বিলস্ এর আলোচনা সভা : শ্রমশক্তি জরিপে গৃহশ্রমিকদের বিষয়ে সঠিক তথ্য প্রদানের আহ্বান

আপডেট: মে ৩০, ২০২২
0

জিডিপিতে গৃহশ্রমিকদের অবদান নির্ণয় করতে হলে গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি, ২০১৫ অনুযায়ী গৃহশ্রমিকদের সঠিক সংজ্ঞা অনুসরন করে তাদের সঠিক পরিসংখ্যানও জরুরী। তাই শ্রমশক্তি জরিপে তাদের সঠিক তথ্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গৃহশ্রমিক, নিয়োগকারী, গণনাকারী, স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিসহ সকল পক্ষের সচেতনতা জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছেন ট্রেড ইউনিয়ন ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। আজ ২৯ মে ২০২২ জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন কনফারেন্স হলে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ-বিলস্, সুনীতি প্রকল্প ও গৃহশ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠা নেটওয়ার্কের উদ্যোগে আয়োজিত “মে দিবসের চেতনা এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক হিসাবে গৃহশ্রমিকের অধিকার” শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এ আহ্বান জানান।

বিল্স এর ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, এমপি বলেন, শ্রমিকের স্বার্থকে পাশ কাটিয়ে শুধুমাত্র মালিক-শ্রমিক ঐক্য গড়ার কথা বললে তাতে শ্রমিকের অধিকার নিশ্চিত হবে না বরং শ্রমিকের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করার মাধ্যমেই শিল্প সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। তিনি বলেন, গৃহশ্রমিকের অধিকারের বিষয়টি সামনে নিয়ে আসতে তাদের আরও সংগঠিত হতে হবে।

জিডিপিতে গৃহশ্রমিকদের যে অবদান তার তুলনায় তারা মর্যাদা পান না উল্লেখ করে বিলস্ যুগ্ম মহাসচিব ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খান বলেন, গৃহশ্রমিকদের অধিকারের সঙ্গে সঙ্গে তাদের স্বাস্থ্যের বিষয়েও সকলকে সচেতন হতে হবে। তাদের অধিকার আদায়ে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি। গৃহশ্রমিকের সুনির্দিষ্ট কোন সংখ্যা নেই উল্লেখ করে জাতীয় শ্রমিক জোট বাংলাদেশ এর সাধারণ সম্পাদক নইমুল আহসান জুয়েল বলেন, জনশুমারি শুরু হতে যাচ্ছে। এতে গৃহশ্রমিকের সংখ্যা যেন সঠিকভাবে বের করে আনা যায় সে ব্যাপারে সকল পক্ষকে সঠিক ভূমিকা পালন করতে হবে। গৃহশ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠা নেটওয়ার্কের ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়কারী আবুল হোসাইন বলেন, গৃহশ্রমিকদের আইনের আওতায় এনে তাদের কাজের স্বীকৃতি নিশ্চিত করতে হবে। গৃহশ্রমিকের কাজকে যত তাড়াতাডড়ি সম্ভব একটি পেশা হিসাবে স্বীকৃতি দিতে হবে। এজন্য শ্রম মন্ত্রণালয়ের সেলকে আরও সক্রিয় করতে হবে। লিখিত চুক্তিকে গৃহকর্মী এবং নিয়োগকারীদের মধ্যে বাধ্যতামূলক করতে হবে। বিদ্যমান নীতিকে আইনে পরিণত করতে হবে।

এসময় গৃহশ্রমিকের কর্মক্ষেত্র পরিস্থিতি এবং বিলস্ ও সুনীতি প্রকল্পের অগ্রগতি পাওয়ারপয়েন্ট উপস্থাপনার মাধ্যমে তুলে ধরেন বিলস্ উপ-পরিচালক ও প্রকল্প সমন্বয়কারী মোঃ ইউসুফ আল মামুন। এতে উল্লেখ করা হয়, ২০২২ সালের জানু-মার্চ সময়ে নির্যাতনে নিহত হয়েছেন ৩ জন এবং আহত হয়েছেন অন্তত ৯ জন গৃহশ্রমিক। ২০২১ সালে নির্যাতনে হতাহত হন ৩৮ গৃহশ্রমিক এবং ২০১১ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত নির্যাতিতের সংখ্যা ৬২৯। আরও উল্লেখ করা হয়, ১৬ হাজার গৃহশ্রমিককে কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে প্রশিক্ষিত করে তোলার অংশ হিসেবে প্রকল্পের অংশীদার নারী মৈত্রীর মাধ্যমে ৭১১৩ জন গৃহশ্রমিককে জীবন দক্ষতা প্রশিক্ষণ ও ইউসেপের মাধ্যমে ৫৩০৯ জনকে পেশাগত প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। এ ছাড়া বিলস্ এর পক্ষ থেকে গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি, ২০১৫ বাস্তবায়নে একটি জাতীয় কর্মপরিকল্পনা’র খসড়া এবং পরিবীক্ষণ কৌশল প্রণয়ন করে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়েছে। এতে আরও জানানো হয়, প্রকল্পের অপর অংশীদার হ্যালোটাস্ক এর মাধ্যমে সুনীতি প্রকল্পের গৃহকর্মীদের অনলাইন ডাটাবেইজ ও অনলাইন জব প্লেসমেন্ট প্ল্যাটফর্ম তৈরী হয়েছে এবং গত ৩ বছরে গৃহকর্মীরা মোট প্রায় ৬ কোটি টাকা মূল্যমানের ২ লাখ কাজের অর্ডার পেয়েছেন। গণসাক্ষরতা অভিযান এর উদ্যোগে গৃহকর্মীদের জন্য একটি পেশাগত দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ মডিউল প্রণয়ন করা হয়েছে, যা এনএসডিএ কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছে। রেডঅরেঞ্জ এর মাধ্যমে ৮ পর্বের একটি ধারাবাহিক নাটক ‘গৃহগল্প’ তৈরি করে চ্যানেল আই ও সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচার করা হয়, যার বার্তাগুলো ৮০ লক্ষ মানুষের কাছে পৌছানো সম্ভব হয়েছে।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর মিনু রহমান, গৃহশ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠা নেটওয়ার্কের সদস্য সচিব ও বিল্স পরিচালক নাজমা ইয়াসমীন, অ্যাপস্ ভিত্তিক গৃহশ্রমিক ফাতেমা বেগম প্রমুখ। এছাড়া গৃহশ্রমিক ইস্যুতে কার্যক্রম বাস্তবায়নকারী ট্রেড ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দ, বেসরকারী সংস্থা, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ, সাংবাদিক সহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সভায় উপস্থিত ছিলেন।