বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতায় মজুতদার সিণ্ডিকেট চক্র জনগণের সম্পদ লুটে নিচ্ছে – মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী

আপডেট: মার্চ ২৫, ২০২১
0

জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ’র যুগ্মমহাসচিব মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী বলেছেন, লাগাতার দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে জাতি আজ দিশেহারা। অবৈধ সরকারের সর্বব্যাপী ব্যর্থতার কারণে দেশের সকল খাত আজ অনিয়ম ও দুর্নীতিগ্রস্ত। কোথাও সুশাসন, সুবিচার ও মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা নেই। সর্বোপরি বাজার ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণে সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৫ মার্চ) বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী আরো বলেন, গত কয়েক মাস ধরে চালের বাজারে হাহাকার চলছে। এর সাথে তাল মিলিয়ে তেল, ডাল, চিনি, মাছ, গোশত’সহ প্রায় সব নিত্যপণ্যের মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। খাবার ও নিত্যপণ্য নিয়ে সারা দেশে দুর্ভিক্ষের মতো হাহাকার পরিস্থিতি চলছে।

তিনি বলেন, সরকার কোনভাবেই পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না। এতে করে উচ্চ দ্রব্যমূল্যের তালিকা দিন দিন আরো লম্বা হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে যেসব কৃষি পণ্য উৎপাদিত হয়, যেমন- চাল, ডাল, লবণ, পেঁয়াজসহ বিভিন্ন রবি শস্য ও মাছ-গোশত। দেখা যায় কৃষক মাঠ পর্যায়ে এসব পণ্যের ন্যায্য মূল্য পায় না, কিন্তু বাজারে এসব পণ্য অনেক উচ্চমূল্যে বিক্রয় হয়। কেন এটা হচ্ছে, তার সদুত্তর আমরা প্রশাসনের কাছ থেকে পাই না।

মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী বলেন, বিশ্বের দেশে দেশে পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষ্যে দ্রব্যমূল্যের দাম বহুলাংশে কমানো হয়। অনেক দেশে রমজান উপলক্ষ্যে বড় বড় কোম্পানীগুলো পণ্যের মূলে বিশাল ছাড় দেয়। ফ্রি খাবার বিতরণের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু আমাদের দেশে হয় তার সম্পূর্ণ উল্টো। মুসলমানদের জন্য রমজান সিয়াম সাধনা ও আত্মত্যাগের মাস।

অথচ এই দেশের ব্যবসায়ীরা আত্মত্যাগের এই মাসে জনগণের পকেট কাটার উৎসবে নেমে পড়ে। রহমত ও বরকতের মাসে তারা যেন শোষণের প্রতিযোগিতায় নামে। এই শ্রেণীর ব্যবসায়ীদের মানবিকতাবোধ বলতে কিছু তো নেইই, বরং এরা যে মুসলিম ও পরকালে মহান আল্লাহর দরবারে জবাবদেহি হতে হবে, এই অপরিহার্য সত্যটাও ভুলে গিয়ে নিজেদেরকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। এধরনের শোষক মানসিকতার ব্যবসায়িদের নিন্দা জানানোর ভাষা জানা নেই।
মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী সরকার ও প্রশাসনের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বলেন, দেশের বেশির ভাগ মানুষ নিম্নবিত্ত, নিম্ন আয়ের ও বিত্তহীন গরীব পরিবারের। একে তো করোনা পরিস্থিতির কারণে অনেকে কর্মহীন হয়ে নিদারুন কষ্টে দিন গুজরান করছেন। এর মধ্যে লাফিয়ে লাফিয়ে দ্রব্যমূল্য বাড়তে থাকায় জীবন যাপন কঠিনতর হয়ে পড়েছে। সুতরাং দ্রব্যমূল্যের লাগাম টেনে ধরুন। কারা মজুতদারি ও সিণ্ডিকেট করে কারসাজিমূলক দ্রব্যমূল্য বাড়াচ্ছে, তাদেরকে চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তির আওতায় আনুন। পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের উপর দলীয় চাঁদাবাজি বন্ধ করুন এবং ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করুন। আর যেসব পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজারে বৃদ্ধির কারণে মূল্য বেড়েছে, সেসব পণ্যের উপর থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া পর্যন্ত সকল ট্যাক্স ও সারচার্জ হৃাস বা মওকুফ করুন। উন্নয়মূলক কর্মকান্ডের চেয়ে মানুষের খাদ্যনিরাপত্তাকে প্রাধান্য দিন।

বিবৃতির শেষে মুফতি মনির হোসাইন কাসেমী ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ব্যবসা করতে গিয়ে মানবিকতাবোধ হারিয়ে ফেলে নিজেদেরকে পশুর কাতারে নিয়ে যাবেন না। ন্যায়-নীতি ও ইনসাফের আওতায় থেকে ব্যবসা করুন। রমজানের ইবাদত-বন্দেগী অন্যান্য সকল মানুষের ন্যায় ব্যবসায়ীদের জন্যও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কবর, হাশর, পুলসিরাত, জান্নাত-জাহান্নাম ভুলে যাবেন না।

ব্যাপক সাওয়াব অর্জনের রমজান মাসে ব্যবসায়িক মুনাফায় বছরের বাকী ১১ মাসের তুলনায় বাড়তি ছাড় দিয়ে নিজেদের আমলনামার পাল্লাকে ভারি করুন। ব্যবসায়িক শোষণ ও কারসাজিমূলক মূল্যবৃদ্ধি থেকে বিরত থেকে পবিত্র মাহে রমজানের রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের ফায়দা র্অজন করুন। দয়াময় আল্লাহ আপনাদেরকে হেদায়াত দান করুন; আমীন।