ভবিষ্যতের রূপরেখা প্রণয়নে নারীর অংশীদারিত্বের অর্ন্তভূক্তি’ বিষয়ক মহিলা পরিষদের প্রাক বাজেট আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

আপডেট: এপ্রিল ৮, ২০২২
0

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে ‘স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের স্বীকৃতি:ভবিষ্যতের রূপরেখা প্রণয়নে নারীর অংশীদারিত্বের অর্ন্তভূক্তি’ বিষয়ক প্রাক বাজেট আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

৭ এপ্রিল, ২০২২ দুপুর ২.০০টায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে সংগঠনের আনোয়ারা বেগম- মুনিরা খান মিলনায়তনে (১০/বি/১, সেগুনবাগিচা,ঢাকা) ‘স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের স্বীকৃতি:ভবিষ্যতের রূপরেখা প্রণয়নে নারীর অংশীদারিত্বের অন্তর্ভূক্তি’ বিষয়ক প্রাক বাজেট আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী জনাব এম.এ মান্নান এমপি। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ড. ফওজিয়া মোসলেম এর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মূখ্য সমন্বয়ক জুয়েনা আজিজ, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ সেলিম জাহান,ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম.এম. আকাশ, সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান দ্য ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস এর বিশেষ প্রতিনিধি মুনিমা সুলতানা। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের পক্ষে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক শরমিন্দ নিলোর্মী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের পক্ষে মূল বক্তব্য উপস্থাপন কালে অধ্যাপক শরমিন্দ নিলোর্মী নারীর নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ, প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা, সেক্স ডিসএগ্রিগেটেড ডাটা এবং নারীর জন্য বিনিয়ো কে চ্যালেঞ্জ হিসেবে উপস্থাপন করেন।এসময় তিনি বিভিন্ন দেশের তুলনামূলক পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। তিনি বলেন বাংলাদেশের ৫০ বছরের অর্জন এক ধরণের উদযাপন। শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে, ভ’মিতে ডিজিটাইজেশন পদ্ধতি হয়েছে। তবে অবৈতনিক খাতে নারীর উপস্থিতি বৃদ্ধি পেয়েছে। সামাজিক অগ্রসরকে তরান্বিত করতে রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধির সুপারিশ করেন। সম্পদ সম্পত্তিতে নারীর মালিকানা নিশ্চিতের জন্য কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে নীতিনির্ধারকদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ করে, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, বিবিএস এর উদ্যোগে মেটা ডিসএগ্রিগেটেড ডাটার সহজপ্রাপ্তি নিশ্চিত করে জেন্ডার ইকুয়ালিটি প্রতিষ্ঠার জন্য নিজ দেশের শক্তি ও সক্ষমতাকে কাজে লাগানোর আহ্বান জানান।্

প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী জনাব এম.এ মান্নান এমপি বলেন,মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে নানা বাধা অতিক্রম করে সময়োচিত পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন। গ্রামীণ নারীদের উন্নয়নে, কোটা বৃদ্ধিতে কাজ করছেন। শিক্ষায় নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। যেকোন প্রকল্প গ্রহনের সময় সরকার নারীদের প্রাধান্য দি”েনছ। কিছু বাত্যয় হচ্ছে। তবে বৈষম্যের বিষয় অবশ্যই আছে। সরকার দারিদ্র্য দূর করতে না পারলেও উপশম করেছে। জনগণের সমর্থনে তিনি টানা ১৩ বছর দায়িত্ব পালন করছেনএটি তার উন্নয়নের উদাহারণ।বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার উত্তরণের এই সময়কে স্থিতিশীল রাখতে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।

সম্মানিত বিশেষ অতিথির বক্তব্যে
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মূখ্য সমন্বয়ক জুয়েনা আজিজ বলেন, নারী বান্ধব নানা কর্মসূচি সরকার থেকে নেওয়া হলেও সুবিধাভোগীদের সচেতনতার অভাবে অনেক কর্মসূচি বাস্তবায়িত হয়না। এসময় তিনি মহিলা পরিষদকে নারীদের সচেতন করতে কর্মসূচি গ্রহণের আহ্বান জানান। তিনি আরো বলেন গুণগতমানের ডাটাবেজ তৈরিতে সরকার নানা প্রশিক্ষণকর্মসূচির উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। নারীর উন্নয়ন ছাড়া প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব নয়। এলক্ষ্যে জনবান্ধব নানা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

ধারণকৃত বক্তব্যে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ সেলিম জাহান বলেন, দৃষ্টিসীমাকে প্রসারিত করতে হবে, বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশ থেকে টেকসই উন্নত দেশ হিসেবে ভাবতে হবে , নারীর অংশদারিত্¦ নিশ্চিত, নারীবান্ধব নীতিমালা গ্রহণ ও বাস্তবায়নে গুরুত্ব দিয়ে বাজেট প্রণয়নে নারী ইস্যূকে গুরুত্ব দেয়া, যেকোনো নীতিমালা প্রণয়নে সঠিক বিভাজিত উপাত্ত সংগ্রহ করা, কেবল বাজেট নয় সামষ্টিক অথনৈতিক নীতিমালা প্রণয়নের কেন্দ্রে নারীকে অর্ন্তভূক্ত করা, কর্মনিয়োজন ও আয়ে নারীর অংশগ্রহণ বিস্তৃত করা ও এজন্য বাজেট বৃদ্ধি, সামাজিক সুরক্ষায় নারীকে অর্ন্তভ’ক্ত করতে হবে ও প্রয়োজনীয় নীতিমালা গ্রহণ করতে হবে। সর্বোপরি বাজেট বরাদ্দ ও নীতমালা প্রণয়নে বিভিন্ন প্রান্তিক ও দরিদ্র নারীদের চাহিদা ও আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন থাকতে হবে।

ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম.এম. আকাশ বলেন, জাতীয় অর্থনীতিকে টেকসই করতে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ না করে কৃষিতে ও মানবসম্পদ উন্নয়নে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করার প্রস্তাব করেন।তিনি বলেন রাষ্ট্রে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে এবং সমাজে বিদ্যমান সকল বৈষম্য দূর করতে হবে।

সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে তা অর্জনে বাংলাদেশ ঠিকপথে এগোচ্ছে কিনা পর্যালোচনা করে দেখতে হবে। তিনি রাজনীতি, সামাজিক ও অর্থনীতিতে নারীর অংশীদারিত্ব এবং জবাবদিহিতা মূলক রাজনীতি নিশ্চিত করার উপর জোর দেন এবং জেন্ডার বিভাজিত তথ্য ও পরিসংখ্যান হালনাগাদ করার সুপারিশ করেন।

দ্য ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস এর বিশেষ প্রতিনিধি মুনিমা সুলতানা বলেন, জেন্ডার বাজেটের আলোকে নারীবান্ধব বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও তা যথেষ্ট নয়। নারীদের কাজের যথাযথ স্বীকৃতি নাই এবং শ্রমখাতে নারীর প্রতি এখনো অনেক বৈষম্য বিদ্যমান।

সভায় স্বাগত বক্তব্যে সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, স্বাধীনতার পর এদেশের লড়াকু মানুষেরা নানা প্রতিকূলতাকে মোকাবেলা করে মাথা উঁচু করে এগিয়ে চলেছে। নারীরা জাতীয় অর্থনীতির হাল ধরেছেন। উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পথে অনেক সম্ভাবনা সৃষ্টি হলেও নানা চ্যালেঞ্জও মোকাবিলা করতে হবে। সেজন্য অধিকার ওমর্যাদার ভিত্তিতে নারীর অংশগ্রহণ ও অংশীদারিত্বের পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, যেকোনো উন্নয়ন কর্মসূচির লক্ষ্য হচ্ছে সামাজিক উন্নয়ন কতটা হচ্ছে তা দেখা।বর্তমান সময়ে অনেক অগ্রগতি হয়েছে তা প্রতিটি মানুষের কাছে যাচ্ছে না। কেননা সুশাসন ও আইন প্রয়োগের অভাবে ক্ষমতার সিন্ডিকেটের কাছে এই অগ্রগতি জিম্মি হয়ে আছে। পাশাপাশি স্বাধীনতার বিরোধী শক্তিও মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। তিনি আরো বলেন, নারীকে অংশীদারি করা ছাড়া জাতীয় উন্নয়ন সম্ভব না। এজন্য নারীকে মূলধারায় রাখতে সহায়ক কর্মসূচি ও পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তিনি জেন্ডার বৈষম্য দূর করতে রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।

উক্ত আলোচনা সভায় কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি অধ্যাপক হান্নানা বেগম, রেখা চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম, অ্যাড. মাসুদা রেহানা বেগম, কেন্দ্রীয় সম্পাদকমন্ডলী, ঢাকা মহানগরের নেতৃবৃন্দ, একশন এইড, নারীপক্ষ, গণস্বারক্ষতা অভিযান, বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবি সমিতি, এসিড সারর্ভাইবার্স সানেমের প্রতিনিধি প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ এবং সগঠনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনায় ছিলেন আন্দোলন সম্পাদক রাবেয়া খাতুন শান্তি।