বালিয়াডাঙ্গীতে শহীদ কমরেড কম্পরাম সিংহ স্মৃতি কমপ্লেক্স এর উদ্বোধন

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১, ২০২৩
0

মো. জুলফিকার আলী শাহ্, বালিয়াডাঙ্গী (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি ॥

আজ ৩১ জানুয়ারি ২০২৩ মঙ্গলবার সকাল ১১ টায় ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার পাড়িয়া ইউনিয়নের শহীদ কমরেড কম্পরাম সিংহ স্মৃতি কমপ্লেক্স এর শুভ উদ্বোধন হন।

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে এই কমপ্লেক্স এর উদ্বোধন করেন রংপুর বিভাগীয় কমিশনার মো. সাবিরুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মো. মাহবুবুর রহমান।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিপুল কুমার ও সঞ্চালনা করেন বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার নবাগত সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফাতেহা তুজ জোহরা।

এসময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আলী আসলাম জুয়েল, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ঠাকুরগাঁও জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ মো. মাজহারুল ইসলাম সুজন, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী, বাংলাদেশের কমিউনিষ্ট পার্টি বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা শাখার সভাপতি কমরেড দবিরুল ইসলাম, ১নং পাড়িয়া ইউ’পি চেয়ারম্যান মো. রুবেল, শহীদ কমরেড কম্পরাম সিংহ এর নাতী প্রমুখ।

প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যে শহীদ কমরেড কম্পরাম সিংহ এর স্মৃতি চারণ করে বলেন, ১৯৪০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে লাহিড়ী হাটে জমিদারদের স্বেচ্ছাচার মূলক তোলা আদায়ের বিরুদ্ধে কৃষকদের সংগঠিত করেন যা রাজনৈতিক ইতিহাসে “তোলাবাটি” আন্দোলন নামে খ্যাত হয়। এই আন্দোলনের নেতৃত্বদানের দায়ে গ্রেফতার বরণ করেন এবং তিনমাস বন্দী জীবন কাটান। ১৯৪৭ সালে বঙ্গীয় প্রাদেশিক পার্টি সম্মেলনে প্রতিনিধিরূপে নির্বাচিত হন।
তোলাবাটি আন্দোলন শেষ না হতেই সমগ্র উত্তরবঙ্গে বর্গা চাষীদের তেভাগা আন্দোলন সংগঠিত হয় এবং কম্পরাম সিংহ সেই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। তিনি বালিয়াডাঙ্গী, রাণীশংকৈল, আটোয়ারী থানায় তেভাগা আন্দোলনে নেতৃত্ব প্রদান করেন। এই সময় তার উপর সরকারি হুলিয়া থাকায় দুই বছর আত্মগোপন করেন। ইনি জীবনে সমস্ত সঞ্চয় কমিউনিস্ট পার্টিকে দান করে সর্বক্ষণের কর্মী হয়ে যান।

পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর মুসলিম লীগ শাসনামলে ১৯৪৯-এ পুনরায় গ্রেফতার হন। অন্যান্য কৃষক নেতা কর্মীর সাথে রাজবন্দি হিসেবে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে খাপড়া ওয়ার্ডে অন্তরীণ ছিলেন। এই সময় রাজবন্দিদের উপর মুসলিম লীগ সরকারের অত্যাচার উৎপীড়নের প্রতিবাদে এবং রাজবন্দি ও সাধারণ বন্দিদের মানবেতর পরিবেশ থেকে মানবিক পরিবেশে উন্নীত করার দাবিতে রাজবন্দিরা যে আন্দোলন করেন, রাজশাহী কারাগারে তিনি তার নেতৃত্ব প্রদান করেন।

১৯৫০ সালের ২৪ এপ্রিল রাজশাহী সেন্ট্রাল জেলে আটজন রাজবন্দীকে কনডেমড সেল বা ফাঁসির আসামীর নির্জন সেলে আটকে রাখলে তীব্র বিক্ষোভে সামিল হন বাকি বন্দীরা। তাদের কুখ্যাত খাপরা ওয়ার্ডে পাঠানো হয়। জেলার বিলের নির্দেশে বাইরে থেকে নির্মমভাবে গুলি চালায় কারারক্ষীরা। এর ফলে শহীদ হন সাম্যবাদী কর্মী কম্পরাম সিং। তার সাথে শহীদ হন আরো ছয়জন। শ্রমিক নেতা বিজন সেন, সুধীন ধর, হানিফ সেখ, দিলওয়ার হোসেন, ছাত্র নেতা আনোয়ার হোসেন এবং ছাত্র সংগঠক সুখেন ভট্টাচার্য।

আজ শহীদ কম্পরাম সিংহ স্মৃতি কমপ্লেক্স উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে তেভাগা আন্দোলনের নেতা শহীদ কম্পরাম সিংহকে চির অমর করে রাখলেন।

তারিখ: ৩১ জানুয়ারি ২০২৩ খ্রি.
মো. জুলফিকার আলী শাহ
বালিয়াডাঙ্গী, ঠাকুরগাঁও