“বাংলাদেশে স্বাধীনতা ও মুক্তি সংগ্রামে মওলানা ভাসানী” শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

আপডেট: নভেম্বর ১৯, ২০২১
0


‘মওলানা ভাসানীর কৃষক সমিতি’ গ্রন্থের মোড়ক উম্মোচন।

গণসংহতি আন্দোলন কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির উদ্যোগে আজ ১৯ নভেম্বর ২০২১, শুক্রবার বিকেল ৪টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে মওলানা ভাসানীর ৪৫তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে “বাংলাদেশে স্বাধীনতা ও মুক্তি সংগ্রামে মওলানা ভাসানী” শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত এবং ‘মওলানা ভাসানীর কৃষক সমিতি’ গ্রন্থের মোড়ক উম্মোচিত হয়। গণসংহতি আন্দোলন কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী জননেতা জোনায়েদ সাকির সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আলোচনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, দি ডেইলি নিউ এজ এর সম্পাদক নূরুল কবীর এবং গ্রন্থটির সম্পাদক ও মওলানা ভাসানীর ব্যক্তিগত সচিব সৈয়দ ইরফানুল বারী প্রমুখ।

আলোচনা সভায় সংহতি প্রকাশনের সম্পাদকমণ্ডলীর অন্যতম সদস্য ফিরোজ আহমেদ সকলকে শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন বাংলাদেশের অভুদ্যয়ের অন্যতম এই নেতাকে নিয়ে ইতিপূর্বেও সংহতি আরো ৩টি বই ( মওলানা ভাসানীর লেখা ‘মাও সেতুঙ এর দেশে’, মওলানা ভাসানীকে নিয়ে লেখা ‘রেডরেড মওলানা’, ‘ডিপোজিং অব এ ডিক্টেটর’) প্রকাশ করেছে।
বইটির সম্পাদক সৈয়দ ইরফানুল বারী বলেন, ভাসানীর সাথে কাজের অভিজ্ঞতার কথা বলেন। মেহনতি মানুষের সাথে মধ্যবিত্ত ছাত্রদের যে নিবেদন এবং কীভাবে তারা কর্মী হয়ে ওইসময়ে রাজনীতিতে অবদান রাখতে পেরেছিলেন সেগুলো বর্ণনা করেন।
নূরুল কবীর বলেন, স্বাধীনতা ও মুক্তিসংগ্রামের ধারণা আলাদা, ভাসানীর তাৎপর্য হলো তিনি দুটো সংগ্রামই নেতৃত্ব দিয়েছেন।

আনু মুহাম্মদ বলেন, ইতিহাসের ওপর জবরদস্তি চলছে। সরকারি ভাষ্যের বাইরে ইতিহাসবিদ, গবেষক, পোষ্য লেখকরা লিখতে সাহস করেন না। বাংলাদেশের রাজনীতি এবং গণমানুষের সংগ্রামে ভাসানীর অবদানকে ওরা আড়াল করে।

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, মুক্তিসংগ্রামের প্রতিটি ধাপের ইতিহাসে ভাসানী অবিচ্ছেদ্য। গণরাজনীতিতে অনেক কর্মযজ্ঞ এবং ভাষা তৈরি করেছেন। ঘেরাও, বয়কট আন্দোলন, নতুন স্লোগান, নির্বাচন বয়কট ইত্যাদি। নতুন স্লোগান যেমন কেউ খাবে তো কেউ খাবে না তা হবে না তা হবে না। সবাইকে নিয়ে ভাগ করে খেতে হবে সে-কথাটাই সহজ করে বলেছেন তিনি। কিংবা আরেকটা বিপ্লবী স্লোগান ছিল ‘শ্রমিক কৃষক অস্ত্র ধর পূর্ব-বাংলা স্বাধীন করো’।
মওলানা মানুষের বুকের ভাষা বুঝতেন, চোখের আগুন পড়তে পারতেন। সেজন্য পাকিস্তান ও বাংলাদেশ বড় বড় আন্দোলন এবং অভ্যুত্থানগুলো তার নেতৃত্বেই হয়েছে। মওলানার আজন্ম-বিপ্লবীর চরিত্রটাকে এখন আমাদের চিনতে হবে।

সভাপতির ভাষণে জোনায়েদ সাকি বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসের মূলধারা নামে যা বিকৃত করে চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে তা একদিন ইতিহাস আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবে। গদিরক্ষা করাই যখন সরকারের প্রধান কাজ হয়ে ওঠে ও তারই প্রেক্ষিতে রচিত ইতিহাস চাপানো হয় তখনই দেশ ভয়াবহ বিপদে পড়ে।

সাকি আরো বলেন, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ পর্বে গণমানুষের স্বার্থ রক্ষা করতে দাবিদার বামপন্থীরা তো সেকাজ করতে পারেনই নাই বরং মধ্যবিত্তদের আবহে কাজ করে গেছেন।

মওলানা কখনো বদলাননি, গণমানুষের পক্ষ ছাড়েননি, সবক্ষেত্রেই কৃষক, শ্রমিকের মুক্তির সন্ধান করেছেন। বরং প্রয়োজনে নিজের প্রতিষ্ঠিত দল গণমানুষের স্বার্থবিরোধী হয়ে গেলে সে দলগুলো বারবার ত্যাগ করেছিলেন।
তিনি আরো বলেন, শেখ মুজিব কার্যত মওলানা ভাসানীর চিন্তার রাজনীতিকেই বাংলাদেশে করে গেছেন।
জোনায়েদ সাকি বলেন, ক্ষমতাকে জমিদারি যে ভাবা হয় সেটা ৭২ এর সংবিধান প্রণয়নের মাধ্যমেই শুরু হয়েছিল। এই দেশকে টেকাতে হলে সংবিধানের গণতান্ত্রিক পরিবর্তন এবং এই রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তর দরকার। মওলানা ‘পালনবাদে’ মনে করতেন, মানুষ যে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করবে সেখানে প্রত্যেকটা মানুষের হক আদায় করতে হবে, প্রকৃতির প্রত্যেকটি সদস্যের হককে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। কাজেই মওলানাকে গণমানুষের রাজনীতি দিয়ে বুঝতে হবে।