‘বন্যার্ত এলাকায় ঘরে ঘরে খাদ্য সহায়তাসহ রোপা আমানের বীজ পৌছে দিয়েছে কৃষকদল ’

আপডেট: জুলাই ২০, ২০২২
0

দেশ বিদেশে ‘আমাদের বাবুল ভাই’ নামে তরুন প্রজন্মের কাছে তুমুল জনপ্রিয় একজন নেতা।
ছাত্রদলের সাবেক এই কর্মী ছাত্রদলের সোনালী ফসলের একজন। তিনি ছাত্রদলের সহসভাপতি এবং পরবর্তীতে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।

এই নেতা বর্তমানে বিএনপি ঢাকা বিভাগীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন।

কৃষক দল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাধারন সম্পাদক হিসেবে সারাদেশে কৃষক দলকে বিএনপির ব্র‍্যান্ডিং এবং ট্রেন্ডিং করেছেন। সফলতা পেয়েছেন দেশের সকল জেলায়। আমি দীর্ঘদিন তাকে পর্যবেক্ষণ করেছি নিবিড়ভাবে। খড়ায় কৃষক গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন,এমন খবর শুনে কৃষক পরিবারগুলোকে সহায়তার জন্য পাশে দাঁড়িয়েছেন বাবুল ও তার টিম। আবার বন্যায় যখন সিলেট সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের অবস্থা নাকাল তখনও তিনি কৃষকদল ও তার টিমকে নিয়ে ত্রান দিয়ে গেছেন দিনের পর দিন। কথায় কথায় তিনি জানালেন, বন্যা পরবর্তীতে কৃষক যেন বীজ সংকটে না পরেন সেজন্য খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি কৃষি পুনর্বাসনে তার দল ভুমিকা রাখছে। ঘরে ঘরে রোপা আমনের বীজ পৌছে দেয়া হচ্ছে একজন কৃষিবিদের ত্বত্ত্বাবধানে। দল বল কিংবা কোন কাজ, সেটা যদি সাসটেইনেবল না হয় তবে তার মুল্যায়ন থাকে না। আজ বা কাল এর পচন ধরে। বাবুল অকপটে অনেক কথাই বলার সাহস রাখেন।

অতি সম্প্রতি বাবুল ভাইয়ের সাথে বিস্তারিত কথা হয়। বিষয়বস্তু সম সাময়িক প্রেক্ষাপট, আগামী নির্বাচন সহ নানান বিষয় নিয়ে। ইন্টারভিওটি গ্রহন করেন দেশ জনতার নির্বাহী সম্পাদক ( https://deshjanata.com ) ডাঃ জাকারিয়া চৌধুরী। নিম্নে সেসব আলোচনা হুহহু তুলে ধরা হল।

দেশ জনতাঃ বিএনপি ঢাকা বিভাগীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক এবং কৃষক দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাধারন সম্পাদক হিসেবে দেশের প্রায় সব প্রান্তেই আপনার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। কি মনে করেন? কেমন আছে তৃণমুল ? কেমন আছে বিএনপি ?

বাবুলঃ রাজনীতিটা হলো মানুষের জন্য। মানুষের কল্যাণের জন্যে। সে হিসেবে বিএনপি ইজ ইন দ্যা রাইট ট্র‍্যাক, সঠিক পথেই আছে বিএনপি। ১৯৭৮ সালে শহীদ জিয়াউর রহমান যে বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, সে দল নানান ঘাত প্রতিঘাত সহ্য করে যুগ যুগ ধরে বর্তমান অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে। রাজনীতি যদি মানুষের কল্যানকেন্দ্রিক হয় তবে বলা যায় এটাই বিএনপির সর্বশ্রেষ্ঠ অবস্থান। নানান ঝড়, অত্যাচার, নিপীড়ন সয়েই দলটি আপামর জনগনের মনে একটি স্থায়ী ভিত্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে….

। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর অনেকেই দলটির অস্তিত্ব থাকা না থাকা নিয়ে সন্দিহান ছিল। তারা ভেবেছিল দলটির অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে। কিন্তু হয়েছিল তার উলটো। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দলের দায়িত্বভার গ্রহন করার পর দীর্ঘ নয় বছর স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলন করেছেন। এরশাদকে বিদেয় করে একটা ফ্রি ফেয়ার ইলেকশনের মাধ্যমে ১৯৯১ সালে দেশের প্রধানমন্ত্রী হন বেগম জিয়া। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন এখনো চলমান আছে। তাদেরও পতন হবে। ইতিহাস যুগে যুগে এ রকম উদাহরন রেখে গেছে। কিন্তু কোন স্বৈরাচার শেষ পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিল এমন রেকর্ড নেই। ফলে বিএনপি আছে, থাকবে। সত্য এটাই।

দেশ জনতাঃ যে গনতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে দীর্ঘ নয় বছর বিরামহীন সংগ্রাম করতে হল, সেই গনতন্ত্র কি হারিয়ে গেল ??

বাবুলঃ সংসদীয় গনতন্ত্রের শুভযাত্রা এবং যে সু বাতাস বেগম জিয়ার হাত ধরে শুরু হয়েছিল, সেটিকে নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। গনতন্ত্র আজকে একটা দানবীয় শক্তির হাতে বন্দী। দেশের মানুষের মৌলিক অধিকার, ভোটাধিকার, গনতান্ত্রিক অধিকার, মুল্যবোধ কিচ্ছু অবশিষ্ট আছে বলে মনে হয় না। একচ্যুয়াল গনতন্ত্র বলতে যা মিন করে তার ছিটেফোঁটাও আজ আর দেশে নেই। এদেশের কতিপয় সংখ্যালঘু ( ধর্মের ভিত্তিতে নয় ) মানুষ আর তাদের পেটোয়া বাহিনীই নিয়ন্ত্রন করছে আজকের বাংলাদেশকে। অক্টোপাসের মত শুষে নিচ্ছে দেশের সব সেক্টরকে।

দেশ জনতাঃ এক সময় অল্প কিছু মানুষ আর তাদের দালাল ও সহযোগীদের নিয়ে উপমহাদেশটা দখল করে ফেলেছিল। বাংলাদেশ এখন যে অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে অনেকটা তেমন-ই যেন… এটা অবশ্য তারা তাদের যোগ্যতার প্রমান হিসেবে দেখে, বিশ্বকে দেখাতে চায়। কি মনে করেন ?

বাবুলঃ দেখো, যোগ্যতার মাপকাঠি একেকজনের চোখে একেক রকম। একেক দেশে একেক রকম ডেফিনেশন। ধরো, ২৫/৩০ জনের একটা টিম কোথাও হামলা, লুটপাট, অগ্নি সংযোগ, ধর্ষণ করল। যাকে সামনে পেলো তাকেই হত্যা করল। রাত শেষে দেখা গেল তারা ভাগে প্রচুর নগদ অর্থ, সোনা-দানা, মনি মানিক পেয়েছে। তারা এতই খুশি হলো যে, আগের রাতে তারা কে কি করেছে সে কথা বেমালুম ভুলে গেল। নিজের বাড়ির উঠানে গিয়ে চিৎকার করে বলল- দেখো, একরাতে কত কি নিয়ে এসছি। এটাই আমাদের যোগ্যতা !

আসলে কি তাই ? এখানে যারা লুন্ঠিত হল, ধর্ষিত হল, বিনাবিচারে গনহত্যার শিকার হল, বাড়ি ঘর জ্বালিয়ে দেয়া হল, গুম হল, নিঃস্ব হয়ে পথের ভিখারি হয়ে গেল তাদের চোখে কি আগের রাতের ডাকাতেরা কখনো হিরো হবে? কখনোই না। এরা বরং তলোয়ারের মত মানুষের মনে ততদিন বিধে থাকবে যতদিন পর্যন্ত না পুরো জাতি এইসব বেনিয়াদের বানানো শৃংখল থেকে মুক্ত হতে পারে। ডাকাত কিংবা খুনীদেরকে মানুষ সেই চোখেই দেখে যে চোখে তাদের দেখা উচিত।

দেশজনতাঃ বিএনপি কি সমন্বিত ? মাঝে মাঝে মনে হয় বিএনপিতে সমন্বয়ের অভাব আছে। কেউ হয়ত মুখে কিছু বলছে না। তবু মনে হয় আমরা কি কোনো যুদ্ধাবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি??

বাবুলঃ একটা বড় রাজনৈতিক দলে নানান পথ, নানান মত, উপমত থাকবে। এটাই শুদ্ধ গনতান্ত্রিক চর্চা। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বহুমতের সম্মেলনের মাধ্যমে এই দলটি গঠন করেছিলেন। একজন মানুষ হয়েও যেন তিনি দশ হাতে দলে সামলেছেন। সব সময় সবচে ভাল সিদ্ধান্তটা পিক করতেন। সমন্বয় করতেন। বেগম খালেদা জিয়াও তাই করেছেন। জনাব তারেক রহমানও সকল পথ মতের মানুষের কথা শুনেই সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন। একটা দলে অহিংস মানুষ থাকে, সহিংস মানুষও থাকে। উগ্রতা, নমনীয়তা, ডান, বাম সব মিলিয়েই একটা রাজনৈতিক দল। আর সবার মতের সমন্বিত রুপই গনতন্ত্র ও এর সৌন্দর্য।

বাস্তবতাকে যদি একটা যুদ্ধ ভাবো তবে বলি, এখন যে যুদ্ধটা চলছে বলছো – তা এক ধরনের সত্য আর মিথ্যার চিরায়ত যুদ্ধের মত না কিন্তু। এখানে শিক্ষিত লোকেরাও দেশপ্রেমের চেয়ে নিজের স্বার্থ আর নিরাপত্তাকে বড় করে দেখে মনে হতে পারে । সমাজ ধ্বসে গেলে নৈতিকতার বালাই থাকে না।

দেশজনতাঃ তাই বলে দেশপ্রেম ভুলে ?

( এখানে দেশপ্রেমের চর্চা চলেনা। চলে কই ? অথবা আমার জানা নেই। এদেশের দেশপ্রেমিকদেরকে আমি ব্যাক্তিগতভাবে বিশ্বাস করিনা। এখানে ইন্ট্যেলেকচ্যুয়াল সমাজও বিভক্ত প্রায়। স্বার্থ আগে দায়িত্ব পরে – নীতিতে চলে সবাই। বিভক্তি কোথায় নেই ? )

বাবুলঃ তারপরেও এ যুদ্ধটা কতদিন চলবে জানো ? আমাদের সকল অগ্রজ এ যুদ্ধে যদি নিঃশেষও হয়ে যায় তখনও কিন্তু যুদ্ধটা জারি থাকবে। তখন হয়ত আমাদের জেনারেশন হবে ফ্রন্ট লাইনার; তারপর কিছুটা ম্লান হেসে বললেন তারপর হয়ত তোমাদের জেনারেশন । তিনি আমার দিকে তাকালেন। কোন প্রতিক্রিয়া আশা করেছিলেন কিনা কে জানে ! আমি দুই আনার মানুষ, অচিন এশের লোক। চুপ থাকলাম।

– সব কিছুর পরেও আলো আসবে-ই। নেতা থামলেন…………

দেশজনতাঃ বিএনপি কি ইলেকশনে যাবে?

বাবুলঃ বিএনপি আগে আন্দোলনে যাবে। একটা ফ্রি, ফেয়ার এবং ক্রেডেনশিয়াল ইলেকশনের নিশ্চয়তা চায় বিএনপি। আর সেটা কোন ভাবেই আওয়ামীলীগের অধীনে নয়। আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা হবে, তারপরে নির্বাচনী ভাবনা। এ ছাড়া অন্য কোনো পথেই যাবে না বিএনপি।

দেশজনতাঃ মুল্যবান সময় দিয়েছেন। আপনাকে ধন্যবাদ।

বাবুলঃ আপনাকেও ধন্যবাদ।