ইউসুফ আলী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী আব্দুল মান্নান, খাদ্যমন্ত্রী আব্দুল মমিন, গণপূর্ত মন্ত্রী সোহরাব হোসেন, আইনমন্ত্রী মনোরঞ্জন ধর, নৌপরিবহন মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, শিক্ষামন্ত্রী অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ চৌধুরী, অর্থমন্ত্রী ডঃ আজিজুর রহমান মল্লিক ও এলজিআরডি মন্ত্রী ফণিভূষণ মজুমদার। অপরদিকে
প্রতিমন্ত্রীরা হলেন, প্রফেসর নুরুল ইসলাম চৌধুরী, দেওয়ান ফরিদ গাজী, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, তাহের উদ্দিন ঠাকুর, নূরুল ইসলাম মঞ্জুর, কে এম ওবায়দুর রহমান, ডাঃ ক্ষীতিশ চন্দ্র মন্ডল, রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ ভোলা মিয়া, সৈয়দ আলতাফ হোসেন, মোসলেম উদ্দিন খান, মোমেন উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।

মোসলেম উদ্দিন খান কেবল বঙ্গবন্ধুর বাকশাল সরকারের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন না। মোশতাক সরকারের প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ ছিলেন। তখন চিফ হুইপের পদটি প্রতিমন্ত্রীর সমমর্যাদাপূর্ণ ছিলো।মোশতাক সরকারের বাইরে থাকা বঙ্গবন্ধুর উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, সাবেক প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, প্রধানমন্ত্রী এম মনসুর আলী ও মন্ত্রী এএইচএম কামরুজ্জামানকে ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর কারাগারে হত্যা করা হয়। মোশতাক সরকারের বাইরে থাকা বাকশালের মন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদ, এম কোরবান আলী নিক্ষিপ্ত হন কারাগারে। বাকশাল সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডঃ কামাল হোসেন বিদেশ সফরে থাকাকালীন বঙ্গবন্ধু নিহত হন। বাকশাল সরকারের অন্যতম মন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি আব্দুর রব সেরনিয়াবাতকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টই হত্যা করা হয়।

বিস্ময়কর যে, বঙ্গবন্ধুকে তাঁর সহচররা দারুণ প্রতিদান দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর লাশ কোথায় সমাহিত করা হবে সে নিয়েও মন্ত্রিসভার বৈঠকে আলোচনা হয়েছিলো। কিন্তু কেউ মুখ খুলেননি মোশতাক মতামত না পেয়ে বলেন,” শেখ মুজিবের লাশ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় দাফন করা হোক, পিতা-মাতার কবরের পাশে। মরদেহের সঙ্গে মন্ত্রীসভার সদস্যদের যে কেউ যেতে চাইলে যেতে পারেন।” দেখা গেল যাওয়ার জন্য একজনও পাওয়া গেলো না।

এতেই মনের জোর বেড়ে যায় মোশতাকের। প্রতিমন্ত্রী শাহ মোয়াজ্জেম বলেন, সে সময় একজন মেজর বলে ওঠে “আমরা শেখ মুজিবকে বিশ্বাসঘাতক হিসাবে হত্যা করেছি, কোনো মর্যাদা তার প্রাপ্য নয়।” রাষ্ট্রপতি মোশতাক তখন বলেন, ” Well,in that case you take over. If I am the President you have to carry out my orders. শাহ মোয়াজ্জেমের মতে সেনা কর্মকর্তাররা কিছুক্ষণ গাঁইগুঁই করে রাষ্ট্রপতির কথা মতো বঙ্গবন্ধুরর লাশ হেলিকপ্টারে করে টুঙ্গিপাড়ায় নিয়ে কবরস্থ করা হয়।
স্বাধীনতার মহানায়কের লাশ গোসল ছাড়া কবর দিতে চাইলে স্থানীয় এক মৌলভী সাহস করে অসম্মতি জানান। ৫৭০ কাপড়কাচা সাবান দিয়ে গোসল শেষে মার্কিন কাপড়ে জড়িয়ে পবিত্র নামাজে জানাজার পর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সমাহিত করা হয়।

লেখকঃ সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিস্ট ও ইতিহাস বিশেষজ্ঞ।