বাংলাদেশ ২০২৬ সালের মধ্যেই উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবে– রাষ্ট্রপতি

আপডেট: নভেম্বর ৪, ২০২১
0

বাংলাদেশ ২০২৬ সালে চূড়ান্তভাবে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ‘রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার ২০১৯ ‘প্রদান উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ এক ভাষণে এ আশা প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, যিনি আমাদেরকে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ উপহার দিয়ে বিশ্বসভায় মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন। কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করছি দেশের সকল সূর্যসন্তান ভাষা শহীদসহ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের।

রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার ২০১৯’ পেয়েছে ১৯টি শিল্প প্রতিষ্ঠান। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন , পরিকল্পনা মন্ত্রী এম. এ. মান্নান এমপি, শিল্পমন্ত্রী জনাব নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এমপি, মাননীয় শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার এমপি । অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা ।

অনুষ্ঠানে ভাষণে রাষ্ট্রপতি আরো বলেন, ‘কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে অর্থনীতির প্রাণ কৃষি হলেও দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য কৃষির পাশাপাশি শিল্পখাতের উন্নয়ন অনস্বীকার্য। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৬ সালে কোয়ালিশন সরকারের শিল্প, বাণিজ্য, শ্রম, দুর্নীতি দমন ও গ্রাম সহায়তা দপ্তরের মন্ত্রী থাকাকালে অর্থনৈতিক বৈষম্য নিরসনকল্পে তৃণমূল পর্যায়ে শ্রমঘন শিল্প প্রতিষ্ঠার সূচনা করেন।

স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে অন্যান্য সেক্টরের মতো শিল্পখাতও ব্যাপক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে শিল্প খাতকে মজবুত ভিত্তির ওপর দাঁড় করানোর জন্য বঙ্গবন্ধু দেশীয় কাচাঁমাল নির্ভর শিল্প কারখানা গড়ে তোলার মাধ্যমে শিল্পায়নের ধারাকে বেগবান করার উদ্যোগ নেন। তিনি সকল বৃহৎ শিল্প কারখানা জাতীয়করণ করে এসব শিল্প কারখানা ব্যবস্থাপনার উন্নয়নের উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক দর্শনের আলোকেই বর্তমানে বাংলাদেশের শিল্পায়নের ধারা এগিয়ে যাচ্ছে।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে শিল্পোন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার’ প্রদান একটি প্রশংসনীয় পদক্ষেপ।

বেসরকারি খাতের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও সৃজনশীলতাকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে শিল্প মন্ত্রণালয় প্রতি বছর বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে এ পুরস্কার প্রদান করে আসছে। আমি সম্মাননাপ্রাপ্ত সকল শিল্প প্রতিষ্ঠান ও শিল্পোদ্যোক্তাকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই। আমি আশা করি, এ উদ্যোগ জ্ঞানভিত্তিক শিল্পায়নের চলমান ধারাকে আরো সুসংহত করবে এবং সামগ্রিক জাতীয় অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে ইতিবাচক অবদান রাখবে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য উত্তরাধিকার, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার বিগত এক যুগে বাংলাদেশে শিল্পায়ন, ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ প্রসারে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়ন, শিল্পখাতে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, রপ্তানি পণ্য বহুমুখীকরণ, বিনিয়োগ সহায়ক কর ও শুল্ক কাঠামো নির্ধারণ ও সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের জন্য বিশেষ প্রণোদনাসহ সরকারের বিভিন্ন উদ্যোক্তাবান্ধব ও সৃজনশীল কর্মসূচির ফলে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় বিনিয়োগের অন্যতম আর্কষণীয় গন্তব্যে পরিণত হয়েছে। শিল্পখাতে গুণগত উন্নয়ন ও পরিবর্তনের ফলে দেশে মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনে (জিডিপি) শিল্পখাতের অবদান ক্রমান্বয়ে বাড়ছে।

উৎপাদনশীলতা বাড়াতে শ্রমিকদের শ্রম ও দক্ষতা অপরিহার্য। এ জন্য মালিক-শ্রমিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি আশা করি, উদ্যোক্তাগণ শ্রমিকের কল্যাণ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

উন্নয়নের জন্য কর্মসংস্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে সরকারের একার পক্ষে বিপুল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান করা সম্ভব নয়।

কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য প্রয়োজন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ। সরকার দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য ১০০টি ইকোনোমিক জোন গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করছে। এর মাধ্যমে ১ কোটি লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি অতিরিক্ত ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এসব ইকোনোমিক জোনের একটি বড়ো অংশ বেসরকারি উদ্যোক্তাদের মাঝে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। ইকোনোমিক জোনে শিল্প স্থাপন করা হলে কর রেয়াতসহ প্রদেয় বিভিন্ন প্রণোদনা দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীগণ সমভাবে ভোগ করবেন।

তিনি বলেন , চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রেক্ষাপটে বিশ্বব্যাপী নতুন নতুন প্রযুক্তির প্রয়োগ বৃদ্ধির ফলে দেশে উৎপাদিত শিল্পপণ্য আর্ন্তজাতিক বাণিজ্যের তীব্র প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হচ্ছে।

তাই পণ্যের গুণগতমান নিশ্চিত করার পাশাপাশি উৎপাদনেও বৈচিত্র্য আনতে হবে। নির্দিষ্ট কোনো পণ্য বা সেবা খাতের উপর নির্ভরশীল না হয়ে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক ব্যবসায়িক গতিধারার সাথে তাল মিলিয়ে শিল্পোৎপাদনে বহুমুখী ধ্যান-ধারণা প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়া শিল্পায়নের সাথে সাথে পরিবেশের ব্যাপারেও যত্নশীল হতে হবে।

রাষ্ট্রপতি বলেন , গুণগতমানের শিল্প স্থাপন, পণ্য উৎপাদন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, জাতীয় আয় বৃদ্ধিসহ দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে আপনাদের পুরস্কৃত করা হচ্ছে। রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার প্রাপ্তির সাথে সাথে আপনাদের নিকট জাতির প্রত্যাশা অনেক বেড়ে গেল। গুণগত শিল্পায়নের নতুন ধারা এবং নতুন নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে আপনারা হবেন অন্যদের জন্য পথিকৃৎ। আপনাদের অনুসরণ করে দেশে আরো দক্ষ ও তরুণ শিল্পোদ্যোক্তা তৈরি হবে।
তারা পরিবেশবান্ধব শিল্পায়নের ধারায় নিজেদের সম্পৃক্ত করে বাংলাদেশকে শিল্পসমৃদ্ধ দেশে পরিণত করবেন – এ প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।

বাংলাদেশ ২০২৬ সালে চূড়ান্তভাবে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবে, ইনশাল্লাহ। তখন অন্যান্য সেক্টরের মতো শিল্প খাতের জন্য যেমন নতুন সম্ভাবনা তৈরি হবে, আবার বেশকিছু চ্যালেঞ্জও মোকাবিলা করতে হবে।