ভূরুঙ্গামারীর জনবান্ধব ও কর্মগুনে দক্ষ একজন এসিল‍্যান্ড জাহাঙ্গীর আলমের বিদায়

আপডেট: সেপ্টেম্বর ২, ২০২১
0

ভূরুঙ্গামারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি :
“যেতে নাহি দিব হায় তবু যেতে দিতে হয় তবু চলে যায়”।বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচিত কবিতার একটি লাইন। আর এটিই এখন নিয়ম। সেই নিয়মের ধারাবাহিকতায় জনবান্ধব হয়ে ওঠা কর্মকর্তা ভূরুঙ্গামারীর সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো: জাহাঙ্গীর আলম পদোন্নতিজনিত কারনে বিদায় নিয়ে চলে যাচ্ছেন।

তবে সব বিদায়ই মন খারাপের বিষয় নয়। চাকরি জীবনের ক্ষেত্রে এই বিদায় শব্দটি কমন একটা বিষয়। সেই কমন বিদায়েরই আওতার মধ‍্যে পড়েছেন কর্মগুণে সবার প্রিয় হয়ে ওঠা একজন কর্মকর্তা এসি ল‍্যান্ড মো: জাহাঙ্গীর আলম। তিনি সম্প্রতি সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে পদন্নোতি পেয়েছেন। আর এ কারনেই বিদায় নিতে হচ্ছে তাকে।
সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিরুদ্ধে জনগণের শুধু অভিযোগই পাওয়া যায়। তবে এর মাঝে কিছু বতিক্রমও আছেন । তার মধ‍্যে তিনি একজন। যিনি নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে জনগণের আস্থা অর্জন করেছেন। নিজের আন্তরিকতা দিয়ে সেবা প্রদানে হয়রানি থেকে মুক্তি দিয়ে তার দপ্তরকে গড়ে তোলেছেন জনবান্ধব। তার আচরন ও সততা দিয়ে ভূরুঙ্গামারীর মানুষের হৃদয়ের মনিকোঠায় স্হান করে নিয়েছেন। তিনি হচ্ছেন ভূরুঙ্গামারীর এসিল্যান্ড ও নির্বাহী ম‍্যাজিষ্ট্রেট মো: জাহাঙ্গীর আলম।

ছবি ২: এসি ল‍্যান্ড মো: জাহাঙ্গীর আলম বাঁ থেকে দ্বিতীয় (বাঁয়ে) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপক কুমার দেব শর্মা (ডানে) ভূমি অফিসের কর্মচারী ক্রেষ্ট তুলে দিচ্ছেন।

তিনি দায়িত্ববান, কর্মঠ, সৎ ও কর্মনিষ্ঠায় সর্বদাই ছিলেন নিয়োজিত। ২০২০ সালে ০১ লা মার্চ কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলা প্রশাসনের সহকারি কমিশনার (ভূমি) হিসেবে যোগদান করেন ৩৪তম বিসিএসের প্রশাসন ক‍্যাডারের এই মেধাবী কর্মকর্তা। যোগদানের পর থেকেই করোনার এই ঝুকিপূর্ণ সময়েও দায়িত্বের প্রতি সর্বদাই নিয়োজিত থেকে মানুষের সেবা দিতে দেখা গেছে তাকে।
তিনি ভূমি সেবায় এনেছেন ডিজাটাল প্রযুক্তির প্রয়োগ। সরকারের “হাতের মুঠোয় ভূমিসেবা”-কে জনগণের দের গড়ায় পৌছে দিতে কাজ করে গেছেন নিরলসভাবে।

এছাড়াও মহামারী করোনা পরিস্থিতিতে ফ্রন্টলাইনার করোনা যোদ্ধা হয়ে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতকরণ,জনসমাগম নিয়ন্ত্রণ, রাতের আঁধারে করোনায় আক্রান্ত রোগীর বাড়ি গিয়ে লকডাউন নিশ্চিতকরণ, করোনা প্রতিরোধে মাস্কের ব‍্যাবহার নিশ্চিত করণসহ বিভিন্ন বিষয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছেন দক্ষতা ও বিচক্ষনতার
সাথে।
একজন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে তিনি গত দেড় বছরে মাদকের ব্যবহার বন্ধ , জুয়া বন্ধ, বাল্যবিয়ে বন্ধ , দ্রব্য মূল্য নিয়ন্ত্রণ, ভেজাল খাদ্য নিয়ন্ত্রণ, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ, মৎস্য সম্পদ ও সরকারি সম্পত্তি রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন।

