বিষাক্ত পানিতে বন্দি ডিএনডির বাধের ভেতরের কয়েক লক্ষ মানুষ

আপডেট: জুলাই ৪, ২০২১
0

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ : দীর্ঘ এক মাস ধরে হালকা ও ভারী বর্ষণে ডিএনডির ভেতর জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে আছে। তারউপর শুক্রবার ও শনিবার (৩ ও ৪ জুলাই) দিনভর থেমে থেমে হালকা ও ভারী বর্ষণে জলাবদ্ধতা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। রীতিমত কৃত্রিম বন্যা পরিস্থিতির এখন ডিএনডির ভেতর বিভিন্ন এলাকায়। রা¯স্তা-ঘাট, বাড়ি ঘর ডুবে আছে। সেখানে নৌকা চলছে। কোথায়ও হাটু কোথাও কোমড় পানিতে তলিয়ে আছে ডিএনডি এলাকা। শিল্পকারখানার বিষাক্ত বর্জ্য ও ক্যামিকেল যুক্ত পানি, স্যুয়ারেজের পানি বৃষ্টির পানির সঙ্গে মিশে একাকার।

নিরুপায় হয়ে জরুরী প্রয়োজনে বিষাক্ত এই পানি মাড়িয়ে মানুষজনকে চলাচল করতে হচ্ছে। ফলে স্বাভাবিক জীবন-যাত্রা স্থবির হয়ে পড়েছে জলাবদ্ধ কবলিত এলাকার মানুষের। এমন অসহনীয় দুর্ভোগ ও ভোগান্তি থেকে রক্ষা পেতে একদিকে হাহাকার অন্যদিকে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে তাদের মধ্যে।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন এলাকাও পানিতে তলিয়ে আছে। শহরের একটি অংশের অলি-গলিতে ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
ভুক্তভোগিরা জানায়, ডিএনডির পানি নিষ্কাশন প্রকল্পের কার্যক্রম মন্থর গতিতে চলমান থাকায় বাঁধের ভেতর ভয়াবহ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। কবে জলাবদ্ধতার এই অভিশাপ থেকে ডিএনডিবাসী রক্ষা পাবে তা অনিশ্চিত। অন্যদিকে অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে নারায়ণগঞ্জ শহরের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় এক দেড় ঘন্টার বৃষ্টি হলেই।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফতুল্লার মুসলিমনগর, ধর্মগঞ্জ, হরিহরপাড়া, কাশিপুর, পৌষা পুকুরপাড়, হাজীপাড়া, দক্ষিণ সস্তাপুর, কোতালেরবাগ, শেহাচর, ইসদাইর, ভুইগড়, দেলপাড়া, আদর্শনগর, নয়ামাটি, পিলকুনি, বুড়ির দোকান সস্তাপুর, হাজিগঞ্জ, কুতুবপুর সিদ্ধিরগঞ্জে নাসিকের ১, ২, ৩, ৭, ৮, ৯, ১৩ নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। তবে ফতুল্লার পৌষাপুকুর ও লালপুর এলাকায় জলাবদ্ধতার চিত্র ভায়াবহ। ওই সব এলাকার বাড়ি-ঘর ছেড়ে মানুষ অন্যত্র আশ্রয় নিচ্ছে। কারণ প্রায় প্রতিটি বাড়ি পানিতে ডুবে আছে। সেখানে সড়কে চলছে নৌকা। নৌকা ও ভ্যান গাড়ি ছাড়া যাতায়াতের কোন ব্যবস্থা নেই। সড়কের পানি হাঁটু ছাড়িয়ে কোমড় পর্যন্ত।

একটি বেরসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরীজীবী রাজিয়া সুলতানা জানান, তাদের লালপুরের ব্রাজিল বাড়ির সড়ক বেশ কিছুদিন ধরে ডুবে আছে। এলাকার বাড়ি ঘরে পানি। শুক্রবার বিকালের পর পানি এক থেকে দেড় ফুট বেড়েছে। ভয়াবহ অবস্থা।
ফতুল্লার এনায়েত নগর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম জীবন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বর্ষা মৌসুমে বছরের পর বছর জলাবদ্ধতায় ভোগান্তির শিকার হয় এলাকার মানুষ। জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধানে ডিএনডি প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও সাড়ে তিন বছরেও সুফল পাচ্ছে না মানুষ। কবে পাবে তাও জানি না।

একই দূর্ভোগ পোহাচ্ছেন নাসিকের ৯নং ওয়ার্ডবাসী। ভুক্তভোগী আনোয়ার রহমান বলেন, আমরা সিটি করপোরেশনে থাকি ঠিকই, কিন্তু লাভ নাই। ভোগান্তির শেষ নাই। জলাবদ্ধতা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে শুক্রবারের বৃষ্টিতে।
নাসিকের ৭নং ওয়ার্ডের কয়েকটি এলাকার চিত্রও ভায়াবহ। ওই ওয়ার্ডের কদমতলী মধ্যপাড়ার বাসিন্দা এম এ মাসুদ বাদল জানান, বেশ কয়েকদিন ধরে ভোগান্তির শিকার আমরা। তারউপর শুক্রবারের বৃষ্টিতে হাবুডুবু খাচ্ছে মানুষ। রাস্তায় পানি, ঘরে পানি, রান্না ঘরে পানি, বাথরুমও ডুবে গেছে। অবর্ননীয় দুর্ভোগে আছি আমরা। কেউ যেন দেখার নাই।

নাসিকের ১৩ ওয়ার্ডের জামতলা ধোপা পট্টি এলাকার বাসিন্দা সাংবাদিক আবু সাউদ মাসুদ গত চারদিন ধরে পরিবার নিয়ে অন্যত্র বাস করছেন। তিনি জানান, ঘরের ভেতর হাটু পানি। শুক্রবারের বৃষ্টিতে মনে হয় কোমড় পানি হয়ে গেছে। সব কিছু ফেলে রেখে পরিবার নিয়ে নিরাপদে চলে আসছি।
সূত্র মতে, ২০১৭ সালের ৫ ডিসেম্বর ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) প্রকল্পের কাজ শুরু করে সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কন্সট্রাকশন ব্রিগেডের অধীনস্থ ১৯ ইঞ্জিনিয়ারিং কন্সট্রাকশন ব্যাটালিয়ন। এর আগে, প্রথম ধাপে ২০১৬ সালে একনেকের সভায় ডিএনডি প্রকল্পের জন্য ৫৫৮ কোটি টাকার এই মেগা প্রকল্প পাস হয়। পরবর্তীতে ডিএনডি এলাকায় নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন (দ্বিতীয় পর্যায়) (প্রথম সংশোধনী)’তে বরাদ্দ বাড়িয়ে প্রায় ১৩০০ কোটি টাকার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কার্যক্রম চলাকালীন প্রায় সাড়ে ৩ বছরে প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি ৫০.৬৫ শতাংশ।
ওদিকে প্রকল্পের অগ্রগতি আশানুরূপ না হওয়ায় ভয়াবহ জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছে ডিএনডিবাসী। এমনটা মনে করছেন ভুক্তভাগিরা। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধানে প্রকল্প পাশ হয়েছে। কিন্তু সাড়ে তিন বছরেও সুফল নাই। এটা দু:খজনক। আমরা যেভাইে হোক দ্রুত এই জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি চাই।