বরগুনায় প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মসজিদের ৩০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

আপডেট: মে ৩১, ২০২৩
0

গোলাম কিবরিয়া বরগুনা :

বরগুনায় ৩০ টি মসজিদের নামে ৩০ লাখ টাকা সরকারী বরাদ্ধের পুরো টাকাই আত্মসাৎ করার অভাযোগ পাওয়া গেছে বরগুনা সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো: জিয়াউর ররহমানের বিরুদ্ধে। প্রকল্পের চেয়ারম্যানরা (সিপিসি) বলেছেন মসজিদের নামে বরাদ্ধকৃত টাকা তারা আদৌ পায়নি।
জানা যায়, বরগুনা সদর উপজেলায় ১০ টি ইউনিয়নে ৩০ টি জামে মসজিদে ২০২১-২২ অর্থ বছরে গ্রামীন অবকাঠামো রক্ষনাবেক্ষন (টিআর) কর্মসূচীর আওতায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর থেকে ২০২২ সালের ১৯ জুন বরগুনা জেলা প্রশাসক বরাবরে ৩০ টি মসজিদের অনুকুলে এক লাখ টাকা করে ৩০ লাখ টাকা বরাদ্ধের চিঠি আসে। ওই চিঠিতে প্রকল্পের কাজের শেষ সময়সীমা বেধে দেয় ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। নির্ধারিত তারিখের আগে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো: জিয়াউর রহমান স্ব স্ব প্রকল্প চেয়ারম্যানদের (সিপিসি) অফিসে ডেকে মাস্টার রোল জমা নেয়। অনেক প্রকল্প চেয়ারম্যানদের কাছ থেকে চেক না দিয়ে চেক প্রাপ্তির স্বাক্ষরও রাখেন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা। আবার কিছু স্বাক্ষর জ্বাল করেন ওই প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা। প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো: জিয়াউর রহমান বরগুনা পুবালী ব্যাংক শাখা থেকে ৩০ টি প্রকল্পের ৩০ লাখ টাকা উত্তোলন করারও অভিযোগ রয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: কাওছার হোসেন ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো: জিয়াউর রহমানের যৌথ স্বাক্ষরে ২০২২ সালের ২০ জুন ৩০ লাখ টাকা এক সঙ্গে দুই কিস্তিতে বিতরণ দেখালেও সেই টাকা মসজিদ কমিটি বা প্রকল্প চেয়ারম্যানদের (সিপিসি) হাতে পৌছেনি।

বরগুনা জেলা হিসাব রক্ষন অফিস থেকে জানা যায়, ওই ৩০ টি মসজিদের অনুকুলে ৩০ লাখ টাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার পূবালী ব্যাংক লিমিটেড বরগুনা শাখায় যৌথ একাউন্টে ২০২২ সালের ৩০ জুনের আগেই জমা হয়েছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বরগুনা সদর উপজেলার উত্তর খাজুরা মাদ্রাসা সংলগ্ন জামে মসজিদ সংস্কারের জন্য এক লাখ টাকা টিআর বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রকল্প চেয়ারম্যান (সিপিসি) মাওলানা আবু ইউসুফ বলেন, টিআর বরাদ্ধের কথা শুনে ঋণ নিয়ে মসজিদের টিনের চাল মেরামত করেছি। পিআইও মো: জিয়াউর রহমান কাজ পরিদর্শন করে বরাদ্দকৃত অর্থ প্রদান করবেন বলে আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন। আমি নির্ধারিত সময়ে রেজুলিউশনসহ সকল কাগজপত্র পিআইও অফিসে জমা দিয়েছি। পরবর্তীতে পিআইও অফিসে অনেক ঘোরাঘুরি করেছি। পিআইও বরাদ্দের টাকা আমাদের দেয়নি। এখন শুনি পিআইও আমার স্বাক্ষর জাল করে টাকা উত্তোলন করেছেন। নলী চরকগাছিয়া আকুব বাড়ী জামে মসজিদের সিপিসি আবদুল আলীম, নলি চরকগাছিয়া মৃধা বাড়ী জামে মসজিদের সিপিসি আবদুস সালাম, নলি চরকগাছিয়া আকন বাড়ী জামে মসজিদের সিপিসি মো: সিদ্দিকুর রহমান, রক্ষাচন্ডী মৃধা বাড়ী জামে মসজিদের সিপিসি আমিরুল ইসলাম ও পূর্ব গুদিঘাটা কামিল মাদ্রাসা সংলগ্ন জামে মসজিদের সিপিসি মো: ইলিয়াস

সবাই একই কথা বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো: জিয়াউর রহমান আমাদের কোন টাকা দেয়নি।
প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো: জিয়াউর রহমান বলেন, আমরা জুন মাসে প্রথম কিস্তিতে অর্ধেক টাকা ছাড় দিয়েছি। বিভিন্ন মসজিদ কমিটি নিয়ে ঝামেলা হবার কারনে বাকি টাকা দিতে পারিনি। বাকি টাকা আমার ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার যৌথ একাউন্টে রয়েছে। কোনো মসজিদে টাকা দেওয়া হয়নি এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা অর্ধেক টাকা দিয়েছি। বাকি টাকা আমাদের একাউন্টে রয়েছে।
এ বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: কাওছার হোসেন বলেন, আমরা সব টাকা প্রকল্প চেয়ারম্যানদের নিকট হস্তান্তর করেছি। ২/১ টি মসজিদে ঝামেলা আছে। সেই টাকা হয়ত বা আমাদের একাউন্টে জমা আছে। ২০২১-২২ অর্থ বছরের টাকা কী ভাবে জমা থাকে জানতে চাইলে তিনি বলেন, টাকা কি আমরা ফেলে দিব। টাকা তো একাউন্টে রয়েছে। কত টাকা আমাদের একাউন্টে থাকে। প্রকল্প চেয়ারম্যানরা আদৌ টাকা পায়নি। এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি সব কিছু দেখে বলতে পারবেন।

গোলাম কিবরিয়া।
বরগুনা জেলা প্রতিনিধি।
তারিখ : ৩০.৫.২০২৩ খ্রি: