মাওলানা রফিকুল ইসলাম মাদানীর বিরুদ্ধে আরো একটি মামলা: তার মাদ্রাসা বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ

আপডেট: এপ্রিল ৯, ২০২১
0

প্রখ্যাত তরুণ ইসলামিক বক্তা মাওলানা রফিকুল ইসলাম মাদানীর বিরুদ্ধে রাজধানীর মতিঝিল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আরো একটি মামলা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আদনান শান্ত নামের এক ব্যক্তি বাদী হয়ে এই মামলা করেন।

পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) সৈয়দ নুরুল ইসলাম আজ রাতে মামলা হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মতিঝিল থানার পুলিশ জানায়, রফিকুল ইসলাম মাদানীর বিরুদ্ধে করা মামলায় বলা হয়, ‘শিশুবক্তা হিসেবে’ পরিচিত রফিকুল ইসলাম ইউটিউব ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে মানহানিকর বক্তব্য দিয়েছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তা শেয়ার হওয়ায় তাঁদের ভাবমূর্তি ও সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে। রফিকুল ইসলাম মাদানী বিভ্রান্তি ছড়ানোর উদ্দেশ্যে মিথ্যা বক্তব্য দিয়ে অপপ্রচার করছেন। এতে সাম্প্রতিক সম্প্রীতি বিনষ্ট হচ্ছে। ফলে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে।

বৃহস্পতিবার সকালে তাকে ওই মামলায় গাজীপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ শরিফুল ইসলামের আদালতে হাজির করা হলে আদালত শুনানি শেষে গ্রেফতারকৃত রফিকুল ইসলাম মাদানীকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি ইলতুৎ মিশ জানান, গত বুধবার রাতে শিশু বক্তা রফিকুল ইসলাম মাদানীকে (২৬) গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা থানার লেটিরকান্দা এলাকার তার বাড়ি থেকে আটক করে র‍্যাব-১ এর সদস্যরা। তিনি ওই এলাকার মৃত সাহাব উদ্দিনের ছেলে। আটকের পর রফিকুল ইসলাম মাদানীকে ওই রাতেই গাজীপুর মহানগরীর গাছা থানায় হস্তান্তর করা হয়। তার বিরুদ্ধে ওই থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়। র‍্যাব-১’র জেসিও-৮৭২৭ নায়েব সুবেদার (ডিএডি) মোঃ আব্দুল খালেক বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। বৃহস্পতিবার সকালে তাকে গাজীপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ শরিফুল ইসলামের আদালতে হাজির করা হয়। পরে আদালত থেকে পুলিশ ও র‍্যাবের কড়া নিরাপত্তায় প্রিজন ভ্যানে করে রফিকুল ইসলাম মাদানীকে গাজীপুর জেলা কারাগার নিয়ে যাওয়া হয়।

র‍্যাব-১ এর সহকারি পুলিশ সুপার মুশফিকুর রহমান তুষার জানান, আটক রফিকুল ইসলাম মাদানীর কাছ থেকে ৪টি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। তার মোবাইলফোনে আপত্তিকর ও কুরুচিপর্ণ ছবি ও ভিডিও চিত্র ও লিংক পাওয়া গেছে।

গাজীপুর জেলা কারাগারের সুপার মো. বজলুর রশিদ আকন্দ জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা ৫ মিনিটে তাকে এ কারাগারে বুঝে নেয়া হয়েছে।

মামলার এজহার সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ ফেব্রুয়ারি রাতে গাজীপুর সিটি কপোর্রেশনের গাছা থানাধীন বোর্ড বাজার কলমেশ্বর এলাকার শীতক ফ্যাক্টরির ভিতর এক ওয়াজ মাহফিলে বক্তব্য দেন রফিকুল ইসলাম মাদানী। মাহফিলে তিনি রাষ্ট্র তথা সরকার বিরোধী ও আইন শৃঙ্খলা পরিপন্থী উস্কানী ও বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ডিজিটাল মাধ্যমে প্রদান করেন। যা তার নির্দেশে ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পায়। উস্কানীমূলক বক্তব্যের কারনে তার অনুসারীরা গত ২৬ মার্চ ঢাকা বায়তুল মোকাররম মসজিদ, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, চট্রগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও নাশকতা করে। এতে হতাহতের ঘটনাও ঘটে। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন সময়ে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ও সুনাম ক্ষুন্ন করা, জনমনে আতংক সৃষ্টি, সামাজিক তথা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিঘ্ন ঘটানো, আইন শৃঙ্খলা বিনষ্ট করা, প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে শত্রুতাসহ সরকারের প্রতি ঘৃণারভাব সৃষ্টি এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার উদ্দেশ্যে দেশের সরল ও ধর্মানুরাগী মানুষের ধর্মীয় মুল্যবোধ ও ধর্মী অনুভুতিতে আঘাত করে বক্তব্য প্রদান করেন, যা ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়।

মামলায় আরো উল্লেখ করা হয়, তিনি বিভিন্ন সময়ে দেশ ও সমাজের জন্য ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয় এরূপ উস্কানীমূলক বক্তব্য দিয়ে সমাজে বিশৃঙ্খলাসহ জনমনে আতংক সৃষ্টি করেছেন। তিনি বাংলাদেশের স্বার্থ পরিপন্থী বিভিন্ন অপতৎপরতায় লিপ্ত থেকে ধর্মীয় অর্থাৎ কোরান হাদীসের অপব্যাখ্যার মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে উস্কানী দিয়ে আইন শৃঙ্খলা বিনষ্ট করতে উদ্বুদ্ধ করেছেন।

গাজীপুরে তার মাদ্রাসায় তালাঃ
গাজীপুর মহানগরের বাড়িয়ালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পেছনে মারকাজুন নূর আল ইসলামিয়া নামে একটি আবাসিক মাদ্রাসা রয়েছে। হাফেজ ক্কারী মো. রফিকুল ইসলাম মাদনী ওই মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল ও পরিচলক। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে সরেজমিনে মাদ্রাসা ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা গেছে মাদাসাটির প্রাধান ফটকে ভেতর থেকে দুইটি তালা ঝুলছে।