বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ায় বেশি পরীক্ষার মুখে ভারতের কূটনীতি

আপডেট: জুলাই ১৫, ২০২১
0

ভারতের জন্য ভিন্ন ভিন্ন চ্যালেঞ্জ উপস্থাপন করছে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ। আফগান পরিস্থিতির কারণে পাকিস্তান আরও অনেকটা অনিশ্চিত অবস্থায়। সম্ভবত এই মুহূর্তটা দক্ষিণ এশিয়া ‘গেমের’ পুরনো কিছু নিয়ম নতুন করে লেখার। ভারতের প্রভাবশালী পত্রিকা টাইমস অব ইন্ডিয়ার সম্পাদকীয়তে এসব কথা বলা হয়েছে। টাইমস অব ইন্ডিয়া বলেছে , ” উত্তেজনার মধ্যে রয়েছে ভারতের প্রতিবেশীরা। সম্প্রসারণবাদী চীন সর্বত্র বিস্তৃত। আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। একদিকে এসবের বড় রকম প্রভাব রয়েছে, অন্যদিকে নেপালে সবেমাত্র আরেকটি সরকারের পরিবর্তন প্রত্যক্ষ করা হচ্ছে।”

এতে আরও বলা হয়, আফগানিস্তানে দীর্ঘ সময় জাতীয় সরকারকে সমর্থন করেছে ভারত। সেখানে তালেবানদেরকে বোধগম্যতার অধীনে নিয়ে কিছুটা কাজ শুরু করা উচিত। উপরন্তু বিভিন্ন উপায়ে ইরান ও পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত হওয়া উচিত ভারতের। কারণ, তারা আফগানিস্তানের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে। অন্যদিকে নেপালে যখন সরকারের পালাবদল হচ্ছে, এর অর্থ হলো ভারতকে স্মার্টভাবে নিরপেক্ষ অবস্থান দেখানো উচিত এবং যিনিই ক্ষমতায় আসুন তার সঙ্গেই কাজ করা উচিত। এক্ষেত্রে কাউকে প্রিয় বানিয়ে নেয়া উচিত নয়, যেমনটা কাউকে ফেভারিট বা প্রিয় তকমা দেয়া হয়েছিল এর আগে। কিন্তু তা অনেক সময় এবং সবসময় সুখকর পরিণতি বয়ে আনে না। শ্রীলঙ্কায় কিন্তু এরই মধ্যে ‘রিয়েলপলিটিকে’ অংশত পরিবর্তন করা হয়েছে, যেখানে রাজাপাকসে পরিবার দৃঢ়ভাবে জেঁকে বসেছে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট আলাদা। একদিকে বর্তমান সরকার ভারতের সবচেয়ে মূল্যবান মিত্র। অন্যদিকে এ দেশটির অর্থনীতির রয়েছে সফলতার কাহিনী। ভারতের মতোই এখানে রাজনীতি গভীরভাবে মেরুকরণ করা। ভারতের মতোই এখানেও টিকার সঙ্কট দেখা দিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ভারতের যে মঙ্গলময় ইমেজ, তা কিছুটা তিক্ত হয়ে উঠেছে। কারণ, তারা ঢাকার যে চাহিদা- সেই পরিমাণ টিকা সরবরাহ দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এখানে চ্যালেঞ্জ হলো এই জটিল সময়ে প্রভাব বজায় রাখা এবং সিদ্ধান্ত নেয়া যে, বিএনপির সঙ্গে কি করবে ভারত, যারা দীর্ঘদিন দিল্লির দিকে মুখ করে আছে।

বিষয়টি আরো জটিল মালদ্বীপের ক্ষেত্রে। সেখানে কারাগারে থাকা সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ ইয়ামিন ভারতের সহায়তা চান। কিন্তু তিনি যখন ক্ষমতায় ছিলেন তখন বেইজিংয়ের দিকে ঝোঁক ছিল তার। সেটাই এ বিষয়টিকে জটিল করে তুলেছে। এখানে চীনের পরবর্তী পদক্ষেপ কি তার ওপর ভিত্তি করে শীতল ‘রিয়েলপলিটিক’ করা যেতে পারে।

ভারতকে অবশ্যই স্মরণে রাখতে হবে যে, যেসব দেশে স্বার্থ আছে, সেখানে কে ক্ষমতায় তার প্রতি কোনো তোয়াক্কা করে না চীন। আফগানিস্তানে তারা সেই নীতি প্রয়োগ করে। তা সত্ত্বেও ভারতের এখনও একটি ভাল সুযোগ আছে। একদিকে চীনের ঋণের কারণে পাকিস্তানের রয়েছে দৃঢ়ভাবে সমালোচনাহীন নীতি, অন্যদিকে চীন যেভাবে এগিয়ে আসছে তা নিয়ে ক্রমবর্ধমান হারে প্রশ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। এক্ষেত্রে গভীর সমুদ্র বন্দরে চীনা বিনিয়োগ অনুমোদন না দেয়ার বাংলাদেশি সিদ্ধান্ত একটি ভাল উদাহরণ। শ্রীলঙ্কা আরেকটি দেশ, যেখানে চীনের রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ সম্পর্কে কৌশলগতভাবে বৈপরীত্য ব্যবহার করতে পারে ভারত। চীনের চেয়ে ভারতের সম্পদ (রিসোর্স) অনেক কম। এ জন্যই কূটনীতিটা হতে হবে আরো স্মার্ট।