ভূরুঙ্গামারীতে ভোট যুদ্ধে ২৮ ইঞ্চি উচ্চতার মশু

আপডেট: জানুয়ারি ১৫, ২০২২
0

ভূরুঙ্গামারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি :
ষষ্ঠ ধাপের ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৩১ জানুয়ারি।এই নির্বাচনে কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস‍্য পদে ভোট যুদ্ধে মাঠে নেমেছেন ২৮ ইঞ্চি উচ্চতার শারীরিক প্রতিবন্ধী মশু।তার বাড়ি উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাগভান্ডার কদমতলা গ্রামে। তার নির্বাচন করাতে ওই এলাকার মানুষের মনে কৌতূহল ও উৎসাহ সৃষ্টি হয়েছে।
মশু ওই এলাকার হরমুজ আলী ও চায়না দম্পতির সন্তান। তার বাবা জীবিত থাকলেও সে পাগল প্রকৃতির।মা চায়না মিশুর আট বছর বয়সেই মারা যান।চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে দ্বিতীয় হচ্ছেন মোশাররফ হোসেন মশু। জাতীয় পরিচয় পত্র অনুযায়ী তার জন্ম তারিখ ২০ আগষ্ট ১৯৯৫। সেই হিসেব তার বয়স ২৬ তার উচ্চতা ২৮ ইঞ্চি আর ওজন ৩৮ কেজি। সে অষ্টম শ্রেনী পর্যন্ত লেখা পড়া করেছেন। দারদ্রিতা আর অর্থ সংকটে আর পড়া লেখা করতে পারেনি।এখন তার ইচ্ছা জনপ্রতিনিধি হয়ে মানুষর সেবা করা।
আসন্ন ইউপি নির্বাচনে অন্য প্রার্থীদের মতো মশুরও দম ফেলার সময় নেই। উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি নিয়ে তিনি ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে যাচ্ছেন।
মিশু সদর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে সদস্যপদে ভ‍্যানগাড়ি প্রতীকে ইউপি নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। এই ওয়ার্ডে তার বিপরীতে লড়ছেন আরও পাঁচ প্রার্থী।
মশুর সাহস আর অদম্য ইচ্ছে দেখে বিস্মিত এলাকার মানুষ। স্থানীয় ভোটারা জানান, আর্থিক সংকট থাকায় ভোটাররাই ব্যানার, পোস্টার করে তার পক্ষে গণসংযোগ করছেন। তাদের আশা ভোট যুদ্ধে বিজয়ী হবেন মশু।
স্থানীয় বাসিন্দা আমিনুর রহমান বলেন, ‘এখানে সবাই মিশুর কথা বলছেন। ভোটে জিতবে কী জিতবেনা না সেটা বড় কথা নয়। কিন্তু সে সাহস করে ভোট করছে এতেই আশ্চর্য হচ্ছে মানুষ।’
৩ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার আমজাদ বলেন মশু ছোট মানুষ। খুব সরল। ওর ভোটে দাঁড়ানো দেখে আমরাই অবাক । এই ছোট ছেলেটা তার সমর্থকদের নিয়ে পায়ে হেটেই ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছে।
একই এলাকার আজম আলী জানান, ‘শরীরে সমস্যা আছে কিন্তু যে কোনো কাজে সে পরিশ্রমী ও খুব চেষ্টা করে। আমরা চাই মিশু বিজয়ী হোক।’
আরেক বাসিন্দা আজিজুল বলেন, ‘ছোট থেকেই ওর খুব ইচ্চে মানুষের উপকার করার। সব কাজ সে করতে পায়, চলাচলে একটু সমস্যা হলেও আমি চাই মিশু ভোটে জিতুক।’
ওই এলাকার স্কুল শিক্ষক সুলতানা পারভীন বলেন, ‘মিশুর ভোটে জয়ী হওয়া দরকার। মানুষের ধারণা বদলানো দরকার। প্রতিবন্ধী যে সমাজের বোঝা নয় তা করে দেখাচ্ছে মশু। মনের ইচ্ছাই বড় ইচ্ছা, সেটা সে ভোটের মাঠে দেখাচ্ছে।’
মশু বলেন, ‘জনগণ আমার সরলতা এবং শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে আমাকে অনেকই ভালোবাসেন। আমি গরীব মানুষ।আমরা বিগত দিনগুলোতে আমাদের মত গরীব মানুষরা হক ঠিকমত বুঝে পাইনি। সেই হক বুঝে পেতেই আমার নির্বাচন করা। আমার টাকা নেই, ভোটারই টাকা খরচ করে আমার নির্বাচনি প্রচার চালাচ্ছেন। আমি বিশ্বাস করি আমি বিজয়ী হব। আর নির্বাচিত হলে জনগনের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করব।’
রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাচন অফিসার আনোয়ার হোসেন বলেন, মশু শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও নির্বাচনে তার আইনগত কোনো বাধা নেই।
###/
আমিনুর রহমান বাবু