বানারীপাড়ায় চিকিৎসকসহ জনবল সংকট: করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দেওয়া চ্যালেঞ্জ !

আপডেট: এপ্রিল ৩, ২০২১
0

রাহাদ সুমন, বিশেষ প্রতিনিধি॥
বরিশালের বানারীপাড়ায় চিকিৎসকসহ জনবল সংকটের কারনে প্রাণঘাতি করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দেওয়া চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক বছর পূর্বে বানারীপাড়ায় করোনা মহামারীর শুরুতেই উপজেলা ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যে পরিমান জনবল ছিল বর্তমানে তার অর্ধেক কমে গিয়ে মাত্র ৩ জন চিকিৎসক দিয়ে সেটি পরিচালিত হচ্ছে। করোনায় আক্রান্ত রোগীর জীবন বাঁচাতে জরুরী হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলার একটিও নেই। এছাড়া উপজেলা পর্যায়ে হাসপাতালে আইসিইউ না থাকায় সংকটাপন্ন রোগীকে নিয়ে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতাল কিংবা ঢাকায় ছুঁটতে হবে। ফলে বেড়ে যাবে করোনা রোগীর মৃত্যুর ঝুঁকি। করোনা সংক্রমন ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়লে বিনা চিকিৎসায় রোগীদের মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে হবে। এদিকে করোনায় আক্রান্ত হলে সেক্ষেত্রে চিকিৎসা সেবা নিয়ে জনমনে হতাশা ও আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। এ জন্য দেশের প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আইসিইউ চালু ,পর্যাপ্ত অভিজ্ঞ চিকিৎসক ও নার্স সহ জনবল নিয়োগ এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। গত এক বছর পূর্বে করোনায় আক্রান্ত রোগীর জন্য জরুরী ভিত্তিতে বানারীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৪টি ও সরকারী মডেল ইউনিয়ন ইনস্টিটিউ পাইলট স্কুলে ৮টি আইসোলেশন বেড প্রস্তুত রাখা হয়েছিল।

ওই সময় অনেকে হাসপাতালের আইসোলেশন বেডে আবার অনেকে নিজ বাসায় নির্দিষ্ট রুমে খেকে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন। তখন বানারীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধিন অবস্থায় কেউ মারা না গেলেও বরিশাল শেবাচিম হাসপাতাল ও ঢাকায় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধিন অবস্থায় বেশ কয়েকজন নারী-পুরুষ করোনা রোগী মারা যান। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার পরে বানারীপাড়া বন্দর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক বীর মুক্তিযোদ্ধা ইউসুফ বালী (৬৮) ঢাকায় মেয়ের বাসায় বেড়াতে গিয়ে করোনা আক্রান্ত হয়ে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে চিকিৎসাধিন অবস্থায় গত মঙ্গলবার (৩০ মার্চ) সকাল সোয়া ৬টায় মারা যান। ওই দিন বাদ এশা উপজেলার সৈয়দকাঠি ইউনিয়নের আউয়ার গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এছাড়া ৩ এপ্রিল শনিবার বানারীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পৌর শহরের ৫ নং ওয়ার্ডে পঞ্চাশোর্ধ্ব এক নারীর পরীক্ষায় করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসে। এছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গত কয়েক দিনে বেশ কয়েকজন নারী-পুরুষের নমুনা সংগ্রহ করে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বানারীপাড়া উপজেলা ৫০ শয্যা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এসএম কবির হাসান জানান,কাগজে কলমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হলেও বাস্তবে তাকে পুরনো ৩১ শয্যা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জনবল নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে।

এক্ষেত্রে নিয়ম অনুযায়ী ৩১ শয্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১০ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে সেখানে তিনিসহ মাত্র ৩ জন চিকিৎসক নিয়ে তাকে বৃহত্তর বানারীপাড়া সহ পাশর্^বর্তী ৫টি উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকার হাজারো রোগীর রাত-দিন চিকিৎসা সেবা দিতে হচ্ছে। এ হাসপাতালে বানারীপাড়া পৌরসভা সহ উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের পাশাপাশি যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল থাকার কারনে পাশর্^বর্তী উজিরপুর উপজেলার হারতা-

সাতলা,হাবিবপুর,ওটরা,ভবানীপুর,ডাবেরকুল,গুঠিয়া-নারায়নপুর, নাজিরপুরের বৈঠাঘাটা,তরুরবাড়ি, ঝালকাঠীর গুয়াচিত্রা, বীরমহল, গুদিঘাটা, রামচন্দ্রপুর, নবগ্রাম ও স্বরূপকাঠির আটঘর-কুড়িয়ানাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা অসংখ্য রোগীকে চিকিৎসা সেবাদিতে হয়। তিনি আরও জানান গত বছর এই দিনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা সাধারণ ও করোনা রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার পাশাপাশি করোনায় আক্রান্ত রোগীর বাড়িতে গিয়ে নমূনা সংগ্রহ করে শেবাচিম হাসপাতালে পাঠাতে হয়েছে। সেখান থেকে টেস্ট রিপোর্টে করোনা পজিটিভ হওয়া রোগীকে হাসপাতালের ৪টি আইসোলেশর বেডে চিকিৎসা সেবা দিতে হয়েছে। ওই সময় তিনি হাসপাতালে ‘ঘর বসতি’ গড়ে তুলে রাত-দিন একাকার করে রোগীদের পরম যতেœ সেবা দিতে গিয়ে স্বপরিবারে করোনায় আক্তান্ত হয়েছিলেন। তিনি প্রায় ১ মাস চিকিৎসাধীন থাকার পর সুস্থ হয়ে কর্মস্থলে ফিরে পূনরায় রোগীর স্বাস্থ্য সেবা দেয়া শুরু করেন।

এবারে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দিতে হলে করোনায় আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা-সেবা দেয়া একই ভবনে সাধারণ রোগীর চিকিৎসা-সেবা দেয়া ঠিক হবে না বলে অভিমত ব্যক্ত করে করোনা যোদ্ধা এ স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলেন, এক্ষেত্রে তিনি সাধারণ রোগীদের করোনার সংক্রমন থেকে রক্ষা করতে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশর্^বর্তী একটি আলাদা ভবনে করোনায় আক্রান্ত রোগীকে চিকিৎসা সেবা দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। ফলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা সাধারণ রোগীদের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকটা কম থাকবে বলে তিনি মনে করেন। এদিকে শুধু চিকিৎসক সংকটই নয় এ হাসপাতালে দীর্ঘ দিন ১ জন স্বাস্থ্য পরিদর্শক,৭ জন স্বাস্থ্য সহকারী, ১ জন ল্যাব টেকনিশিয়ান, ১ জন স্টোরকিপার,১ জন হিসাবরক্ষক ও ৩ জন সুইপারের পদ শুন্য রয়েছে। ফলে করোনায় আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ###

রাহাদ সুমন,বানারীপাড়া
তারিখ.০৩-০৪-২০২১ইং