ভূরুঙ্গামারীর তিন মহিলা গ্রাম পুলিশের সংগ্রামী জীবন কাহিনী

আপডেট: মে ২৭, ২০২৩
0

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:

কাজ-কাম নাই, বেকার বসি থাকি, তাই এই চাকুরী (গ্রাম পুলিশ) করি। রাতদিন সমানতালে কাজ করি। তারমধ‍্যে আমরা মহিলা। আমরা কাজ করতে গেলে অনেকেই বাঁকা চোখে দেখে, টিপ্পনি কাটে। এইসব শুনে বুঝে, না বূঝার ভান করেই চলা ফেরা করি। গ্রামে অপরাধীদের অবস্থান পুলিশকে জানালে তাদের নিকট থেকে প্রতিনিয়ত আসে হুমকী। তারপরেও আমরা সকল বাঁধা বিপত্তি উপেক্ষা করে দায়িত্ব পালন করে যাই। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুতি জানাই আমাদের চাকুরীটা সরকারীকরন করে বেতন ভাতা নিয়মিত দিলে আমাদের পরিবার পরিজন নিয়ে ভালোভাবে দিন কাটাতে পারতাম।

এই অনুভুতি ব্যক্ত করে তাদের সংগ্রামী জীবনের কাহিনী বললেন কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার তিন মহিলা গ্রাম পুলিশ ছবিরন খাতুন (৩৪), শাহিদা বেগম (৩২) ও শাহিনা খাতুন (২৫)। তারা উপজেলার বঙ্গ সোনাহাট,বলদিয়া ও শিলখুড়ি ইউনিয়নে কর্মরত তিন গ্রাম পুলিশ সদস্য।
গ্রাম পুলিশ একটি সংগ্রামী নাম। এক সময় গ্রামের মানুষের কাছে তারা চৌকিদার হিসেবে পরিচিত ছিল। সময়ের বিবর্তনে চৌকিদার নাম পরিবর্তন হয়ে এখন গ্রাম পুলিশ নাম ধারন করেছে। উপজেলার ১০ টি ইউনিয়নে ৯০ জন গ্রাম পুলিশ ও তাদের নেতৃত্ব দেয়া ১০ জন দফাদারের মধ‍্যে এই তিনজনই মহিলা গ্রাম পুলিশ।ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম পুলিশের এখন অসীম দায়িত্ব, ঝুঁকিও আছে অনেক। সে তুলনায় তাদের বেতন-ভাতাও সামান্য।সেই বেতন ভাতাদিও নিয়মিত পায়না তারা।
মোছা: ছবিরন খাতুন (৩৪): উপজেলার বঙ্গসোনাহাট ইউনিয়নে গ্রাম পুলিশের দায়িত্ব পালন করছেন। তার স্বামী আব্দুল হামিদও গ্রাম পুলিশ ছিলেন। তিনি মারা যাবার পর আহাম্মদ হোসেনকে ২য় বিয়ে করেন। স্বামীর সংসার চলেনা তাই নিরুপায় হয়ে পুর্বের স্বামীর কোটায় ১৩ বছর আগে গ্রাম পুলিশের চাকুরী নিয়েছেন। তার ৪ মেয়ে। সবার বিয়ে হয়েছে। তিনি বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বারের ফরমায়েস সহ বাড়ি বাড়ি সংবাদ পৌছানো, আসামী ও মাদক ধরতে সহযোগিতা ছাড়াও বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী ডিউটিও করতে হয়। শুধু তাই নয়,প্রতি সপ্তাহে একদিন থানা পুলিশের কাছে হাজিরাও দিতে হয়।

মোছা: শাহিদা বেগম (৩২): উপজেলার বলদিয়া ইউনিয়নে গ্রাম পুলিশের দায়িত্ব পালন করছেন ৫ বছর থেকে। স্বামী মৃত আব্দুল কুদ্দুছ। তিনিও গ্রাম পুলিশ ছিলেন। তিনি মারা যাবার পর স্বামীর কোটায় চাকুরী নিয়েছেন। তার সংসার জীবনে ২ ছেলে ১ মেয়ে। মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে দু’টি অনার্সে পড়ছে। তিনি বলেন, এমন কোন কাজ নেই যা গ্রাম পুলিশের দ্বারা করানো হয়না। মানুষ যখন বেতনের কথা বলে তখন মনের দু:খ মনে চেপে বেতন বেশী করে বলি। যে বেতন ভাতা পাই তা সংসার চালানো ২টি ছেলের পড়ার খরচও চলেনা।

শাহীনা খাতুন (২৫) : পিতা মো: বছির উদ্দিন। তিনিও গ্রাম পুলিশ ছিলেন। তারা ৪ বোন ভাই নাই। ৩ বোনের বিয়ে হয়েছে। এইচএসসি পাশ করার পর পোষ্য কোটায় শিলখুড়ি ইউনিয়নে গ্রমি পুলিশের কাজ করছেন শাহিনা খাতুন। তিনি বলেন, লেখাপড়া করেছি চাকুরী নাই। বাবাকে সহযোগিতা করার জন্য চাকুরী নিয়েছি। গ্রাম পুলিশের অনেক দায়িত্ব কিন্তুু

কাজের তুলনায় বেতন সামান্য। তারপরও দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করি। অনেকেই অনেক কথা বলে, হুমকীও দেয় তারপরও দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি।
এবিষয়ে বঙ্গসোনাহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাইনুল ইসলাম লিটন বলেন, অনেক ক্ষেত্রে পুরুষের তুলনায় মহিলা গ্রাম পুলিশ দায়িত্ব সহকারে কাজ করে। গ্রাম পুলিশরা সর্বসাকুল্যে ৫-৬ হাজার টাকা বেতন-ভাতা পেয়ে থাকেন। তবে তা নিয়মিত পায়না। ৩-৪ মাস পরপর পেয়ে থাকে। তবু তারা বুক ভরা আশা নিয়ে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে যদি চাকুরীটি সরকারী হয়।
##