উপজেলা প্রশাসনে ভূমি কর্মকর্তা হিসেবে যোগদানের পর বদলে দিয়েছেন অফিসের কার্যক্রমও। অফিসকক্ষ বৃদ্ধি করণ, অভ্যন্তরীণ সৌন্দর্যবর্ধন সহ প্রবেশপথ গেটের আধুনিকায়নসহ প্রভৃতি কাজ সম্পন্ন করেছেন। সেবা গ্রহীতাদের বসার স্থানও করে দিয়েছেন।ভূমি অফিসের কর্মকর্তা কমচারীদের কাজে কর্মের জবাদিহিতাও নিশ্চিত করছেন।
জনগণ যাতে কর্মকর্তার সাথে সরাসরি কথা বলতে পারেন সেটির সেতুবন্ধন তৈরি করেছেন তিনি। জনগণ যাতে কোন প্রকার সরকারি কর্মকর্তার সাথে ভয় না পেয়ে কাংখিত সেবা পেতে কোন প্রকার দালালদের খপ্পরে না পরে সরাসরি কর্মকর্তার সাথে মন খুলে কথা বলতে পারেন সে ব‍্যাবস্হাও নিশ্চিত করেছেন।

সরকারের ভূমি সেবায় ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারেই বেশি জোর দিয়েছেন তিনি। এজন্য প্রত্যেক ইউনিয়ন ও উপজেলা ভূমি অফিসে উচ্চ গতি সম্পন্ন ইন্টারনেট সংযোগ প্রদানের ব‍্যাবস্হা করেছেন। এসকল অফিসের নামজারি সহকারী ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা,উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা, সার্ভেয়ার, নাজির কাম-ক্যাশিয়ারসহ সকল কর্মচারীকে ভূমি মন্ত্রণালয় ও ভূমি সংস্কার বোর্ডের উদ্যোগে উন্নতমানের ল্যাপটপ, প্রিন্টার, স্ক্যানার সরবরাহ করে দিয়েছেন। এতে এই উপজেলার জনগণ কম সময়ে, কম অর্থ খরচে ও কম শ্রম ব্যয় করে এখন সেবা পাচ্ছেন।
তার আমলে শতভাগ ই-নামজারি চালু করেছেন। আগে জনগণকে ভূমি অফিসে গিয়ে মিউটেশন করে ৪৫ সেবা কার্যদিবসের জন্য অপেক্ষা করতে হতো। এতে সেবা গ্রহীতাদের অধিক সময়, অর্থ ও শ্রম ব্যয় হতো। এখন সর্বোচ্চ ২৮ দিনের মধ‍্যেই কম শ্রমে ই-নামজারি করতে সক্ষম হচ্ছেন। ই- নামজারির শুনানি গ্রহন করে সরকার নির্ধারিত ফি গ্রহনপূর্বক মাত্র দ্রুততম সময়ের মধ্যেই সেবাগ্রহীতাকে জমির খতিয়ান ও ডিসিআর প্রদান করা হচ্ছে। যা সেবাগ্রহীতাদের মাঝে অকল্পনীয় বিষয় হিসেবে পরিগণিত হয়েছে।

সেই সাথে ভূমি সেবা ডিজিটাল হওয়ায় সেবা গ্রহীতারা তাদের মোবাইল ফোনে এসএমএস এর মাধ্যমে সকল বিষয় জানতে পারছেন। ফলে জনগণ ভূমি ব্যবস্থাপনায় যে অবস্থায় পতিত হয়ে নিজেকে অসহায় অনুভব করত, সে অবস্থা থেকে সম্পূর্ণরুপে পরিত্রাণ পেয়েছে জনসাধারন।

বিগত অর্থ বছরে ২৫১টি ভূমিহীন পরিবারকে ভূমি বন্দোবোস্তসহ চলমান মুজিব বর্ষে গৃহহীনদের আশ্রয়ণ প্রকল্পে গৃহ নির্মাণের মাধ্যমে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে অবৈধ দখলদারদের নিকট থেকে খাস জমি উদ্ধার ও চিহ্নিত করেছেন।।
এছাড়া ভূমি উন্নয়ন কর আদায় ডিজিটাল করার জন্য বিভিন্ন ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে বিভিন্ন মৌজার হোল্ডিং ভূমি উন্নয়ন কর অনলাইনে আপলোড করনের কার্যক্রমের ব‍্যাবস্হা করেছেন। উপজেলার ১০ টি ইউনিয়নে এ পর্যন্ত ১৪ হাজার ৪৯৫ টি হোল্ডিং অনলাইনে এন্ট্রি দেয়া হয়েছে।যা এখনও চলমান।

উপজেলার সদর ইউনিয়নের লিটন চরভূরঙ্গামারী ইউনিয়নের রুহুল আমিন বলেন করোনাকালে এসিল‍্যান্ড স‍্যারের ঝুঁকিপূর্ণ ভূমিকা ছিল উল্লেখ করার মতো। দিন-রাত চষে বেড়িয়েছেন উপজেলার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। সে সময় করোনায় আক্রান্তের মৃত্যু ভয়ে ঘর থেকে কেউ বের হচ্ছিল না।তিনি তখন এানের প‍্যাকেট হাতে নিয়ে জনগনের দরজায় কড়া নেড়েছেন। এছাড়াও ভূমি ব‍্যাবস্হাপনায় জনগনেল হয়রানি থেকে মুক্ত করতে ভূমি সেবায় এনছেন বৈপ্লবিক পরিবর্তন। তাই এসি ল‍্যান্ড স‍্যার যেখানেই থাকুক ভাল থাকুক এই দোয়াই করছি আমরা। আল্লাহ যেন স‍্যারকে সবসময় ভাল রাখেন।

সহকারী কমিশনার( ভূমি) মো: জাহাঙ্গীর আলম বলেন, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে আমরা সরকারি কর্মচারীগণ সর্বদা জনগণের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। সে ধারাবাহিকতায় আমি যেখানেই থাকি আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট থাকব।

আমার ইচ্ছা ছিল, মানুষ ভূমি অফিসে এসে নিজের কাজ নিজেই করুক। মানুষ নিজের কাজ নিজে করলে, বুঝতে পারবে আসলে ভূমি অফিস কি পরিমাণ সেবা দিয়ে থাকে। আর ভূমি সেবা নিয়ে মানুষের যে একটি চিন্তা ছিল অন্তত সেটি দূর করতে সক্ষম হয়েছি।বিশেষ করে জনগনের প্রত্যেকটি ফোন কল আমি গুরুত্বসহকারে নিয়ে সমস্যার তাৎক্ষনিক সমাধান করার চেষ্টা করেছি। এই করোনার সময়ে যাদের মিসকেসের শুনানি ছিল, ফোন করে তাদেরকে পরবর্তী তারিখ জানিয়ে দেয়া হয়েছে। যে কোন মূল্যে জনগণকে যথাযথ সেবা প্রদানে আমি বদ্ধপরিকর ছিলাম।

তিনি আরো বলেন, মুজিবর্বষে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ভূমি ও আশ্রয়হীন মানুষদের ঘরের তালিকা যাচাই-বাচাই করে ২৫১ জন ভূমিহীন পরিবারকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর দিতে পেরছি। এমন একটি মহান কাজে যুক্ত হতে পেরে আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি। ভূরুঙ্গামারী উপজেলার প্রত‍্যেকটি মানুষ যে ভালোবাসা আমাকে দিয়েছেন সেটি আমি সারা জীবন মনে রাখব। সেই সাথে আমার নতুন কর্মস্হলে যেন সাফল‍্যের সহিত অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে পারি।এজন‍্য আমি ভূরুঙ্গামারীবাসীর নিকট দোয়া কামনা করছি।
####
আমিনুর রহমান বাবু