ভারত থেকে আমদানির পেঁয়াজ ভর্তি ট্রাক ঢুকতে শুরু করেছে

আপডেট: জুন ৫, ২০২৩
0

প্রথম দিনেই প্রায় আড়াই লাখ (২ লাখ ৫৪ হাজার ২৪০) টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। আমদানি অনুমতির পর ভারত থেকে পেঁয়াজ বোঝাই ট্রাক বাংলাদেশে ঢুকতে শুরু করেছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ (কোয়ারেন্টাইন) উইং হতে গতকাল সোমবার (৪ জুন) ১৮৩টি আইপির বিপরীতে ওই পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয়া হয়।

জানা যায়, গত ১৫ মার্চের পর থেকে বন্ধ থাকার পর দেশে পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকে। পেঁয়াজের কেজি যখন সেঞ্চুরিতে ঠেকেছে ঠিক সেই মুহূর্তে গত রোববার আমদানির সিদ্ধান্তের কথা জানায় কৃষি মন্ত্রণালয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত বছরও দেশে প্রায় ৬ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়। যার সিংহ ভাগই আসে প্রতিবেশি দেশ ভারত থেকে। এবারো যখন দেশে পেঁয়াজের বাজার গরম তখন ভারতে কৃষকেরা দামই পাচ্ছেন না বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে। বাংলাদেশ পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেবে, এমন আশায় বাংলাদেশ এবং ভারতের ব্যবসায়ীরা পূর্বে থেকেই অনেকটা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন। তাই সীমান্তের ওপারে পেঁয়াজ বোঝাই অসংখ্য ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় প্রহর গুণছিল বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়।

গতকাল সোমবার প্রথম দিনই পেঁয়াজ আমদানির জন্য ব্যবসায়ীদের ১৮৩টি আবেদন (আইপি) অনুমোদন দেয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কোয়ারেন্টাইন উইং। বিকেল নাগাদ সোনা মসজিদ ও ভোমরাসহ বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ বোঝাই ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশের খবর পাওয়া যায়।

সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, ইতোমধ্যে ভারত থেকে পেঁয়াজ বোঝাই ট্রাক ঢুকতে শুরু করেছে। রাতের মধ্যেই প্রায় আড়াই শ’ টন পেঁয়াজ এই বন্দর দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।

চাপাইনবাবগঞ্জের সোনা মসজিদ স্থল বন্দর সূত্রে জানা যায়, প্রথম দিনেই ১ হাজার ৯৭ টন পেঁয়াজ বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। আর বেনাপোল স্থল বন্দর দিয়ে প্রবেশ করেছে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ টন পেঁয়াজ। তবে অন্য স্থল বন্দর দিয়ে প্রবেশ করেছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কোয়ারেন্টাইন উইংয়ের উপ-পরিচালক (আমদানি) লিয়াকত আলী নয়া দিগন্তকে জানান, প্রথম দিন ১৮৩টি আইপি অনুমোদন দেয়া হয়েছে। আাগামীকাল আরো যেসব আবেদন আছে সেগুলোর অনুমোদন দেয়া হবে।

তিনি বলেন, তবে আমদানি অনুমতি মানেই সব পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা নিয়ে আসবেন এমনটা নয়। একটা আইপির মেয়াদ ৪ মাস দেয়া থাকে। অর্থাৎ ৪ মাসের মধ্যে যে পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয়া হয় তা আনতে হবে। এর মধ্যে না পারলে আরো ২ মাস সময় বাড়ানো হয়ে থাকে।

কৃষিবিদ লিয়াকত আলী জানান, আমরা অনলাইনেই আবেদন পাচ্ছি আবার অনলাইনেই অনুমতি দিয়ে দিচ্ছি। আগে আইপির কিছু অংশ অনলাইনে অনুমোদন দেযা হতো, এবার শতভাগ অনলাইনেই অনুমোদন দেয়া হচ্ছে। ফলে ব্যবসায়ীদের আর দূর দূরান্ত থেকে স্বশরীরে ঢাকায় আসতে হচ্ছে না।

এর আগে গত রোববার কৃষি মন্ত্রণালয় ভরা মৌসুমেও পেঁয়াজের বাজার অস্থিতিশীল হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে পেঁয়াজ আমদানির জন্য আইপি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। পেঁয়াজ উৎপাদন করে কৃষক যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেজন্য কৃষকের স্বার্থ সুরক্ষায় বিগত ১৫ মার্চ থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি বন্ধ রাখে কৃষি মন্ত্রণালয়। বর্তমানে পেঁয়াজ প্রতি কেজি ১০০ টাকায় ঠেকায় দেশের সীমিত আয়ের শ্রমজীবী মানুষের কষ্ট লাঘবসহ ভোক্তার স্বার্থ রক্ষায় পেঁয়াজ আমদানিরএ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানায় কৃষি মন্ত্রণালয়।

এদিকে, গত রোববার এক সেমিনার শেষে কৃষিমন্ত্রী ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক সাংবাদিকদের বলেন, পেঁয়াজ আমদানির বিষয়টি আমাদের জন্য উভয়সঙ্কটের মতো। আমদানির অনুমতি দিলে দাম অনেক কমে যায়, কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়; পেঁয়াজ চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। আর আমদানি না করলে দাম বেড়ে যায়, ভোক্তাদের কষ্ট হয়। সেজন্য, সবসময়ই আমরা চাষি, উৎপাদক, ভোক্তাসহ সকলের স্বার্থ বিবেচনা করেই আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকি।

কৃষি মন্ত্রণালয় জানায়, পেঁয়াজে স্বয়ংসম্পূরণতা অর্জনে কৃষি মন্ত্রণালয় একটি রোডম্যাপ বাস্তবায়ন করছে। এতে ব্যাপক সাফল্যও মিলেছে। গত ২ বছরে দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন বেড়েছে ১০ লাখ টন। দু’বছরে আগে যেখানে উৎপাদন হতো ২৫ লাখ টনের মতো, এখন উৎপাদন হচ্ছে ৩৫ লাখ টনের মতো। পেঁয়াজের উৎপাদন ও বিপণনের বর্তমান চিত্র তুলে ধরে কৃষি মন্ত্রণালয় জানায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩৫ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে। এ বছর ৩৪ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে। পেঁয়াজের সংগ্রহ থেকে শুরু করে ভোক্তা পর্যন্ত পৌছাতে বিভিন্ন ধাপে অপচয় ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বাদে গত বছর নীট উৎপাদন হয়েছে ২৪.৫৩ লাখ টন।
বাংলাদেশে পেঁয়াজের চাহিদা বছরে প্রায় ২৮ থেকে ৩০ লাখ টন। ২০২১-২২ অর্থ বছরে পেঁয়াজ আমদানি হয় ৬.৬৫ লাখ টন।