ভারতকে সব দিয়ে দিচ্ছে অথচ সীমান্ত হত্যা নিয়েও কথা বলতে ভয় পাচ্ছে সরকার: পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ নির্বাচনের আহবান মীর্জা ফখরুলের

আপডেট: মার্চ ১০, ২০২১
0
file hoto

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অবিলম্বে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দেয়ার আহবান জানিয়েছেন । তিনি বলেছেন , বর্তমান নির্বাচন কমিশন আজ্ঞাবহ ক্রীতদাসের চেয়েও খারাপ। সরকা্রকে কিছু বলতে হয় না, তার আগে বলে দেয়-খুব ভালো নির্বাচন হয়েছে, সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে, আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা সব জয়লাভ করেছে।

গতকাল বিকেলে রাজধানীতে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি এ আহবান জানান ।


খিলগাঁও তালতলা সিটি করপোরেশন সুপার মার্কেটের সামনে সড়কে দুইটি ট্রাকের ওপর অস্থায়ী মঞ্চে সারা দে্শে নিরপেক্ষ নির্বাচন ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলসহ নানা দাবিতে এই সমাবেশ হয়।

ঢাকা উত্তরের বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে হাজার হাজার নেতা-কর্মী মিছিল নিয়ে এই সমাবেশ সমবেত হয়। নেতা-কর্মীদের হাতে হাতে খালেদা জিয়ার ছবি সম্বলিত ‘দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দেব জনগনের হাতে’ প্ল্যাকার্ড এবং বাংলাদেশের জাতীয় ও বিএনপির পতাকা ছিলো। তাদের ‘মুক্তি মুক্তি মুক্তি চাই, খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই’ এবং ‘ভোট ভোট চোর’ এর মুহুর্র মুহুর্র শ্লোগান দিতে দেখা যায়।

সমাবেশ মঞ্চের দুই পাশে বিএনপির আবদুস সালাম পিন্টু, ইসহাক সরকারসহ কারাবন্দি নেতাদের মুক্তির দাবি সম্বলিত পোস্টার ছিলো।

দুপুর ২টায় সমাবেশ শুরুর আগে খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের পুরো সড়কে লোকে লোকারণ্যে হয়ে পড়ে।

নির্বাচনের প্রতিবাদে জানাতে বিভিন্ন মহানগরী সমাবেশ করতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, কেনো এতো ভয়? জনগনের যে কথা বলার অধিকার সেই অধিকার বন্ধ করে দেয়া কেনো? জনগনের ভোট দেয়ার যে অধিকার সেই অধিকার বন্ধ করে দেয়া কেনো?
কারণ আমরা জানি জনগন যদি ভোট দেয়, ভোট দিতে পারে তাহলে আপনারা কোনদিনই আর ক্ষমতায় আসতে পারবেন না।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী জয়শঙ্করের ঢাকা সফরকালে সীমান্ত হত্যা নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন তার প্রতিবাদও জানান বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, সীমান্ত হত্যা নিয়ে এই সরকারের এতো দূর্বলতা কেনো? কেনো সে নিজের নাগরিকের কথা বলতে ভয় পায়। কেনো কানেকটিভি ওরা চায়? আমরা চাই যে, কানেকটিভি হোক। বানিজ্য বাড়ুক, প্রসার ঘটুক। কিন্তু আমি কিছুই পাবো না। আমি পোর্ট দিয়ে দে্বো, আমার এয়ারপোর্ট ব্যবহার করতে দেবো, আমার রাস্তা ব্যবহার করতে দেবো কিন্ত বিনিময়ে আমি ফেনী নদীর পানিরও হিতসা পাবো, তিস্তা নদীর পানিরও হিতসা পাবো না।এটা হতে পারে না। সেখানে আমরা স্বাধীন কোথায়?”

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার খুব দূর্বল সরকার। এতো দূর্বল যে তাদের নিজেদেরকে রক্ষা করবার জন্য নতুন নতুন আইন তৈরি করতে হয়। এই যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন তৈরি করেছে।

তারা যন্ত্র নিয়ে এসেছে ইসরাইল থেকে। যে দেশের সাথে আমাদের কোনো সম্পর্ক নাই। যেটা আবার আল-জাজিরা টেলিভিশন আবার সেটা প্রচার করে দিয়েছে। কী ভয়াবহ প্রচার। সেই প্রচারে আমরা বিস্ময়ে লক্ষ্য করলাম আমাদের সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলো ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, অবশ্যই আমাদেরকে জানাতে হবে যে, কোন কাজে রাষ্ট্রের ইমেজ নষ্ট হয়। লেখালেখি করলে রাষ্ট্রের ইমেজ নষ্ট হয় ? সেজন্য মুশতাক আহমেদকে কারাগারে মৃত্যুবরণ করতে হয়? আর সেজন্য কার্টুনিস্ট কিশোরের সমস্ত শরীর রক্তাক্ত করা হয়, তার মাথার মধ্যে রক্তপাত হয় ?সেখানে ইমেজ নষ্ট হয় না রাষ্ট্রের? আমরা যখন দেখি প্রায় ৭‘শ লেখক তারা লেখালেখি করার জন্য এই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আ্টকা পড়ে আছেন তখন রাষ্ট্রের ইমেজ নষ্ট হয় না।? আমরা যখন দেখি যে, আমেরিকাতে ১০ জন সিনেটর তারা সিনেটে চিঠি দিচ্ছে বাংলাদেশে আইনের শাসন নেই, বাংলাদেশে বিচারবর্হিভূত হত্যাকান্ড হয়, বাংলাদেশে বিনা বিচারে মানুষকে আটক রাখা হয়, বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয় চরমভাবে তথন ইমেজ নষ্ট হয় না? সমাবেশ থেকে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে এবং তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার পরিবেশ তৈরি করতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবানও জানান ফখরুল।

সভাপতির বক্তব্যে উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ধানের শীষের মেয়র প্রার্থী তাবিখ আউয়াল বলেন, আজকে জনতার ঢল নেমেছে সেখানে বিএনপি কর্মীরা শুধু নয়, সাধারণ মানুষরা আজকে যোগ দিয়েছে। আমরা জানি, ঢাকাসহ বাংলাদেশে ভোটের নামে একটা তামাশা দেখছি। নিয়মিত আমাদের ভোটকে চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে, আগের রাতে ভোটের বাক্স ভরিয়ে রাখে তারপরে ইভিএমের মাধ্যমে আমাদের ভোট ছিনিয়ে নেয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, যতই চুরি করুক জনতা আমাদের সাথে, আমাদের মেয়রদের সাথে, আমাদের ধানের শীষের সাথে।

তাবিথের সভাপতিত্বে ও মহানগর উত্তরের মুন্সি বজলুল বাসিত আনজু ও এএফএম আব্দুল আলিম নকির পরিচালনায় সমাবেশে মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে বরিশালের মজিবুর রহমান সারোয়ার, খুলনার নুজরুল ইসলাম মনজু, চট্টগ্রামের ডা. সাহাদাত হোসেন, রাজশাহীর মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বক্তব্য রাখেন। এছাড়া বিএনপির নেতাদের মধ্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমানউল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, শামা ওবায়েদ, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, শিরিন সুলতানা, আবদুস সালাম আজাদ, অঙ্গসংগঠনের মধ্যে মহানগর দক্ষিনের কাজী আবুল বাশার, হাবিবুর রশীদ হাবিব, যুব দলের সাইফুল আলম নিরব, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, এসএম জাহাঙ্গীর, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, সুলতানা আহমেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, শ্রমিক দলের মুস্তাফিজুল করীম মজুমদার প্রমূখ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন।