বিচারকরা সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা ও আইন মেনে চলছেন না

আপডেট: অক্টোবর ৬, ২০২১
0

হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, নিম্ন আদালতের বিচারকরা জামিনের আবেদনের বিপরীতে আদেশ দেওয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট আইন ও সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা মেনে চলছেন না। হাইকোর্ট জানিয়েছে, ম্যাজিস্ট্রেটরা স্বাভাবিকভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন না। যে আচরণ ফৌজদারি আইন ও নিরপেক্ষ তদন্তের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের রিমান্ডে নেওয়া বিচার ব্যবস্থার সময় ও অর্থের অপচয় ঘটায়। এক্ষেত্রে আদালতগুলোকে সতর্ক হতে হবে বলে জানিয়েছেন হাইকোর্ট।

সম্প্রতি তিন জন বিচারক মডেল মারিয়াম আখতার মৌকে একটি মাদক মামলায় তিন দফায় মোট ৯ দিনের জন্য রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন মঞ্জুর করেন। তাদের সমালোচনা করে আদালত এসব পর্যবেক্ষণ দেন।

‘অপরাধের গুরুত্ব ও প্রকৃতি বিবেচনায়, আমরা মনে করি না তিন দফায় ৯ দিনের রিমান্ডের প্রয়োজনীয়তা ছিল। এক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেটরা [সাধারণত যেভাবে করে থাকেন] কার্যকর ভূমিকা পালন করেননি। তারা সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা, নীতিমালা এবং রিমান্ড সংক্রান্ত আইন অনুসরণ করছেন না। এটি ফৌজদারি আইন ও নিরপেক্ষ তদন্তের পরিপন্থী।’

বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি কেএম জাহিদ সারওয়ার কাজল ২২ সেপ্টেম্বর শর্তসাপেক্ষে মৌ এর জামিন মঞ্জুর করার সময় দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায়ে উল্লেখ করেন, ‘সে অনুসারে, অপ্রয়োজনীয় রিমান্ড করদাতাদের অর্থের পাশাপাশি বিচারিক সময় নষ্ট করছে।’

সম্প্রতি প্রকাশিত পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়েছে, সমাজ থেকে অপরাধ কমাতে আদালতকে অতিরিক্ত সতর্ক থাকতে হবে এবং বিবেচনা করতে হবে যে, জেলে কঠোর অপরাধীদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে অভ্যাসগত অপরাধী হওয়ার পরিবর্তে নারী যাতে অপরাধের পথ থেকে দূরে থাকার সুযোগ পায়।

হাইকোর্ট মৌকে এই মামলায় জামিন দেওয়ার সময় শর্ত দেয় যে, অভিযুক্ত পিটিশনকারী (মৌ) ভবিষ্যতে কখনো ইয়াবা বা বিদেশি মদ নিজের কাছে রাখবেন না অথবা এ সংক্রান্ত কোনো লেনদেনে জড়িত থাকবেন না।হাইকোর্ট বলেছেন, প্রয়োজনে তাকে অবশ্যই তদন্তের জন্য উপলব্ধ থাকতে হবে এবং বিচারের তদন্তের সময় তিনি সাক্ষীদের ওপর চাপ প্রয়োগ করে তদন্তের সাক্ষ্যপ্রমাণকে কোনোভাবে পরিবর্তন করতে পারবেন না।

হাইকোর্টের বিচারকরা আরও জানান, অভিযুক্ত মৌকে তার বিচার কার্যক্রমে নিষ্ঠার সঙ্গে সহযোগিতা করতে হবে এবং তিনি কোনো ধরনের স্থগিতাদেশ চাইতে পারবেন না এবং জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর তিনি কোনো ধরণের অপরাধমূলক কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত হতে পারবেন না।

পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়, উল্লিখিত শর্ত ভঙ্গ করা হলে তার জামিন বাতিল করা হতে পারে। গোয়েন্দারা ১ আগস্ট মৌকে তার মোহাম্মদপুরের বাসা থেকে গ্রেফতার করে এবং সেখান থেকে ৭৫০টি ইয়াবা বড়ি ও ১২ বোতল বিদেশি মদ আটক করা হয়।

২ আগস্ট মোহাম্মদপুর থানায় তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার বিপরীতে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আশেক ইমাম মৌকে ৩ দিন, ৬ আগস্ট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সত্যব্রত শিকদার ৪ দিন এবং ১০ আগস্ট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু সুফিয়ান মোহাম্মদ নোমান ২ দিন করে রিমান্ডে পাঠান।

২ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের বেঞ্চ নায়িকা পরীমনিকে মাদক মামলায় একাধিকবার রিমান্ডে পাঠানোর জন্য মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দেবব্রত বিশ্বাস ও আতিকুল ইসলামের কাছে ব্যাখ্যা চান।

বেঞ্চটি ১৫ সেপ্টেম্বর তাদের ব্যাখ্যায় অসন্তোষ প্রকাশ করে জানান, দেবব্রত বিশ্বাস ও আতিকুল ইসলাম হাইকোর্টকে ‘হেয়’ করেছেন। ২৯ সেপ্টেম্বর বেঞ্চটি মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটদের ২৪ অক্টোবরের মধ্যে বিষয়টির সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশ দেন।