বাংলাদেশের ইতিহাস ও কারাগারের নাম এক সঙ্গে মিশে আছে— স্বরাষ্ট্র সচিব

আপডেট: জুলাই ২৯, ২০২১
0

৫৮তম কারারক্ষী বুনিয়াদী প্রশিক্ষণ কোর্সের সমাপনী অনুষ্ঠান :

গাজীপুর সংবাদদাতাঃ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (সুরক্ষা) মো. মোকাব্বির হোসেন বলেছেন, জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার জীবন ও যৌবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সময় কাটিয়েছেন কারাগারে চার দেয়ালের ভেতরে। কারাগারে বসেই তিনি বাংলাদেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কারাগারেই শহীদ হয়েছেন জাতীয় চার নেতা।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে শেখ হাসিনা দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার বিভিন্ন আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে একাধিকবার কারাবরণ করেছেন। তাই স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাস ও কারাগারের নাম একসঙ্গে মিশে আছে।

তিনি বলেন, কারা অভ্যন্তর হতে জঙ্গি ও শীর্ষ সন্ত্রাসীরা যেন কোনরূপ সমাজ ও রাষ্ট্র বিরোধী তৎপরতা চালাতে না পারে সেলক্ষ্যে কারাগারের সক্ষমতা বাড়াতে কারা নিরাপত্তা আধুনিকায়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন চলমান রয়েছে। কারা ব্যবস্থাপনাকে আধুনিকায়ন করতে ’বাংলাদেশ প্রিজন্স এন্ড কারেকশনাল এ্যাক্ট’ প্রনয়নের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে।

কারা সচিব আরো বলেন, কারাবন্দিদের বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের সংশোধন ও পূনর্বাসনের পথ উন্মোচিত হচ্ছে। ২০১৪ সালের জুলাই হতে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত ৩৯টি ট্রেডে মোট ৫০হাজার ৭১জন বন্দিকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। আর কারাগারে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এসব কারান্দিদের দ্বারা উৎপাদিত পন্যের লভাংশের ৫০শতাংশ বন্দিদের দেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে এ বছরের জুন পর্যন্ত ৩৩হাজার ৭২৭ জন বন্দিকে ৯১ লাখ ৯০হাজার ৯৩৪টাকা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দিদের পূনর্বাসনের জন্য সরকার জীবিকায়ন সামগ্রী প্রদানের ব্যবস্থাসহ কারাবন্দি সন্তানদের বঙ্গবন্ধু বৃত্তি প্রদান করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সকালে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারা কমপ্লেক্সের প্যারেড গ্রাউন্ডে নবীন রিক্রুট ৫৮তম ব্যাচের কারারক্ষীদের বুনিয়াদী প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ ও শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্র সচিব এসব কথা বলেন।

স্বরাষ্ট্র সচিব বলেন, কারা বন্দিদের খাবারের জন্য বরাদ্দ বৃদ্ধি, খোরাকী ভাতা বৃদ্ধিসহ যুগান্তকারী নানা সুযোগ-সুবিধা যৌক্তিকভাবে বৃদ্ধি করা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে বন্দিরা পরিবারের সঙ্গে প্রতি সপ্তাহে ১০মিনিট করে টেলিফোনে কথা বলার সুযোগ পাচ্ছে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, কারাগারকে সংশোধনাগারে রূপান্তরিত করতে শুধু বন্দিদের উন্নয়নই নয়, পাশাপাশি কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রশিক্ষণের উপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এ জন্য রাজশাহী কারা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ কাজ চলছে এবং ঢাকার কেরানীগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কারা প্রশিক্ষণ একাডেমি নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

অনুষ্ঠানে কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মোমিনুর রহমান মামুন, অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল আবরার হোসেন, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এসএম তরিকুল ইসলাম, সিভিল সার্জন মো. খায়রুজ্জামান, ময়মনসিংহ বিভাগের কারা উপ-মহাপরিদর্শক মোঃ জাহাঙ্গীর কবীর, ঢাকা বিভাগের কারা উপ-মহাপরিদর্শক মোঃ তৌহিদুল ইসলাম, রাজশাহী বিভাগের কারা উপ-মহাপরিদর্শক অসীম কান্ত পাল, প্রশিক্ষণ একাডেমির ভারপ্রাপ্ত কমান্ড্যান্ট সুরাইয়া আক্তার, এ বুনিয়াদী প্রশিক্ষণের প্রধান প্রশিক্ষক ও কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২-এর জ্যেষ্ঠ জেল সুপার মো. আব্দুল জলিল, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১ এর সুপার (চলতি দয়িত্ব) ও কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার মোঃ গিয়াস উদ্দিন, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারের সুপার হালিমা খাতুন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

ছয় মাস ব্যাপী ৫৮তম কারারক্ষী ব্যাচের প্রশিক্ষণে ৩১৮ জন প্রশিক্ষনাথর্ী অংশগ্রহণ করেন। তাদের মধ্যে ৩১৪জন পুরুষ এবং ৪ জন মহিলা কারারক্ষী রয়েছেন। এবারের প্রশিক্ষণে কৃতিত্বের জন্য চারজন কারারক্ষীকে পুরস্কৃত করা হয়। তাদের মধ্যে সর্ববিষয়ে ১ম স্থান অধিকার করায় রংপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের নবীন কারারক্ষী মো. সাইদ হাসান, পিটিতে ১ম স্থান অধিকার করায় চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের নবীন কারারক্ষী মো. নাজমুল হোসেন, বেস্ট ফায়ারার হিসেবে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের নবীন কারারক্ষী মো. মেহেদী হাসন এবং ড্রিলে ১ম স্থান নির্বাচিত হওয়ায় চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের নবীন কারারক্ষী মো. রফিকুল ইসলামকে ক্রেষ্ট প্রদান করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি।

অতিথিরা অনুষ্ঠানস্থলে রিক্রুটদের ধীরগতিতে ও জলদি গতিতে মার্চ পাস্ট, ব্যান্ড দলের মার্চ পাস্ট ও কুচকাওয়াজ, আন-আর্মড কম্ব্যাট ডিসপ্লে ও মনোজ্ঞ পিটি ডিসপ্লে উপভোগ করেন।